E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: ভাষার হেনস্থা

বিজেপির আড়ালে আরএসএস হিন্দি ভাষার সঙ্গে উত্তর ভারতীয় ধর্মাচরণ সারা ভারতে ছড়িয়ে দেওয়ার যে পরিকল্পনায় শামিল হয়েছে, বাংলাভাষীদের উপর এই আক্রমণ তার প্রধান কৌশল হিসেবেই উল্লেখ করা যায়।

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৫:৫১

বর্তমানে বিজেপি শাসনাধীন বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সম্পাদকীয় ‘দুঃস্বপ্নে আতঙ্কে’ (৬-৮) খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের দেশে হিন্দির পর যে ভাষায় সবচেয়ে বেশি মানুষ কথা বলেন, সেটা বাংলা। এখানে আলোচিত বিজেপির হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থানের দখলমূলক রাজনীতির কৌশলের প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, এই মুহূর্তে তাদের প্রধান লক্ষ্য এবং প্রতিপক্ষ যথাক্রমে বঙ্গভূমি ও বাংলাভাষা। সুতরাং যে ভাবেই হোক, বাংলাভাষীদের হেনস্থা করার তাগিদে প্রথমেই বেছে নেওয়া হয়েছে মুসলিম বাঙালিদের, ‘বাংলাদেশি’ তকমার অজুহাতে। বিজেপির আড়ালে আরএসএস হিন্দি ভাষার সঙ্গে উত্তর ভারতীয় ধর্মাচরণ সারা ভারতে ছড়িয়ে দেওয়ার যে পরিকল্পনায় শামিল হয়েছে, বাংলাভাষীদের উপর এই আক্রমণ তার প্রধান কৌশল হিসেবেই উল্লেখ করা যায়। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, হিন্দির বিস্তার ঘটলে সমগ্র দেশে রাজনৈতিক ভাবে বিজেপি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। সেই জন্য দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবধি হিন্দি ভাষার সমর্থনে ইংরেজিতে কথা বলার জন্য মানুষকে কটাক্ষ করতে ছাড়েন না।

সম্প্রতি বিজেপির আইটি শাখার প্রধান অমিত মালবীয় বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’র সঙ্গে গুলিয়ে দিয়ে বিভিন্ন অসংলগ্ন মন্তব্য করেছিলেন। তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া যায়, সংবিধানের অষ্টম তফসিলভুক্ত স্বীকৃত ভাষার প্রতি এই বিমাতৃসুলভ আচরণের জন্য দেশে অরাজকতা সৃষ্টিতে ইন্ধনও জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক। অন্য ভাষার মানুষের প্রতি বিদ্বেষ বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে এবং চরিত্রগত ভাবে খাপ খায় না। তাই আশ্চর্য লাগে, যখন রাজ্য বিজেপির শিক্ষিত এবং প্রথম সারির বাঙালি নেতৃবৃন্দ ভিন রাজ্যে বাঙালি বিতাড়ন এবং বাংলাভাষা নিয়ে দলীয় নেতৃত্বের বিভিন্ন অসাংবিধানিক মন্তব্যের সমর্থনে গলা ফাটান, যা বাঙালির লজ্জা বলেই মনে হয়।

আমাদের রাজ্যে শাসক দল এই বিষয় নিয়ে রাজনীতিতে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করবেই, তাতে রাজনৈতিক ভাবে তাদের কোনও ভুল নেই। যদিও তাদের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে, সাধারণ মানুষের অসুবিধা করে অন্য প্রদেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আচার-আচরণ পালনে অনৈতিক ছাড় দিতে, এমনকি সরকারি ছুটি অবধি ঘোষণা করতে, যা কতটা সমীচীন, তা নিয়ে যথেষ্টই বিতর্কের অবকাশ আছে। সম্প্রতি বাংলাভাষীদের বিতাড়নের বিরুদ্ধমঞ্চ থেকে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর হিন্দিতে বক্তৃতাও এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে। নিরপেক্ষ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে এই বাংলাভাষা ও বাংলাভাষীদের নিয়ে বিতর্ক এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের রাজ্যে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক মেরুকরণের ক্ষেত্র। এর ফলে বিপাকে পড়ছেন গরিব মানুষেরাই, আড়ালে চলে যাচ্ছে তাঁদের দৈনন্দিন রুটি-রুজির সমস্যা। প্রত্যেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বাঙালিকে নিজেদের ঐতিহ্যগত অবস্থানের কথা মনে রেখে বাংলাভাষীদের হেনস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জারি রাখার সঙ্গেই, সামনে নিয়ে আসতে হবে সমস্ত গরিব মানুষের বিভিন্ন সমস্যা ও তার প্রতিকারের দাবি। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই হয়তো বাঙালি অস্মিতাকে রক্ষা করে এই দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তির সন্ধান মিলতে পারে।

অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি।

নামের ঘটা

সম্পাদকীয় ‘নাম ও দুর্নাম’ (৩০-৮) আমার ও আমার মতো আরও অনেকের মনের কথা বলেছে। এই যে এক ঝাঁক নতুন মেট্রো স্টেশনের উদ্বোধন হল, এবং কলকাতা মেট্রো বিভিন্ন পথে চলতে শুরু করল, তাতে বহু মানুষের সুবিধা হয়েছে। একই সঙ্গে বলতে হয়, এই সমস্ত স্টেশনের নামকরণ করতে গিয়ে যে ধাঁধা সৃষ্টি করা হয়েছে, তাতে যাত্রীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম হয়েছে। অথচ, প্রথম যখন কলকাতায় মেট্রো চলতে শুরু করে, তখন কিন্তু স্টেশনের নাম দিতে গিয়ে কোনও রকম ভক্তিরসের প্রাবল্য দেখা যায়নি। ইন্দিরা গান্ধীর সময় মেট্রোর কাজ শুরু হয় আর ১৯৮৪ সালের ২৪ অক্টোবর মেট্রো চলতে শুরু করে। ইন্দিরাজি ৩১ অক্টোবর নিহত হন। তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আনন্দ গোপাল মুখোপাধ্যায়। সেই সময় প্রয়োজন ও সহজে এলাকা বোঝা যায়— এমন সব নামই রাখা হয়েছিল। পরবর্তী কালে বিভিন্ন নেতানেত্রীর অতিরিক্ত আবেগে নামকরণের সময় স্টেশনের এই রকম ধোঁয়াশা-ছড়ানো নাম দেওয়া শুরু হয়। আর এখন তো সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এ বার বামপন্থীদের হঠাৎ ‘সুভাষ চক্রবর্তী’র কথা মনে পড়েছে। তাঁরাও উঠেপড়ে লেগেছেন। আবার বিমানবন্দর সংলগ্ন স্টেশনের নাম ‘জয় হিন্দ’ করা হয়েছে। আসলে এই ধরনের বিচিত্র নাম দেওয়ার কারণ তথাকথিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতি। জাতীয়তাবাদ অবশ্যই প্রয়োজনীয়, কিন্তু তার নামে সুড়সুড়ি দেওয়াটা কাম্য নয়।

বিকাশ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৫০।

মানুষেরই স্বার্থে

কিছু দিন আগের কথা। রাত আটটা হবে। সবে অফিসের কাজ শেষ করে ল্যাপটপ-টা বন্ধ করেছি। অমনি ধুম-ধাড়াক্কা ঝনঝন আওয়াজ! মোড়ের মাথায় লাউডস্পিকার থেকে প্রবল জোরে কিছু জগাখিচুড়ি শব্দ শোনা যাচ্ছে। কান খানিকটা ধাতস্থ হলে বোঝা গেল, গান বাজছে! খানিক পরে সেই গানের মতো আওয়াজ পাল্টে শুরু হল ‘গণপতি বাপ্পা মোরিয়া’ ডাক এবং বেশ কিছু ভক্তিমূলক গান। সদ্য গণেশপুজো গেছে। বোঝা গেল, এ সব তারই উদ্‌যাপন। যদিও আরও খানিক পরে শুনলাম, মাইকে বাজছে— ‘মায়ের পায়ের জবা হয়ে ওঠ না ফুটে মন’। সব ভগবানই এক— যাহা গণেশ, তাহাই কালী। রাস্তার মোড়ের বাজার সমিতির এই উদার মনোভাব তারিফযোগ্য বটে। একের পর এক নানা ধরনের গান বাজতে লাগল, গাঁকগাঁক করে। তা মানুষের ভক্তি বলে কথা, একটু কানে লাগলেও ক্ষমা করে দিতে হবে বইকি। তার কিছু দিন আগে স্বাধীনতা দিবস গিয়েছে। তখনও ওই লাউডস্পিকার গমগমিয়ে উঠেছে। এমন সব দিনে প্রথমে কিছু মানুষ দেশপ্রেম নিয়ে বক্তৃতা রাখেন, তার পর কিছু মানুষ দেশের অনাচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এ-ও চলে ওই রাত বারোটা অবধি। দেশপ্রেম ও দেশের অনাচার— কোনও ব্যাপারেই ঘুমিয়ে পড়লে চলবে না। ১৫ অগস্ট সকাল থেকে দেশের মানুষের কল্যাণ কামনা করে রক্তদান শিবির হয়, এবং তার ঘোষণাও এক মুহূর্তের জন্যে থামে না। গলার রক্ত তুলে রক্তদানের আবেদন রেখে গিয়েছেন ওঁরা। সবই জনসাধারণের স্বার্থে।

শ্রীজিতা পাল, কলকাতা-৮।

ফ্লেক্স-নগরী

বর্তমানে প্রায় প্রতিটি শহরই পুজো উপলক্ষে ব্যানার-ফ্লেক্স নগরীতে পরিণত হচ্ছে। পুজো প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে রাস্তার দুই পাশে সর্বত্র ব্যবসায়িক সংস্থা ও পুজো কমিটির ফ্লেক্সের দৌরাত্ম্য চোখে পড়ে। রাস্তার ধারের কিংবা মণ্ডপের চার পাশের গাছে পেরেক পুঁতে ফ্লেক্স টাঙানোয় গাছের কাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দীর্ঘ ১০-১৫ দিন ধরে ফ্লেক্সের আড়ালে থাকা গাছে বসবাসকারী পাখি ও অন্য জীববৈচিত্রও বিপন্ন হয়। তীব্র আলো, শব্দদূষণ— সব মিলিয়ে পরিবেশের স্বাভাবিকতা চরম ভাবে ব্যাহত হয়। অপর দিকে, পুজো শেষে এগুলি মাসের পর মাস বর্জ্য হিসাবে পড়ে থাকে, এলাকায় দূষণ ঘটায়। এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ুক। আগামী দিনের পুজো হোক প্রকৃত অর্থে প্রকৃতির প্রাণের পুজো।

সন্দীপন সরকার, পাল্লা রোড, পূর্ব বর্ধমান।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RSS BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy