Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: ফেলুদা ও জন্মান্তরবাদ

গল্পটিতে জন্মান্তরবাদকে একটি অমোঘ সত্য হিসেবেই দেখা হয়েছে এবং একটা পর্যায়ের পর ফেলুদা এর অস্তিত্ব নিয়ে কোনও সন্দেহ প্রকাশ করে না।

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০

‘সোনার কেল্লার খোঁজে’ (রবিবাসরীয়, ২-১২) শীর্ষক প্রবন্ধে আলোচনা হয়েছে ‘সোনার কেল্লা’ গল্প ও চলচ্চিত্রের ওপর সত্যজিৎ রায়ের প্যারাসাইকোলজির চর্চার প্রভাব নিয়ে। জন্মান্তরবাদ সম্পর্কে গল্পে ও চলচ্চিত্রে, বিশেষত ফেলুদার দৃষ্টিভঙ্গিতে, কিছু ফারাক আছে।

গল্পটিতে জন্মান্তরবাদকে একটি অমোঘ সত্য হিসেবেই দেখা হয়েছে এবং একটা পর্যায়ের পর ফেলুদা এর অস্তিত্ব নিয়ে কোনও সন্দেহ প্রকাশ করে না। গল্পটি শুরু হচ্ছে প্রকৃতিতে ও জীবনে জ্যামিতির বিভিন্ন প্রয়োগ নিয়ে ফেলুদার একটি বক্তব্য দিয়ে, পরে জন্মান্তরবাদ নিয়ে তপেশ প্রশ্ন করলে, ফেলুদা বলে, কোনও কিছু অবিশ্বাসের জন্যও পর্যাপ্ত প্রমাণ লাগে, যা কিন্তু জ্যামিতিক প্রমাণের নিয়ম নয়। ‘সোনার কেল্লা’ ছবিটিও আখ্যানগত দিক থেকে এই দৃষ্টিভঙ্গিটিই ধরে রেখেছে। সেখানেও দর্শকের সন্দেহের বিশেষ অবকাশ রাখা হয়নি। মুকুলকে প্রথম থেকেই একটা ঘোরের মধ্যে দেখানো হচ্ছে। পরে সেটা আরও বিশ্বাসযোগ্য হয় অন্যান্য ঘটনার মধ্য দিয়ে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নকল ডাক্তার হাজরার মুকুলকে সম্মোহন করে জয়সলমির নামটি জেনে নেওয়া। কিন্তু ফেলুদার কর্মপদ্ধতির ধরন অনেকটাই হোম্সীয়। সেখানে পশ্চিমি অনুসন্ধান পদ্ধতি, যার ভিত্তি কার্য-কারণ সূত্র, প্রাধান্য পায়।

ফেলুদার মনের স্বাভাবিক সংশয় হয়তো মুকুলকে প্রথম বার দেখামাত্রই কেটে যায়। সিনেমায় সে সিধু জ্যাঠার কাছে এই নিয়ে কোনও প্রশ্ন করে না, নকল ডাক্তার হাজরার কাছ থেকে নিয়ে প্রায় অবিশ্বাস্য ভাবে এক রাত্রির মধ্যেই প্যারাসাইকোলজির জার্নাল পড়ে ফেলে। কিন্তু ফেলুদা কি পুরোপুরি জন্মান্তরবাদের সত্যতা মেনে নেয়? যদি তা-ই হয়, কেল্লার মধ্যে শেষ দৃশ্যে সে কেন পরাস্ত ভবানন্দকে বলে, “গুপ্তধন নেই, পূর্বজন্ম থাকলেও নেই, না থাকলেও নেই।” জন্মান্তরবাদ নিয়ে প্রশ্নে সত্যজিৎ অ্যান্ড্রু রবিনসনকে বলেছিলেন, তিনি এ সম্বন্ধে নিশ্চিত নন, যদিও তিনি বিষয়টি খোলা মনে বিচার করার পক্ষে। ফেলুদার শেষ উক্তির সঙ্গে এই দৃষ্টিভঙ্গির মিল আছে। না কি সত্যজিৎ সন্দিহান ছিলেন, ফেলুদার নিঃসংশয় ভাবে জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস তাঁর আন্তর্জাতিক দর্শক কতটা মেনে নেবেন, সেই ব্যাপারে?

সৌরভ ভট্টাচার্য

কলকাতা–১২৪

পুজোর অর্থনীতি

‘পুজোয় অর্থনীতির উপকারই হয়’ (৮-১১) শীর্ষক প্রবন্ধের প্রেক্ষিতে বলি, যে রাজ্যে ভারী এবং মাঝারি শিল্প তৈরি প্রায় বন্ধ, হাসপাতাল আছে চিকিৎসা নেই, স্কুল আছে শিক্ষক নেই, উচ্চশিক্ষার জন্য বা চিকিৎসার জন্য প্রতিনিয়ত মানুষকে অন্য রাজ্যে যেতে হয়, এখনও উন্নয়ন যেখানে শুধু কলকাতা-কেন্দ্রিক, সেই রাজ্যে ধর্মীয় উৎসব নিয়ে এত দীর্ঘকালীন মাতামাতি কি খুব যুক্তিযুক্ত? বাণিজ্যিক লেনদেন যা বৃদ্ধি পায় এই উৎসবকে কেন্দ্র করে, তাতে কিছু স্বল্পকালীন কর্মসংস্থান হয় ঠিকই, কিন্ত মূলত ভোগ্যবস্তুর উৎপাদন এবং চাহিদা বাড়ে, সঞ্চয় বা বিনিয়োগ বিশেষ বাড়ে না। ফলে দীর্ঘমেয়াদি কোনও উন্নয়ন বা কর্মসংস্থানের রাস্তা তৈরি হয় না। ফাস্ট ফুড মুখরোচক, কিন্তু তা রোজ খাওয়া ভাল নয়। মানুষের রোজকার প্রয়োজন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ইত্যাদিকে গুরুত্ব না দিয়ে উৎসবকে অর্থনৈতিক উন্নতির হাতিয়ার ভাবলে ভুল হবে। তা যদি হত, তবে দেশের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাগুলিতে উৎসবের জন্যই ব্যয় বরাদ্দ করা হত।

দীপক কুমার ঘটক

মধ্যমগ্রাম, উত্তর ২৪ পরগনা

অপচয়

শারদোৎসব অর্থনীতির উপকার করে— যুক্তিটি সরলরেখার মতন সহজ হলে, যে-যে রাজ্যে দুর্গাপুজো হয় না, তাদের আর্থিক মাপকাঠিতে পিছিয়ে পড়ার কথা। কোটি টাকার বাজেট, বিশাল আয়োজন আর চার দিন বাদেই সব গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক প্রগতির কী জাদুবিদ্যা থাকতে পারে, বোঝা মুশকিল। বরং ওই টাকায় রাস্তাঘাট স্কুল হাসপাতাল তৈরি হলে যুক্তিটি অর্থপূর্ণ হত। শারদোৎসবে কিছু অর্থনৈতিক লেনদেন হয়, সেগুলি তেমন অর্থনৈতিক বিবেচনা দ্বারা চালিত নয়। পুজোয় গৃহস্থকে ট্যাঁকের পয়সা শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা গৃহনির্মাণের মতো কাজে না খরচা করে, বিলাসদ্রব্যে খরচ করে হাত খালি করে ফেলতে হয়। একে অপচয় বলাই ভাল। সামাজিক প্রতিযোগিতায় এঁটে ওঠার তাগিদে মোটা টাকা খরচের অভ্যাস মানুষের জীবনে স্থায়ী উপকার আনতে পারে না। তাই এত সহজে অর্থনৈতিক কল্যাণ নিয়ে সরল সিদ্ধান্তে আসা যায় না।

দীপেন রায়

বাণিজ্য বিভাগ, উত্তর বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়

নেতাজি ও সঙ্ঘ

‘নেতাজির নামে’ ও ‘উত্তরাধিকারী’ (৯-১১) চিঠি দু’টিতে লেখা হয়েছে, নেতাজির সঙ্গে আর এস এস-এর কোনও সম্পর্ক ছিল না, বরং সঙ্ঘ নেতাজি-বিরোধী ছিল। উত্তরে জানাই, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে আর এস এস-এর প্রতিষ্ঠাতা ডা. কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৯২৮-এর ডিসেম্বরে, কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে। সেখানে স্বেচ্ছাসেবকদের বিশৃঙ্খল আচরণ দেখে নেতাজি দুঃখিত হন। ডা. হেডগেওয়ার নেতাজিকে জানান, তিনি নাগপুরে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নেতাজি এ ব্যাপারে প্রচণ্ড উৎসাহ দেখান এবং বলেন, ‘‘একমাত্র এমন কাজই জাতির পুনর্জাগরণে পথ দেখাতে পারে।’’

১৯৩৮ সালে কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে নেতাজি নাগপুর পরিদর্শনে গিয়ে ডা. হেডগেওয়ারের সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব পরিষ্কার তাঁকে না বলে দেন। পরের বছর নেতাজি ডা. হেডগেওয়ারের কাছে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম বিষয়ে তাঁর মতামত জানতে চান। হেডগেওয়ার ভীষণ অসুস্থ ছিলেন। তবুও তিনি পুরো বিষয়টি আগ্রহ ভরে শোনেন এবং নেতাজিকে বলে পাঠান, ব্রিটিশকে সফল ভাবে ধাক্কা দিতে যদি সুভাষ অন্তত ৫০ শতাংশ প্রস্তুত না থাকেন, তবে যেন এখনই সশস্ত্র বিপ্লবের দিকে না যান। পরে সুভাষের পক্ষ থেকে ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, ডা. হেডগেওয়ারের সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠকে মিলিত হন। কিন্তু সেই বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু অজানা।

১৯৪০ সালের ২০ জুন নেতাজি তাঁর নবগঠিত ফরওয়ার্ড ব্লক-এর নেতা রামভাউ রুইকারের সঙ্গে ডাক্তারজিকে দেখতে আসেন। তখন ডাক্তারজি অন্তিম শয্যায়। নেতাজি যখন আসেন তখন উনি বিশ্রামে ছিলেন। নেতাজি তাঁকে জাগাতে নিষেধ করেন। হাত জোড় করে নমস্কার করে ফিরে যান। পরে নেতাজির আগমনবার্তা জানানো হলে অসুস্থ ডাক্তারজি অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে ‘সুভাষ’ শব্দটি অস্ফুটে কয়েক বার উচ্চারণ করেন। পর দিনই তিনি পরলোকগমন করেন। সুতরাং নেতাজির সঙ্গে আর এস এস-এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

অতএব মোদী সরকার গত ২১ অক্টোবর আজ়াদ হিন্দ ফৌজ সরকারের ৭৫তম বর্ষপূর্তিকে স্বীকৃতি জানিয়ে প্রথা ভেঙে লাল কেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে নেতাজিকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করলেন। সরকারের এই কাজের জন্য অবশ্যই প্রতিটি বাঙালির ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থ ভুলে ধন্যবাদ জানানো উচিত।

তরুণ কুমার পণ্ডিত

কাঞ্চন তার, মালদহ

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

বাংলা পড়লে ক্লাসে হাজিরা জরুরি নয় (রবিবাসরীয়, ৯-১২) লেখাটিতে ‘প্রবাসী’ সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় ভুল করে বন্দ্যোপাধ্যায় লেখা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

Para Psychology Satyajit Ray Sonar Kella Feluda
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy