Advertisement
০২ মে ২০২৪
Indian Railways

সম্পাদক সমীপেষু: দাম বাড়ুক টিকিটের

ট্রেনের যাত্রিভাড়া ৫০% বৃদ্ধি করা মোটেই সাধারণ যাত্রীদের উপরে অনৈতিক ভাবে বোঝা চাপানো নয়। তখনও ট্রেন ভাড়া বাস ভাড়ার এক ভগ্নাংশই হবে।

An image of Train

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:২২
Share: Save:

‘সঙ্কটে রেল, ভাড়া কি বাড়বে’ (৯-৮) খবর থেকে জানলাম, ২০২১-২০২২ অর্থবর্ষে রেলের প্রকৃত ঘাটতি ১৫,০২৫ কোটি টাকা। নদিয়ার দাঁড়েরমাঠ থেকে কলকাতা আসার পথ ৯০ কিলোমিটার। বাসভাড়া ১১০ টাকা। কৃষ্ণনগর থেকে শিয়ালদহ ১০০ কিলোমিটার। সরকারি বাসভাড়া ৯৩ টাকা। আর ট্রেন ভাড়া ২৫ টাকা। যে কোনও স্টেশনে নেমে গন্তব্যে যেতে ১ কিমি পথে অটো ভাড়া ১০ টাকা, রিকশা ২০ টাকা। এ-হেন পরিস্থিতিতেও যদি রেল মন্ত্রক যাত্রিভাড়া সামান্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়, চারিদিকে ‘গেল গেল’ শোরগোল পড়ে যায়। অবরোধ, আন্দোলন, বিক্ষোভে দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। বিরোধীদের কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জনে পথ কর্দমাক্ত হয়ে যায়।

আমার মনে হয়, ট্রেনের যাত্রিভাড়া ৫০% বৃদ্ধি করা মোটেই সাধারণ যাত্রীদের উপরে অনৈতিক ভাবে বোঝা চাপানো নয়। তখনও ট্রেন ভাড়া বাস ভাড়ার এক ভগ্নাংশই হবে। অথচ, ভাড়া বাড়ানোর ফলে ট্রেনের হাজার হাজার টাকা আয় বাড়বে। সামগ্রিক পরিষেবা অনেক বেশি উন্নত করা সম্ভব হবে। হাজার হাজার ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যাবে। যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য অনেক বৃদ্ধি করা যাবে। যথাযথ নজরদারিতে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করার প্রবণতা কমানো যাবে। তার ফলে রেলের আয় বৃদ্ধি পাবে। রেল পরিষেবার সমস্ত পর্যায়ে যথাযথ নজরদারি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থার ফলে সব ধরনের দুর্ঘটনার প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হবে।

এখনকার অবস্থা চলতে থাকলে, অন্য অনেক সম্ভাবনাময় সরকারি সংস্থা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার মতো ভারতীয় রেলেরও বেসরকারিকরণ দেখতে হবে অসহায় দেশবাসীকে। তাই রাজনীতির কারবারিদের প্রতি একান্ত নিবেদন, আপনারা শুধুমাত্র ভোটব্যাঙ্ক অক্ষত রাখার সঙ্কীর্ণ ধারণা ত্যাগ করে দেশের স্বার্থরক্ষা, এবং রেল পরিষেবার সর্বাঙ্গীণ উন্নতির জন্য সদর্থক পদক্ষেপ করুন।

অক্ষয় কুমার বিশ্বাস, মুরুটিয়া, নদিয়া

রোগীর স্বার্থে

‘জেনেরিক নামেই লিখতে হবে ওষুধ, অন্যথায় কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি’ (১৪-৮) পড়লাম, এবং এ-ও জানলাম যে, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের ওই নির্দেশ বাধ্যতামূলক করা হলে আইএমএ প্রতিবাদ করবে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগছে, এই বৈপরীত্য কেন? প্রতিবেদনে দেখা গেল, অধিকাংশ চিকিৎসকই বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করে ব্র্যান্ড নাম লিখতে পারদর্শী। তাঁদের যুক্তি, জেনেরিক নামের প্রেসক্রিপশন নিয়ে গেলে রোগীপক্ষ অসাধু দোকানদারের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বেশি দামি কোম্পানির ওষুধ কিনতে বাধ্য হবে। ফলে, আখেরে মুনাফা লুটে নেবে ওষুধের দোকানিরা। তাই, ব্র্যান্ড নাম লিখলে ভোগান্তি কমবে। বাস্তবে সেই চিকিৎসকেরা কি কেবলই রোগীপক্ষের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে ও দয়াপরবশ হয়ে প্রেসক্রিপশনে ব্র্যান্ড নামের ব্যবহার করে থাকেন? বোধ হয় না। কিছু চিকিৎসক তাঁদের স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে বিশেষ কিছু ব্র্যান্ডের ওষুধ লিখে থাকেন। সেখানে রোগীর চেয়েও প্রাধান্য পায় সেই সব কোম্পানি থেকে কত বেশি উপঢৌকন দেবে, তার হিসাবনিকাশ। ছোটখাটো উপহার, যেমন, টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন থেকে শুরু করে সপরিবারে বিদেশ ভ্রমণ পর্যন্ত এর পরিধি বিস্তৃত থাকে। এই অন্যায্য ব্যয়ভার বহন করতে ওষুধ কোম্পানিগুলো চড়া দাম রাখে। তারা চিকিৎসকদের চুক্তিবদ্ধ করে ফেলে তাদের ব্র্যান্ডের ওষুধ একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত লেখার ব্যাপারে।

মজার ব্যাপার হল, দাম কম হোক বা বেশি, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওষুধে একই জেনেরিক ওষুধের উপাদান ও মাত্রা কিন্তু একই থাকে। নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধের দাম ৯৯ টাকা থেকে শুরু করে ২৮৭ টাকা পর্যন্ত হয়, একই জেনেরিক নামের ওষুধের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে। আবার ওই একই ওষুধ কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত জনঔষধি দোকানে জেনেরিক রূপে কিনলে দাম পড়ে মাত্র ৩০ টাকা। ওই বিভিন্ন মূল্যের ভিন্ন ব্র্যান্ডের ওষুধ খেয়ে, রক্তচাপের তেমন কোনও তারতম্য লক্ষ করিনি। তাই, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উচিত, অবিলম্বে ওষুধ প্রস্ততকারক সংস্থাগুলিকেও ব্র্যান্ড নামের ওষুধ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র জেনেরিক নামের ওষুধ উৎপাদনের কড়া নির্দেশ দেওয়া। তা হলেই চিকিৎসকদের জেনেরিক নামের ওষুধ লেখা প্রেসক্রিপশন বাস্তবে কাজে আসবে। একই সঙ্গে, বিভিন্ন কোম্পানির একই জেনেরিক ওষুধের মূল্যের যেন খুব বেশি তারতম্য না হয়, তা-ও দেখতে হবে। তা হলে কোন ব্র্যান্ডের ওষুধ বেশি কার্যকর, সেই নিয়ে আর কোনও ধন্দ চিকিৎসক বা রোগী, কারও থাকবে না। রোগীপক্ষ তাদের পছন্দের কোম্পানির জেনেরিক ওষুধ নির্দ্বিধায় ও ন্যায্যমূল্যে ক্রয় করতে সক্ষম হবে, এবং একই গুণমানের ওষুধ অযথা অধিকমূল্যে কেনার হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে।

শান্তনু ঘোষ, শিবপুর, হাওড়া

অনাদায়ি ঋণ

‘মোছা হয়েছে ১৪.৫৬ লক্ষ কোটির ঋণ, জানাল কেন্দ্র’ (৮-৮) প্রসঙ্গে এই চিঠি। গত ২০১৪-১৫ থেকে শুরু করে ৯টি অর্থবর্ষে নথিভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি তাদের হিসাবের খাতা থেকে মোট ১৪,৫৬,২২৬ কোটি টাকার অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ) মুছে দিয়েছে। লোকসভায় এ কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ভাগবত কারাড। এই পুরো অঙ্কের মধ্যে বড় শিল্পের ঋণ মোছা হয়েছে ৭,৪০,৯৬৮ কোটি টাকার।

সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, অনাদায়ি ঋণ মোছা মানেই খেলাপিদের ছাড় দেওয়া নয়। তাই যদি হয়, তবে ‘মোছা’ কথাটা আসছে কেন? এখানে ‘মোছা’ বলতে যা বোঝায়, তা হল— ব্যাঙ্ক ঋণগ্রহীতার কাছে তার ঋণ আদায়ের অধিকার ত্যাগ করল। স্বাভাবিক ভাবেই ঋণ আদায় আরও গুরুত্ব হারাবে। বস্তুত এর মধ্য দিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে ঋণ পরিশোধ করছেন না, এমন ঋণগ্রহীতাদের আবারও ঋণ দেওয়ার পথ খুলে দেওয়া হল। আর এই মুছে দেওয়ার পর অনেক ঋণগ্রহীতা মনে করেন, ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলে ‘সম্পদ পুনর্গঠন’ বা ‘ওয়ান টাইম সেটলমেন্ট’-এর নামে ব্যাঙ্কের পাওনা টাকার অংশমাত্র দিয়ে ‘নো ডিউজ়’ সার্টিফিকেট জোগাড় করতে অসুবিধা হবে না। সে কারণেই মাননীয় মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩-এর মার্চ পর্যন্ত মুছে দেওয়া ঋণের মধ্যে মাত্র ২,০৪,৬৬৮ কোটি টাকা, অর্থাৎ ১৪% উদ্ধার করতে পেরেছে ব্যাঙ্কগুলি।

বাকি বিশাল পরিমাণ টাকা কী ভাবে আদায় হবে? হাত পড়বে ব্যাঙ্কের লভ্যাংশ বা সরকারি কোষাগারে। বলা বাহুল্য, কর্মচারীদের শ্রমের বিনিময়ে ব্যাঙ্কের নিয়ম মেনে গড়ে ওঠে ব্যাঙ্কের লাভ, আর জনগণের করের টাকায় গড়ে ওঠে সরকারি কোষাগার, যা দিয়ে দেশের উন্নয়ন হওয়ার কথা। অথচ এখানে দেখছি, ‘বন্ধু পুঁজিপতি’দের সেবার লক্ষ্যে ব্যাঙ্ক কর্মচারী-সহ মানুষের পকেট কাটছে সরকার।

আসলে এই মোছার মধ্য দিয়ে সরকার ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে আরও কয়েক কদম এগিয়ে যেতে চায়। যাঁরা ব্যাঙ্ক কিনবেন, তাঁদের কাছে ব্যাঙ্কগুলিকে আরও গ্রহণযোগ্য করাতে চায়। দায় কমাতে কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে জমা টাকার উপর সুদের হার, বৃদ্ধি করা হচ্ছে পরিষেবা-শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্র এবং শুল্কের পরিমাণ। স্থায়ী কর্মী ছাঁটাই করে চুক্তিতে নিয়োগ করা হচ্ছে। অথচ সবাই জানি, ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণ হলে তার পরিণাম কী ভয়ঙ্কর হতে পারে। ১৯১৩ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ২১৩২টি বেসরকারি ব্যাঙ্কে লালবাতি জ্বলেছিল। পরিণামে ব্যাঙ্ক কর্মচারীরা কাজ হারিয়েছিলেন, গ্রাহকরা পড়েছিলেন অথৈ জলে। আজ আবার দেশের মানুষকে সেই অন্ধকার জায়গায় নিয়ে যেতে চাইছে ‘জনগণের পাহারাদার’ কেন্দ্রীয় সরকার।

গৌরীশঙ্কর দাস, সাধারণ সম্পাদক, ব্যাঙ্ক এমপ্লয়ি’জ় ইউনিটি ফোরাম

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Railways local trains Train Ticket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE