E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: সত্যিই কি সংস্কার

১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিংহ রাও এবং তাঁর অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংহ কর্তৃক বাস্তবায়িত উদারীকরণের সিদ্ধান্তকে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এখন সাম্প্রতিক শ্রম আইনকে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংস্কার হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৫

সম্পাদকীয় ‘আইন ও প্রয়োগ’ (২৬-১১) প্রসঙ্গে কিছু কথা। সংসদে পাশ হওয়ার পর চারটি শ্রম বিধি বাস্তবায়নে সরকারের প্রায় ছয় বছর সময় লেগেছে। ক্ষমতাসীন দলের সাম্প্রতিক নির্বাচনী সাফল্য সম্ভবত কেন্দ্রীয় সরকারকে এগুলো বাস্তবায়নের জন্য একটি অনুকূল সুযোগ এনে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, আইনগুলিতে পুরনো শ্রম আইনকে আধুনিক এবং বিশ্বমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, এতে শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য নতুন এবং কার্যকর ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিংহ রাও এবং তাঁর অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংহ কর্তৃক বাস্তবায়িত উদারীকরণের সিদ্ধান্তকে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এখন সাম্প্রতিক শ্রম আইনকে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংস্কার হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, তথাকথিত অর্থনৈতিক সংস্কারটি কি ১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক সংস্কারের মতো ভারতের অর্থনীতিকে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হবে? মৌলিক ভাবে, এই চারটি আইন কোনও বড় পরিবর্তন আনেনি। একমাত্র উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল যে, ২৯টি বিদ্যমান কেন্দ্রীয় আইনকে চারটির মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। এর ভিত্তিতে, দাবি করা হচ্ছে যে এই ২৯টি আইন পূর্বে শিল্প ও ব্যবসার জন্য সম্মতিতে সমস্যা তৈরি করছিল, একই সঙ্গে শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদান করাও কঠিন করে তুলেছিল।

কিন্তু আসল প্রশ্ন হল: এটি শ্রমিকদের কী ভাবে উপকার করবে? দশটি ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ প্ল্যাটফর্মের প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করলে স্পষ্ট হয় যে, শ্রম ক্ষেত্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এই ধরনের দাবির সঙ্গে একমত নন। তাঁদের যুক্তি হল, নতুন আইন আসলে শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য যৌথ দর কষাকষির আইনি কাঠামোকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে। এগুলির অধীনে, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা, দাবি মেটানোর জন্য তাঁদের যৌথ শক্তি ব্যবহার করা বা ধর্মঘটে যাওয়া কঠিন হয়ে উঠবে।

অনস্বীকার্য যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে, সরকারি নীতি দ্বারা প্রভাবিত কোনও অংশের পক্ষে সংগ্রাম করা বা দাবি আদায় করা আর সহজ নয়। তবুও, তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় না গিয়ে শ্রম আইন বাস্তবায়ন করে সরকার সংঘাতের একটি নতুন ফ্রন্ট খুলে দিয়েছে।

অভিজিৎ রায়, জামশেদপুর

শ্রমের মূল্য

গত ২১ নভেম্বর চারটি শ্রম বিধি বলবৎ প্রসঙ্গে ‘আইন ও প্রয়োগ’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে যথার্থই বলা হয়েছে, বিগত কৃষক আন্দোলনের মধ্যে যে ব্যাপ্তি ও গভীরতা ছিল, বর্তমান ‘শ্রম বিধি’র বিরুদ্ধে শ্রমিক আন্দোলনে তার অভাব দৃশ্যতই স্পষ্ট। উদ্বেগ এখানেই যে, নয়া শ্রম বিধিতে কর্মক্ষেত্রের সংজ্ঞা যে ভাবে স্থির করা হয়েছে, তাতে অসংগঠিত ক্ষেত্রের ৯০ শতাংশই থেকে যাচ্ছেন ‘শ্রমিক’-এর সংজ্ঞার বাইরে।

এখানে যে বিষয়গুলিকে শ্রম বিধির ইতিবাচক দিক হিসাবে দেখানো হয়েছে, সেগুলি কি সত্যিই ইতিবাচক? সব শ্রমিককে নিয়োগপত্র দেওয়া, যথাসময়ে বেতন দান, সব ধরনের কাজে ন্যূনতম মজুরি দেওয়া পূর্বের আইনেও আবশ্যক ছিল। তবে সব জায়গায় এগুলো মানা হত না। এ নিয়ে রাজ্য সরকারগুলির ভূমিকা ইতিবাচক ছিল না। বিভিন্ন ক্ষেত্রের ঠিকা শ্রমিক, চা কিংবা চটকল শ্রমিকদের বিপন্নতা সে কারণেই। এ নিয়ে আন্দোলনের চাপে কর্তৃপক্ষ কখনওসখনও কিছু দাবি মানতেন। তবে ইতিমধ্যে দেশের বুকে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন যাতে গড়ে না ওঠে তার জন্য অনেক আইন এসে গিয়েছে। ১৪৪ ধারাকে প্রতিস্থাপিত করে এসে গিয়েছে ১৬৩ ধারা। তা ছাড়া ‘ফ্লোর ওয়েজ’-এর মাধ্যমে ন্যূনতম মজুরির চেয়েও কম মজুরি দেওয়ার উপায় বাতলে দেওয়া হয়েছে নয়া বিধিতে। নিয়োগকর্তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে স্থায়ী চাকরির ধারণাকে নস্যাৎ করে আনা হয়েছে ‘ফিক্সড টার্ম এমপ্লয়মেন্ট’। এই কর্মীদের ইউনিয়ন করার কোনও অধিকার কার্যত নেই। ধর্মঘটের অধিকারকে কিছু শর্তের বেড়াজালে সঙ্কুচিত করা হয়েছে। সঙ্কুচিত করা হয়েছে ছাঁটাই কর্মীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকারও। উল্টে আইন ভঙ্গকারী মালিকদের অর্থ দণ্ড এবং শাস্তির পরিমাণ দুই-ই বিগত আইনের তুলনায় অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে নয়া বিধি সমূহে।

প্রসঙ্গত, শ্রমিক স্বার্থে ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। প্রতিষ্ঠা থেকে আজও ভারত তার অন্যতম সদস্যভুক্ত দেশ। আইএলও’র পরামর্শ মেনে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ভারত সরকার ভারতীয় শ্রম সম্মেলনের আয়োজন করত। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল এই সম্মেলনে। ২০১৯ এবং ২০২০ সালে এই চারটি বিধি প্রণয়নের পর দেশ জুড়ে নানা স্তরে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়। সংসদীয় কমিটি এবং কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির পক্ষ থেকে শ্রম কোড নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার উদ্দেশ্যে ৪৭তম ভারতীয় শ্রম সম্মেলন ডাকার দাবিতে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকার সম্মেলন না করার অবস্থানে অনড় থেকেছে। ২০১৫ সালের পর থেকে এই সম্মেলন আর হয়নি।

এ বছর জুন এবং নভেম্বর মাসে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শ্রম সম্মেলনের নামে যে দু’টি সম্মেলন হয়, তার প্রথমটি ছিল আন্তর্জাতিক এবং পরেরটি ছিল জাতীয়। সেখানে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির যোগদানের কোনও ব্যাপার ছিল না। সে কারণে বলা যায়, সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক উপায়ে বলবৎ হল এই চারটি শ্রম বিধি।

গৌরীশঙ্কর দাস, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

প্রতিবাদের ফল

তিন জন পুলিশকর্মী এক জন পরিবেশকর্মীকে রীতিমতো চেপে ধরেছেন মাটিতে। এক জন ধৃতের বুকে চেপে বসে মাটিতে ঠেসে ধরেছেন তাঁর মাথা, অন্য এক জন ভূলুণ্ঠিতের মাথার নীচে বুটসমেত পা ঢুকিয়ে দিয়ে কায়দামতো ধরেছেন ডান হাত। পরিবেশকর্মীর দু’চোখ বন্ধ। ‘দিল্লিতে দূষণ প্রতিবাদ: ঠেসে ধরে পুলিশ’ (২৫-১১) শীর্ষক খবরের ছবিটি মনে করিয়ে দেয় ২০২০-র মিনিয়াপোলিস শহরের সেই দৃশ্য— একটি গাড়ির পিছনে এক জন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার হাঁটু দিয়ে মারাত্মক ভাবে রাস্তায় ঠেসে ধরেছেন জর্জ ফ্লয়েড নামে এক যুবককে। এই ভাবে আটকে থাকার ফলে তাঁর মৃত্যু হয়।

কিছু দিন আগেই দিল্লিতে বায়ুদূষণ পৌঁছে গিয়েছিল ঘাতকের ভূমিকায়। দীপাবলির সময় থেকে একিউআই বার বারই বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে যেতে দেখা গিয়েছে। রাজধানীর এমন দুরবস্থার সূত্রেই পরিবেশকর্মীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছিলেন। প্রতিরোধে ছিল পুলিশবাহিনী। বিক্ষোভস্থলে কেউ মারা গেছেন বলে খবর নেই। কিন্তু দূষণের ব্যাপকতা নিয়ে প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে, দূষণ আসলে তার চাইতে আরও ব্যাপক ও ভয়ঙ্কর। প্রশ্ন উঠছে শান্তিরক্ষাকারী পুলিশের আচরণ নিয়ে। ধরে নেওয়া যায়, সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা তাঁদের স্ত্রী-পরিবার’সহ রাজধানীতে বা তার কাছাকাছিই থাকেন। সে ক্ষেত্রে দূষণের কারণে প্রতিবাদকারীদের মতোই তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাঁরাও। তাঁদের সবার স্বার্থরক্ষার জন্যই ব্যক্তিগত কাজকর্ম বাদ দিয়ে পথে নেমেছিলেন ওই পরিবেশকর্মীরা। সে ক্ষেত্রে পুলিশের কি তাঁদের সঙ্গে সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ করা উচিত ছিল না?

বিশ্বনাথ পাকড়াশি, শ্রীরামপুর, হুগলি

সংস্কার চাই

হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইনে বালি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই ছোট। এ ছাড়াও প্ল্যাটফর্মের পিছন দিকে আগাছা-জঙ্গলে ভর্তি থাকার জন্য ট্রেনযাত্রীদের ট্রেনে ওঠা নামা করতে খুবই অসুবিধা হয়। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

তাপস দাস, সিঙ্গুর, হুগলি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Labour Act Workers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy