Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Women

সম্পাদক সমীপেষু: অভাবী লক্ষ্মী

পৃথিবীর কোনও ভান্ডারেরই ক্ষমতা আছে কি এমন লক্ষ্মীদের খানিক ‘অলক্ষ্মী’ করে তুলে, নিজের জন্যে ভাবতে শেখানোর?

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২২ ০৪:৪৩
Share: Save:

প্রহেলী ধর চৌধুরীর ‘লক্ষ্মী, তাই নিজের কথা ভাবেন না’ (২৬-৫) প্রবন্ধটিতে সমাজের একটা বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রবন্ধটির শেষ লাইনটি মন ছুঁয়ে যায়— পৃথিবীর কোনও ভান্ডারেরই ক্ষমতা আছে কি এমন লক্ষ্মীদের খানিক ‘অলক্ষ্মী’ করে তুলে, নিজের জন্যে ভাবতে শেখানোর? তাদের হাতে কিছু টাকা তুলে দিলেও তারা সেই টাকা নিজের বলে ভাবতে পারে না বা নিজের জন্য ব্যয় করতে পারে না। মেয়েরা তো প্রথম থেকেই সংসারের জন্য বলিপ্রদত্ত। তারা কিছু টাকা রোজগার করলেও সেই টাকা সংসারের কাজেই ব্যয় হয়ে যায়। প্রথম থেকেই মেয়েদের শেখানো হয় সংসারের লোকেদের খুশি রাখাই তার প্রধান কাজ। এমনকি সিরিয়ালগুলোতে এই বিষয়টিই দেখানো হয়, সাংসারিক জীবনে প্রবেশ করার পর বাড়ির বৌকে প্রতি পদে প্রমাণ দিতে হয় যে, সে এক জন ভাল বৌ কি না। এর জন্য তাকে কেরিয়ার, খেলাধুলা, নিজের ইচ্ছে— সব বিসর্জন দিতে হয়। যে সব মেয়ে একটু অলক্ষ্মী হতে চায়, তাদের দিকে ধেয়ে আসে সমাজের রক্তচক্ষু। যেন সমাজকে বা সংসারকে ধরে রাখার দায় একমাত্র মেয়েদেরই। ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে’— প্রবাদের এই অংশটি মেয়েদের শেখানো হয়, কিন্তু ইচ্ছা করেই ‘গুণবান পতি যদি থাকে তার সনে’ অংশটি রাখা হয় উহ্য!

এক বার একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছিল যে, মেয়েদের নিজের জন্য কিছু পেতে হলে তাদের ভাল মেয়ের তকমা ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। কিন্তু মেয়েদের মানসিক গঠনটাই এমন ভাবে তৈরি করে দেওয়া হয় যে, সে যে এক জন ব্যক্তিমানুষ, তার নিজস্ব ইচ্ছা বা ভবিষ্যতের জন্য কোনও ভাবনা থাকতে পারে— এই বোধটাই তার মধ্যে গড়ে ওঠে না! তাই প্রবন্ধটিতে পাঁচশো জনের মধ্যে এক জন রেবা ঘোষকে দেখা যায়। এখনও দেশের বেশির ভাগ মেয়ে মনে করে স্বামীর হাতে মার খাওয়াটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার (কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সমীক্ষায় প্রকাশিত)! সুতরাং, যতই লক্ষ্মীদের জন্য টাকা দেওয়া হোক, তা কবে তাদের নিজের টাকা হয়ে উঠবে, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

দেবযানী চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৬

অন্য নিয়ম

প্রহেলী ধর চৌধুরীর প্রবন্ধ প্রসঙ্গে এই চিঠি। রাজ্য সরকারের ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি এই রাজ্যের প্রান্তিক গ্রামীণ মহিলাদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। তবে অনেক গ্রামীণ এলাকার মহিলা তিন-চার বার লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী ফর্ম জমা দিয়েও এখনও পর্যন্ত কোনও পরিষেবা বা সুবিধে পাননি। সরকারি ভাবে বলা হয়েছিল এই প্রকল্পের পরিষেবা ২৫ বছর-উত্তীর্ণ সমস্ত মহিলা পাবেন। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, যে সব মহিলার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নেই, তাঁদের দুয়ারে সরকার শিবিরে লক্ষ্মীর ভান্ডার ফর্ম আদৌ নেওয়া হচ্ছে না। অনেকেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য পাঁচ-ছ’বার নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে জমা দিয়েছেন, কিন্তু এক বছরেও ওই কার্ড পাননি। ফলে এই মহিলারা লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের টাকা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড বাধ্যতামূলক, এমন নিয়মের পরিবর্তন করা জরুরি। এটা হলে প্রান্তিক অনেকেই সহজে এই প্রকল্পের পরিষেবা পেতে পারবেন।

তুষার ভট্টাচাৰ্য, কাশিমবাজার, মুর্শিদাবাদ

প্রসার দরকার

‘লক্ষ্মী, তাই নিজের কথা ভাবেন না’ প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলি, সত্যি সত্যিই লক্ষ্মীরা শ্বশুরবাড়ি বা সংসারের কথা ছাড়া ভাবেন না। শুধু লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের টাকা নয়, নিজেদের কষ্টের দিনমজুরের টাকাও খরচ করার স্বাধীনতা নেই গ্রামের মেয়েদের। প্রতিবেদনে ৫০০ জনের ‘স্যাম্পল সাইজ়’-এর কথা বলা হলেও কিন্তু কোনও ভৌগোলিক অঞ্চলের উল্লেখ ছিল না। যাঁরা পরিবেশ, মানুষ ও সমাজ নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁরা সকলেই সহমত হবেন যে, ভৌগোলিক অঞ্চলের উপর নির্ভর করে মানুষের জীবনযাত্রার মান, কর্মপ্রণালী, চরিত্র ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, ভূমির ব্যবহার, ইত্যাদি। শহর, প্রান্তিক শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলের মধ্যে মানুষের মানসিকতা, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, রোজগার করার সুযোগ ও ক্ষমতা সম্পূর্ণ আলাদা।

সম্প্রতি একটি গবেষণার কাজে জঙ্গলমহলের জেলাগুলির শতাধিক গ্রামে ৬০০ পরিবারের উপর ক্ষেত্রসমীক্ষা করা হয়। তাতে উঠে এসেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। প্রায় ৪৪ শতাংশ প্রান্তিক দরিদ্র ও অরণ্যবাসী পরিবার লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা কাজে লাগিয়ে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করছে। কেউ কৃষিকাজের ঋণ পরিশোধ করছে অথবা ছেলেমেয়ের টিউশনের টাকা মেটাচ্ছে। অন্য দিকে, প্রায় ৩০ শতাংশ পরিবার বয়সের নিয়মে লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষ করে তফসিলি আদিবাসী মেয়েরা, যাদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে।

হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, নারীদের নিজের ইচ্ছায় সংসারে রান্না করা, খরচ করার অধিকার বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নেই একবিংশ শতকেও। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি আয়োগ ২০২১-এর হিসাব অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের বহুমাত্রিক দারিদ্র সূচক মান ২১.৪৩ শতাংশ। জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে দারিদ্রের মান অনেক বেশি। সকলের ঘরে লক্ষ্মীর ভান্ডার পৌঁছলে পরিবারের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে ও জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। এর ফলে রাজ্যের বার্ষিক জাতীয় আয়ের হারও বাড়বে, যা রাজ্য তথা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাই, এই লক্ষ্মীর ভান্ডার যাতে দ্রুততার সঙ্গে সকলের ঘরে ঘরে পৌঁছয়, সেই বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।

প্রভাত কুমার শীট, মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

নিজের জন্য

প্রহেলী ধর চৌধুরী বাস্তব চিত্রটি উপযুক্ত তথ্য এবং পরিসংখ্যান-সহ তুলে ধরেছেন। নারীর উন্নতিকল্পে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। বাড়ির দায়িত্ব সামলানো মহিলাদের হাতে সামান্য কিছু টাকা তুলে দেওয়ার মূল লক্ষ্য হল, যাতে তাঁরা প্রয়োজনমতো নিজেদের জন্য সেই টাকা খরচ করতে পারেন। যদিও প্রবন্ধে বোঝা যায় যে, বাস্তবে তা হচ্ছে না। মহিলারা না পেতে পেতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন যে, এখন তাঁদের কাছে টাকা পাওয়া বা টাকা না-পাওয়া, দুই-ই সমান। খরচ করার স্বাধীনতা এবং টাকাপয়সার হিসাব— কোনও কিছুই তাঁদের হাতে থাকে না। এ ভাবেই তাঁরা বড় হয়েছেন। বিয়ের আগে মা বলে দিয়েছেন সংসার ছাড়া আর কোনও কিছুই মেয়েদের নিজস্ব নয়। তাঁরা সংসারকেই তাই আপন করে নিয়েছেন তাঁদের একান্ত শখ-স্বাচ্ছন্দ্য সব কিছুকে বাদ দিয়ে।

তবুও স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে। লেখিকা যেমন প্রবন্ধে এক জনের কথা উল্লেখ করেছেন। লক্ষ্মীর ভান্ডারের পুরো টাকাটা তিনি সঞ্চয় করছেন। ঠিক করেছেন কিছুটা টাকা জমালে সেলাইয়ের দোকান করবেন। আশা করব, এই ভাবেই প্রতিটি লক্ষ্মী স্বপ্ন দেখবেন এবং তাঁরা নিজেরপায়ে দাঁড়াবেন।

সুমন চক্রবর্তী, বেঙ্গালুরু

অনুপ্রেরণা চাই?

ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে ডোমজুড় বাসস্ট্যান্ডে পথচলতি মানুষের জন্য একটি ঠান্ডা পানীয় জলের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। এই প্রকল্পের উপর যথারীতি বড় বড় হরফে লেখা আছে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় প্রকল্পটি নির্মিত হয়েছে।

ডোমজুড় বাসস্ট্যান্ড এবং সংলগ্ন এলাকা অত্যন্ত জনবহুল, দৈনন্দিন জীবন জীবিকার কাজে অসংখ্য মানুষের যাতায়াত এখানে। দীর্ঘ প্রায় দু’বছর এই জলের উৎসটি খারাপ হয়ে পড়ে আছে। প্রচণ্ড গরমে মানুষকে পানীয় জল কিনে খেতে হচ্ছে। এটি মেরামতের জন্যেও কি পুনরায় অনুপ্রেরণা প্রয়োজন?

অজয় দাস, উলুবেড়িয়া, হাওড়া

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Women Society
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE