Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: নিরীহদের নয়নজল

বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থনে উগ্রপন্থাকে আর কত দিন জিইয়ে রাখা হবে, যার জাঁতাকলে পড়েছেন নিরীহ কাশ্মীরিরা? তাঁদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থানের উন্নতির পথের দিশা সর্বাগ্রে প্রয়োজন।

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি নয়নজলে ভাসি’ (১৩-৮) পড়ে এই চিঠি। স্বাধীনতার পর থেকে কাশ্মীরে যা হচ্ছে, তার সমাধান কি প্রয়োজনীয় নয়? ভারত সরকার কাশ্মীরিদের সুরক্ষার জন্য কিছুই কি করেনি কোনও দিন? ভারতবাসী সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের পক্ষে। মুষ্টিমেয় বিচ্ছিন্নতাবাদীর অত্যাচার আর কত দিন সহ্য করা উচিত? নিরীহ কাশ্মীরিদের নয়নজল মোছানোর জন্য ভারত সরকারের প্রয়াসকে সমর্থন করে দেখাই যাক না। ভারতের অন্যান্য রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত রাজ্যবাসীরা কি ভাল নেই বলতে হবে? সমস্যা চিরকাল ছিল এবং থাকবেও। এর মধ্যেই নতুন করে বাঁচার পথ খুঁজে নিতে হবে।

সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী, উগ্রপন্থীদের নিশানা হচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী, ইট-পাটকেল খাচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী, সীমান্তে পাকিস্তানের প্ররোচনামূলক গুলিগোলার শিকার ভারতীয় সেনাবাহিনী (কিছু কাশ্মীরিও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুলিতে বা মর্টারের আঘাতে মারা গিয়েছেন)। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থনে উগ্রপন্থাকে আর কত দিন জিইয়ে রাখা হবে, যার জাঁতাকলে পড়েছেন নিরীহ কাশ্মীরিরা? তাঁদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থানের উন্নতির পথের দিশা সর্বাগ্রে প্রয়োজন।

নীতিকথার কচকচিতে পেট ভরবে না। উন্নয়নের প্রয়াসের জন্য মস্তিষ্ক-চালনা করা উচিত। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে না দিয়ে, ক্ষত মেরামতির প্রয়োজন।

সমীর ভট্টাচার্য

কালীনারায়ণপুর, নদিয়া

রবীন্দ্রনাথ...

অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় তাঁর লেখায় রবীন্দ্রনাথের ‘রাজর্ষি’ উপন্যাসের প্রসঙ্গ তুলেছেন। ‌‌রবীন্দ্রনাথের জাতিচেতনা উন্মেষকারী বেশ কিছু লেখা পড়ে মনে হয়েছে, এই দেশে জাতিসংহতি ও যথার্থ চেতনার উন্মেষ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ নিজেও যথেষ্ট দ্বিধাগ্ৰস্ত ছিলেন। ‘গোরা’য় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ধর্মের ভূমিকা দুর্দান্ত বিশ্লেষণ করেছেন‌। অথচ গোরা নিজের জন্মপরিচয় জানার পর, নিজের ভুল অনুধাবনের পর যে কল্যাণতীর্থে পৌঁছনোর কথা বলে, তার কোনও বিশ্লেষণ নেই উপন্যাসে। তবে লক্ষণীয়, এই ঘটনার সমান্তরালে চলে সুচরিতা ও গোরার প্রণয়। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে বার বার ভালবাসার কথা বলেছেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত ধর্ম নিয়ে উন্মত্ত মানুষদের এই পথে আনার উপায় কী, সে ব্যাপারে তিনি অস্পষ্ট। বোধ করি, তিনি জানতেন, অসংখ্য জাতির এই দেশে সঠিক সহমর্মিতা জাগিয়ে তোলা দুরূহ ও সময়সাপেক্ষ, সর্বাপেক্ষা তত্ত্বনিষ্ঠও নয়।

সংকেত ধর

ইমেল মারফত

জনবিচ্ছিন্ন

স্বাধীনতার পর থেকেই, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ যে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ— পাকিস্তান ও বিশেষ কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ছাড়া— ভারতের সব রাজনৈতিক দল ও মানুষ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে এসেছে। মোদী সরকারের চালকদের মস্ত কৃতিত্ব এখানেই যে, এই বাস্তবকে তাঁরা ঠিক ঠিক পড়ে নিয়েছেন। তাই বর্তমান অবস্থায় জাতীয় ভাবাবেগের এই প্লাবনে দাঁড়িয়ে যাঁরা যত এর বিরোধিতা করবেন, তত জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। কেন্দ্রে যে সরকারই ক্ষমতায় থেকেছে, কাশ্মীরের জনগণকে কোনও দিন ভালবাসা, মানবিকতা, ন্যায়বিচার দিয়ে ভাবাতে শেখায়নি যে তাঁরাও ভারতের অন্য রাজ্যের বাসিন্দাদের মতোই সব ব্যাপারে সম-অধিকারী। এই সুযোগে পাকিস্তান ও উপত্যকার কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি কাশ্মীরের সাধারণ মানুষকে হাতের পুতুল করে রেখেছে। অভাব, অনটন, অশিক্ষা, অনুন্নয়ন তাঁদের পীড়িত করছে ৭০ বছরের বেশি। আজ দেশ-দুনিয়া ইন্টারনেটের যুগে অনেক বদলেছে, কাশ্মীরের যুবক-যুবতীরা ভারতের বিভিন্ন নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন, আইএএস-এ প্রথম হচ্ছেন, বলিউডে অভিনয় করছেন। তাই ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ সময়োচিত। আগামী দিনে কাশ্মীর শিল্প, শিক্ষায় উন্নত হবে, পর্যটকদের প্রিয় কাশ্মীরের দরিদ্র শিকারার মাঝি, খিলানমার্গের হতশ্রী ঘোড়াওয়ালা থেকে সমস্ত মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পাবে। দীর্ঘমেয়াদি অশান্তি কেউ চায় না, যদি মানুষের রুটি-রোজগারের নিশ্চয়তা থাকে।

দেবকী রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়

উত্তরপাড়া, হুগলি

অমূলক আশঙ্কা

রোহন ইসলাম ‘ভূস্বর্গ জয়ে ভারতেরই হার’ (১৩-৮) নিবন্ধে অমূলক আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। প্রথমত ৩৭০ ধারা এবং ৩৫এ অবলুপ্তি সম্পূর্ণ সা‌ংবিধানিক পথেই হয়েছে। জম্মু ও লাদাখের জনতা এই সিদ্ধান্তে খুশি। কাশ্মীরের কতিপয় রাজনীতিবিদ এবং কিছু উগ্র মৌলবাদী ও সন্ত্রাসবাদী নিশ্চিত ভাবেই খুশি হবে না। ক্যানসার রোগীদের যখন কেমোথেরাপি দেওয়া হয় তখন রোগীদের কষ্ট হয়। তার পর আরোগ্য লাভ করেন। এত গেল গেল রব তোলার কিছু নেই। কাশ্মীরের জনগণ খুশি হতে চলেছেন শীঘ্রই।

দীপক দে রায়

আশারাম নগর, ভোপাল

কুযুক্তি

নানা কুযুক্তি সাজিয়ে মানুষকে সত্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখার প্রবণতা তথাকথিত অতি-সেকুলারদের বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত কেন্দ্রে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর। রোহন ইসলাম লিখেছেন, ‘‘...কিচ্ছু যায় আসে না এই নয়া ভারতের অন্দরে-অন্তরে ‘প্রাউড হিন্দু’ ন্যাশনালিজ়মের। এক দেশ, এক ছাতা। দেশের এই গর্বিত সন্তানেরাই আজ সংখ্যাগুরু।’’ এক দেশ, এক ছাতার তলায় আসার ভাবনাটাকে লেখক অসম্মানের বিষয় মনে করছেন! এটাই তো ৩৭০ ধারার কাহিনি। এ ধারা সাধারণ কাশ্মীরিদের কী মানসিকতা গড়ে দিয়েছে? ভারতে থাকব, সংবিধানের সব সুবিধা ভোগ করব, আর সংবিধানের প্রতি আনুগত্যহীন থেকে ‘কাশ্মীরিয়ত’-এর নামাবলি গায়ে কাশ্মীরের পণ্ডিতদের ভিটেছাড়া করব।

মিহির কানুনগো

কলকাতা-৮১

জানা দরকার

‘ওঁরা একটু পড়াশোনা করুন না!’ (১৪-৮) শীর্ষক দেবেশ রায়ের প্রতিবেদনে ৩৭১ ধারার বিভিন্ন উপধারাগুলি তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে বেশ কয়েকটি রাজ্য কী ভাবে ৩৭০ ধারার মতো বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করছে, তা বলা হয়েছে। জানা দরকার, কাশ্মীরের বাইরের লোক কাশ্মীরের জমি কিনতে পারবে না, এই আইন তৈরি হয়েছিল কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দাবিতে। ১৯৩৫ সালে রাজা হরি সিংহ এই আইন তৈরি করেছিলেন। শুধু কাশ্মীর নয়, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ, সিকিম-সহ দেশের ১১টি রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া বাইরের কেউ জমি কিনতে পারেন না। পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশেই জনজাতীয়দের জমি কেনা যায় না। সিকিমে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি স্রেফ নথিভুক্ত কিছু ব্যাপারেই নাক গলাতে পারেন। বাকি সব ব্যাপারে ওরা সার্বভৌম রাজ্য। কর্নাটক রাজ্যের নিজের পতাকা আছে। ওরা অলিখিত ভাবে স্কুল-কলেজ-পঞ্চায়েত অফিস সর্বত্রই ওদের লাল-হলুদ পতাকা উত্তোলন করে। নিজেদের পতাকাকে সরকারি করবার জন্য ২০১৭ সালে সর্বসম্মতিক্রমে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

জানা দরকার ২০১৫ সালের ৩ অগস্ট মোদী সরকারের নাগাল্যান্ড চুক্তির বিষয়েও, যেখানে রয়েছে পৃথক নাগা আইন, পৃথক নাগা পতাকা, নাগা মুদ্রার ব্যবহার এবং শুধু নাগারাই রাজ্যে সরকারি চাকরির যোগ্য বিবেচিত হওয়ার অধিকার। আর জানা দরকার, ৭০ বছর আগে সংসদে যখন ৩৭০ ধারার বিল সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়, তখন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন দেশের শিল্পমন্ত্রী। তখন তিনি কিন্তু এই বিলের বিরোধিতা করেননি।

গৌরীশঙ্কর দাস

সাঁজোয়াল, খড়্গপুর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Article 370 Jammu and Kahsmir India Pakistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE