যত গাড়ি বাড়ছে, তত দূষণ বাড়ছে, এ কথা সবাই জানে। অনেক বার বলা হচ্ছে, কিন্তু গাড়ি-ব্যবহারকারীরা সে কথায় কান দেবেন কেন? কেন তাঁরা বাসে বা অটোয় চড়ে, বা পুল কার-এ চড়ে ঘোরাফেরা করবেন? তাতে তাঁদের স্টেটাস কমে যাবে! তাই, যাতে গাড়ি ব্যবহার কমে, তার জন্য কয়েকটি অপ্রীতিকর সিদ্ধান্ত বিশ্বের বহু শহরেই নেওয়া হচ্ছে। কোথাও অফিসটাইমে অফিসপাড়ায় ঢুকতে গেলেই গাড়িকে একটা মোটা প্রবেশমূল্য দিতে হচ্ছে। কোথাও জোড়-বিজোড়ের অনুশাসন জারি হচ্ছে, লাইসেন্স প্লেট অনুযায়ী একটি গাড়ি একটি নির্দিষ্ট দিনে বেরতে পারছে বা পারছে না। কোথাও এমনকী এলাকার বাইরের গাড়ি হলে বেশ কিছু রাস্তায় ঢোকা বারণ করে দেওয়া হচ্ছে। আর পার্কিং ফি তো বাড়ানো হচ্ছেই, যাতে গাড়ির মালিক ভাবেন, তার চেয়ে মেট্রো করে চলে যাই, চার ঘণ্টা গাড়িটা দাঁড়িয়ে থাকলে বড্ডই খরচা হয়ে যাবে।
এই প্রেক্ষিতে পেট্রোল ও ডিজেলের দামের আকাশ ছোঁওয়ার কথা পড়ে (‘তেলে শুল্ক কমানোর ভাবনা শুরু’, ২৪-১), খুব একটা খারাপ লাগল না। যে কোনও জিনিসের দাম বাড়লেই ক্রেতারা সরকারকে দোষ দেন, সে আলাদা কথা। কিন্তু জ্বালানির দাম বাড়ার দরুণ যদি গাড়ি-মালিকদের গাড়ি বের করার সময় দু’বার ভাবতে হয়, এবং তাঁরা গাড়ি ছেড়ে বাসে বা ট্রামে যাতায়াত শুরু করেন, তা হলে পৃথিবীর মঙ্গল। কয়েক জন বড়লোকের মনে কত শৌখিন কষ্ট হল, তার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হল, আমাদের উত্তরসূরিদের জন্য আমরা কী ধরনের পৃথিবী রেখে যাচ্ছি। কিছু লোক তাঁদের দামি গাড়ির আরাম ছেড়ে বরং কষ্ট করে জনযানে চড়ে যাতায়াত করুন, আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিশু একটু নির্মল বাতাসে শ্বাস নিতে পারুক। আকাশের দিকে তাকিয়ে সে অপূর্ব নীল রং দেখুক, দূষণের চোটে পুরু ধুলো-গ্যাস আস্তরণের কালো বা ধূসর নয়।
আলোক সেনশর্মা কলকাতা ৩৩
না-মানুষ
‘না-মানুষের ভিড়ে জমে ওঠে সাপ্তাহিক পার্বণ’ খবরের (২০-১) প্রেক্ষিতে জানতে চাই, পাখি ধরা, বিক্রি বা পালন করা কি এখনও আইনসংগত? পাখি-ক্রেতারা কি সত্যই পাখি-প্রেমিক? বনের মুক্ত পাখিকে খাঁচায় রাখা কি অমানবিক ও বেআইনি নয়? তথাকথিত পাখি-প্রেমিকরা কি পাখি পুষে সন্তানদের নিষ্ঠুরতা শেখাচ্ছেন না? পুলিশ প্রশাসন ও পশুপ্রেমী সংস্থাগুলির দৃষ্টি আকর্ষণ করি।
অশোককুমার দাস (চার্বাক) কসবা
প্রেরণা ও ছবি
আমি এক প্রবীণ নাগরিক। বহু রাজনৈতিক ওঠাপড়া দেখেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াকু মনোভাব আমাকে আকৃষ্ট করে। ওঁকে এক ঝলক দেখার জন্য, একটু কথা শোনার জন্য অনেকটা পথ পেরিয়েও সভাস্থলে পৌঁছেছি। বহু দিন পরে পশ্চিমবঙ্গে একটা সরকার কাজ করছে, রাস্তায় বেরলেই সেটা বোঝা যায়। শুধু কলকাতা বা কলকাতার আশেপাশে নয়, গ্রামাঞ্চলেও রাস্তাঘাটের উন্নতি চোখে পড়ার মতো। স্বনির্ভরতার দিক থেকেও গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা অনেক এগিয়ে গিয়েছেন।
কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও, কয়েকটা জিনিস আমাকে পীড়া দেয়। রাস্তায় রাস্তায় শুধু মুখ্যমন্ত্রীর ছবি, এটার কি খুব দরকার? সারা ভারত জানে যে মমতাই দেশের মধ্যে একমাত্র নেত্রী, যিনি নরেন্দ্র মোদীকে টক্কর দিতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-তে গ্রহণযোগ্য নেতার অভাব। সিপিএম ক্ষয়িষ্ণু দল। কংগ্রেস প্রায় নেই বললেই চলে। এই রকম অবস্থায় মমতা যে আরও বহু বছর রাজত্ব করবেন, এ কথা বলার জন্য রাজনৈতিক বোদ্ধা হবার দরকার পড়ে না।
তাই এখন তাঁর উচিত, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে, প্রকৃত শাসকের মতো আচরণ করা। সব কিছুতেই তাঁর ‘অনুপ্রেরণা’র ঘোষণা, আর দু’হাত অন্তর তাঁর ছবি, তাঁকেই হাস্যাস্পদ করে তুলছে।
সমীরবরণ সাহা কলকাতা-৮১
সবাই রাজা
দীপেশ চক্রবর্তীর ‘কেন আমরা সবাই রাজা’ (২০-১) লেখাটি সম্পর্কে কিছু কথা। এই গানে বৈষ্ণব পদাবলির গোষ্ঠলীলা পর্যায়ের ভাবধারাকে ব্যবহার করা হয়েছে, এমনও বলা যেতে পারে। রাজা এখানে একটি মহাভাব রূপের প্রতীক, প্রজা রাজাকে সখারূপে পেতে চেয়েছে। রাজা সিংহাসন হতে নেমে এসে রাষ্ট্ররূপ গোষ্ঠে সখারূপ প্রজাদের সঙ্গে মিলিত হবেন।
এখানে রাজা ও প্রজার বাহ্যিক মিলন হচ্ছে। অন্তরে মুক্ত জীবনের উল্লাস ধ্বনিত। সেই সঙ্গে রাজার রাজধর্মের আভিজাত্যের দূরত্বও ঘোচে। তবে এটা ঠিক, সবার মাঝে রাজাকে একটু আলাদা মনে হবে। কিন্তু রাজা কতটা সেই দূরত্ব ঘোচাতে পেরেছেন, প্রজার কাছে সেটাই রাজার পরীক্ষা।
তাই গানটিতে শোষণমুক্ত সমাজের কথা বলা হয়েছে— তা তো ভাবা যায়ই, একই সঙ্গে এমনও ভাবা যায়, এখানে জীবাত্মা ও পরমাত্মার মিলনের কথা ভাবা হয়েছে।
মৃদুলকুমার দাস তমলুক
অকালমৃত্যু
এই দেশে নবজাতকের অকালমৃত্যু (সম্পাদকীয়, ১৯-১)রোধ করা খুব শক্ত। যে দেশে দারিদ্র একটি ভয়ংকর সমস্যা, সেখানে নবজাতক বিপন্ন। তার কারণ অশিক্ষা, কুসংস্কার, অপুষ্টি এবং পরিমিত বিশ্রাম না পাওয়ার জন্য গর্ভপাত, অসময়ে প্রসব (প্রি-ম্যাচিয়োর ডেলিভারি), গর্ভসঞ্চারজনিত কিছু রোগ।
গর্ভবতী মহিলাদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করলে, সেটা কার ভোগে লাগবে, বিতর্কের বিষয়। তাদের টাকা দিলে স্বামীদের বা সংসারের সুবিধা হবে। এর ফলে বছর বছর স্বামীরা অনিচ্ছুক স্ত্রীদের গর্ভে বীজ বপন করে টাকার ভাগীদার হবে।
এ ভাবে টাকা দান-খয়রাত করলে, শুধুমাত্র টাকার অপচয়ই হবে না, যে উদ্দেশ্যে এই প্রকল্প, তা ফলপ্রসূও হবে না। নবজাতকের অকালমৃত্যু রোধ করা যেতে পারে পরিকল্পনাহীন গর্ভসঞ্চার বন্ধ করে, আইন করে। হয়তো এটা জনসাধারণের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। কিন্তু উপায় নেই। যে মেয়েটি গর্ভবতী হবে, তার শরীর ও মন গর্ভস্থ সন্তানকে বহনের উপযুক্ত কি না, তার স্বামীর সব খরচ বহন করার ক্ষমতা আছে কি না, এগুলো বিবেচনা করে তবে গর্ভবতী হলে, নবজাতককে সুরক্ষা দেওয়া যাবে।
আমাদের দেশের অধিকাংশ হাসপাতালে যে পরিকাঠামো, তাতে নবজাতক, বিশেষ করে কম ওজনের শিশুদের পরিচর্যা ও চিকিৎসা করা যায় না। সুতরাং এ দুর্ভাগ্য চলবে।
অর্চনা ভট্টাচার্য চুঁচুড়া, হুগলি
বিচারকের পদ
প্রতিটি রাজ্যে এবং কেন্দ্রে কত জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন সংবিধানে সেটা নির্দিষ্ট করা আছে৷ সংবিধানে এ-ও বলা আছে যে, যদি কোনও আসন খালি হয়ে পড়ে তবে ছ’মাসের মধ্যে সেই শূন্য পদ পূরণ করতে হবে৷ আমাদের গণতন্ত্রের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে বিচারব্যবস্থা। তবুও কেন বিভিন্ন বিচারালয়ের শূন্য পদগুলি পূরণ হচ্ছে না? আমাদের দেশে আইনের শাসন কায়েম রাখতে এবং সংবিধানের ধারা, উপধারার যথার্থ ব্যাখ্যা পেতে আমরা এই বিচারব্যবস্থার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল৷ বিচারকের অভাবে বিভিন্ন আদালতে মামলার পাহাড় জমে গিয়েছে৷ বিচার দেরিতে পাওয়া, বিচার না পাওয়ার সমতুল্য বলেই জানি৷ এর জন্য দায়ী কে বা কারা? জনপ্রতিনিধিরা কেন এই ব্যাপারে সোচ্চার হচ্ছেন না? আমজনতার প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা নেই?
সরোজ মুখোপাধ্যায় কলকাতা-৩১
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy