Advertisement
০১ মে ২০২৪
Goddess Durga

সম্পাদক সমীপেষু: মীরার প্রতিমা

দেবীর পায়ের নীচে সীমাহীন মহাসমুদ্র। দেবীর পরনের আটপৌরে ডুরে শাড়িটিও তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ সেই ডোরাগুলি আসলে আমাদের প্রাণদায়ী, পতিতোদ্ধারিণী নদ-নদী।

Durga

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:৩৫
Share: Save:

‘চিত্রশিল্পের ঘরের মেয়ে’ (২৯-১০) শীর্ষক প্রবন্ধটিতে স্বল্প পরিসরে শুভব্রত নন্দী আলোচনা করেছেন, কেমন করে দিকপাল শিল্পীদের স্বকীয় শিল্পভাবনা প্রতিফলিত হয়েছে তাঁদের সৃষ্ট দেবী দুর্গার ছবি বা মূর্তিতে। এই প্রসঙ্গে একটি অভিনব সৃষ্টির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। এই বছর যাঁর শতবার্ষিকী, সেই মীরা মুখোপাধ্যায় ১৯৯০ সালে বকুলবাগান সর্বজনীন পূজা মণ্ডপের জন্য রূপ দিয়েছিলেন সর্ব অর্থে ব্যতিক্রমী এক দুর্গাপ্রতিমার। এখানে প্রথাসিদ্ধ দেবী ও মহিষাসুরের সংঘাত নেই, নেই শুভ-অশুভের দ্বন্দ্ব। অস্ত্রের বদলে মীরা মুখোপাধ্যায় দেবীর দশ হাতে দিয়েছেন নবপত্রিকার ন’টি উদ্ভিদ অথবা ফল। সামনের দুই বাহুতে তিনি ধরে আছেন অপরাজিতার লতা, যার দ্বারা নবপত্রিকা বাঁধা হয়। দেবী দুর্গা এখানে অস্ত্রধারিণী যোদ্ধা নন, তিনি ন’টি উদ্ভিদ, তথা সমগ্র প্রকৃতির মধ্যে নিহিত শক্তির প্রতিভূ! তাঁর উন্মুক্ত কেশরাশিতে তাই স্থান পেয়েছে আমাদের সারা জীবন আলো-দেওয়া সূর্য, গ্রহ, চাঁদ!

দেবীর পায়ের নীচে সীমাহীন মহাসমুদ্র। দেবীর পরনের আটপৌরে ডুরে শাড়িটিও তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ সেই ডোরাগুলি আসলে আমাদের প্রাণদায়ী, পতিতোদ্ধারিণী নদ-নদী। এই প্রতিমা আমার দেখা বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে অভিনব, যা আজকের দিনের পরিবেশ সচেতনতার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ ভাবে স্মরণীয়। আমার কাছে সেই প্রতিমার ছবি আজও সযত্নে রক্ষিত।

তথাগত সেন, কলকাতা-২০

আরোহী

‘রথের রশি’ (২৮-১০) সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্র। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশিকা জারি করে বলেছে, এখন থেকে সরকারি প্রকল্পগুলোর সাফল্য সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের ‘রথযাত্রা’ করে মানুষের মধ্যে প্রচার করতে হবে। সরকার তার কাজের সাফল্য মানুষের কাছে তুলে ধরবে, এটা দোষের বিষয় নয়। সরকারের আধিকারিক ও কর্মচারীদের দায়িত্ব প্রকল্পগুলোকে সঠিক ভাবে রূপায়ণ করা, আর জনসংযোগ দফতরের দায়িত্ব প্রকল্পের সাফল্যের প্রচার করা। কিন্তু সরকারি আধিকারিকদেরও শাসক দলের কর্মীর ভূমিকা পালন করতে বাধ্য করা চলে না। আমাদের সংবিধানে শাসক দল এবং প্রশাসনের যে স্বতন্ত্র ভূমিকার কথা উল্লেখ করা আছে, এই কর্মসূচি তার বিপরীত। সম্পাদকীয়তে সঠিক ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গোটা প্রশাসনটাকে রাজনৈতিক প্রচারযন্ত্রে পরিণত করার চেষ্টা হচ্ছে। বিরোধী দলের রাজ্য সরকারগুলোও কিন্তু ধোয়া তুলসীপাতা নয়। তারাও প্রশাসনকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার কমবেশি চেষ্টা করছে। কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে নির্দেশিকা জারি করে, সরাসরি প্রশাসনকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে, তা গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক।

শেষাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি

উৎপাত

‘অতঃপর ইঁদুর’ (১৩-১০) সম্পাদকীয় পাঠ করে জানলাম, কলকাতার ছোট বড় সৌধ, সেতু, ফুটপাত, সর্বত্র ইঁদুর বাহিনীর আক্রমণে উদ্বিগ্ন পুরসভার আধিকারিকরা। আধুনিক পলিমার শাস্ত্রের ‘অ্যান্টি-রোডেন্ট’ রাসায়নিক উপাদানের তৈরি বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করা শট শার্কিট থেকে মুক্তি, এবং ইঁদুর নিয়ন্ত্রণের সহজ পন্থা বলে মনে করি। খবরে প্রকাশ, ইঁদুরের উৎপাতের নতুন মাত্রা গঙ্গার ভাঙন। ইঁদুরের উপদ্রবে যে ভাবে জোড়াবাগান এবং নিমতলা ঘাটে পাড় ভাঙছে, তাতে গঙ্গার ধারে গুদামগুলি তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম। বন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এলাকায় বড় বড় গুদাম থাকায় ইঁদুরের বাড়বাড়ন্ত। ফলে গঙ্গার পাড়ে গর্ত খুঁড়ে আস্তানা গেড়েছে তারা, এবং জোয়ারে মাটি আলগা হয়ে বসে যাচ্ছে। পাড় ভাঙা ঠেকাতে এখন বালির বস্তা এবং বোল্ডার ফেলা হচ্ছে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসাবে স্টিলের পাইলিং শিট। গঙ্গার পথও বদলে দিতে পারে ইঁদুর, এমনই তার শক্তি।

সুব্রত পাল, শালবনি, বাঁকুড়া

পুলিশের চা

‘ঘুম ভাঙাতে রাতে লরি চালকদের চা খাওয়াবে পুলিশ’ (৩০-১০) শীর্ষক প্রতিবেদনটি ভরসা জোগাল। এক শ্রেণির পুলিশের দুর্ব্যবহারের ফলেই সাধারণ মানুষের কাছে ত্রাতা হয়ে ওঠেন ছোট বড় নানা মাপের নেতা-নেত্রী। সুবিচার পাওয়ার পরিবর্তে বহু ক্ষেত্রে তাঁদের হয়রানির শিকার হতে হয়। ফলে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সাধারণ মানুষ ও পুলিশের মধ্যে দূরত্ব বাড়ায়। সেই দূরত্বের ফাঁক গলে অন্যায় ভাবে ঢুকে পড়ে এক শ্রেণির দালাল। ক্রমশ মানুষের পুলিশের উপরে আস্থা কমতে থাকে। এবং সামাজিক ও প্রশাসনিক অনাচারও সেই সঙ্গে বেড়ে যায়।

অভিজ্ঞতায় দেখেছি, শেষ রাতের দিকে সড়কপথে দুর্ঘটনা ঘটে মূলত দু’টি কারণে। এক, শেষ রাতে ক্লান্তি গ্রাস করে গাড়িচালকদের। রাতের ঘুম না হওয়ায় তাঁদের ঝিমুনি আসে। আর এই কারণে আচমকা ঘটে যায় দুর্ঘটনা। সে ক্ষেত্রে পুলিশের সাধু উদ্যোগ অভাবনীয় ভূমিকা পালন করবে। তবে এর সুযোগ নিয়ে টাকার লেনদেনের প্রসঙ্গ যেন না আসে। তা হলে এই মহৎ উদ্যোগটাই সম্পূর্ণ ব্যর্থ হবে।

অন্য দিকে, পুলিশি অত্যাচার, অযথা হয়রানির ভয়ও দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চেকিংয়ের নামে যেন তেন প্রকারেণ টাকা চাওয়া হয়। সেই টাকা দেওয়া থেকে বাঁচতে বহু ড্রাইভার নিয়ম লঙ্ঘন করেন। হঠাৎ গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন, দুর্ঘটনা ঘটে যায়। রক্ষকই ভক্ষক হয়ে ওঠার এই হল পরিণাম। চালকদের চা খাওয়ানোর মতো মানবিক কর্মসূচি যেমন দুর্ঘটনা কমাবে, তেমনই পুলিশ-প্রশাসনের উপরে সাধারণ মানুষের আস্থাও বাড়াবে।

দীপায়ন প্রামাণিক, গড়পাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

খনার জিভ

‘মেয়েদের কথা তুচ্ছ অতি’ (২১-১০) প্রসঙ্গে বলি, সিমোন দ্য বোভোয়া দ্য সেকেন্ড সেক্স বইয়ে লেখেন, কোনও মেয়েই নারী হয়ে জন্মায় না। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ তাকে নারী হিসেবে গড়ে ওঠার শিক্ষা দেয়। শালীনতার শৃঙ্খলে তাকে আবদ্ধ করা হয়। সে বুঝতে শেখে, পুরুষই নিয়ন্ত্রক। আর খিড়কি থেকে সিংহদুয়ার পর্যন্ত পৃথিবী বরাদ্দ মেয়েদের জন্য। ‘মেয়েলি’ গল্প, ‘মেয়েছেলে’র বুদ্ধি প্রভৃতি অসম্মানজনক বিশেষণে মেয়েদের বক্তব্যকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া আজও চলছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে পুরুষদের তুলনায় নারী বক্তাদের সংখ্যা নগণ্য। গ্রামীণ রাজনীতিতে অংশগ্রহণকারী মহিলা প্রতিনিধিরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দল বা পরিবারের পুরুষদের শেখানো বুলি আওড়াতে বাধ্য হন। হোমার তাঁর দি ওডিসি-র এক চরিত্রকে দিয়ে বলিয়ে নিয়েছেন সেই অমোঘ উক্তি, ‘স্পিচ ইজ দ্য বিজ়নেস অব ম্যান’— কথা বলা হল পুরুষের কাজ। খনার সত্যবচনের তীব্রতায় ভীতসন্ত্রস্ত পিতৃতন্ত্র স্বামীর দ্বারা তাঁর জিহ্বা কর্তনের মতো জঘন্য নিদান জারি করে।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায়, কবির ন’দিদি স্বর্ণকুমারী দেবী সাহিত্যিক হিসেবে সমাদৃত হলেও, রবীন্দ্রনাথ দিদির লেখাকে বিশেষ পাত্তা দেননি। এমনকি কোনও কোনও ব্যক্তিগত পত্রে তাঁর সম্পর্কে তাচ্ছিল্যও প্রকাশ করেছেন। অসহিষ্ণু প্রবন্ধ লিখেছেন পণ্ডিতা রমাবাইয়ের বিরুদ্ধে। যদিও পরবর্তী কালে নারীর ঘর-পোষা, নির্জীব মূর্তির পরিবর্তনে জোরালো সওয়াল করেছেন বিশ্বকবি। উনিশ শতকে রাসসুন্দরী দেবীর নিজের জীবনকথা শুধু মেয়েলি উপাখ্যান ছিল না, ছিল নারীর স্বীয় সত্তার যথার্থ প্রকাশ। তবে এই তাচ্ছিল্য বা অবজ্ঞার জবাব দিতে হবে মেয়েদেরই। ইবসেনের আ ডল’স হাউস নাটকের নোরা যেমন ঘোষণা করেছিল, নারীর নিজের প্রতিও কর্তব্য আছে। তাকে হয়ে উঠতে হবে পরিপূর্ণ মানুষ। ২০২৩-এ নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিতা ইরানের সমাজকর্মী নার্গিস মহম্মদির মতো, শত চাবুকের ঘায়ে রক্তাক্ত হয়েও অন্ধকার কুঠুরি থেকেও বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে হবে নিজেদের দামি কথাগুলি।

স্বাতী চট্টোপাধ্যায়, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Goddess Durga Art
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE