গত বছর বার্বাডোজ়ে ট্রফির খরা কাটিয়ে অধিনায়ক হিসেবে দেশকে আইসিসি খেতাব জিতিয়ে সমস্ত ক্রিকেটপ্রেমী দেশবাসীর মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। তা-ও আবার একটি ট্রফি নয়, মাত্র আট মাসের ব্যবধানে দলকে অপরাজেয় রেখে এক জোড়া আইসিসি ট্রফির স্বাদ দিয়েছিলেন দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ট্রফিহীন থাকা একটা দেশকে। গত মার্চেই দুবাইয়ে রোহিতের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল ভারত। ফাইনালে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন। অথচ, আশ্চর্যজনক ভাবে সেই অধিনায়ক রোহিতকেই অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল খেতাবজয়ী টুর্নামেন্টের পরবর্তী সিরিজ়ে। দেশকে আইসিসি ট্রফি দেওয়ার ঠিক পরের টুর্নামেন্টে কেউ নেতৃত্ব হারাচ্ছেন, এমন নজির ভারতীয় ক্রিকেট তো বটেই, গোটা বিশ্বেই বিরল। কারণ হিসেবে নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকর জানিয়েছেন, তাঁরা ২০২৭ বিশ্বকাপকে লক্ষ্য করে শুভমন গিলের তারুণ্যের উপর ভরসা রাখতে চাইছেন। এই সিদ্ধান্ত কি বড্ড তাড়াহুড়ো করে নেওয়া হল না? যে অধিনায়ক দেশকে জোড়া আইসিসি ট্রফি জেতালেন, তাঁকেই সরিয়ে দেওয়া হল? আর মাত্র দুটো বছর কি বিশ্বজয়ী অধিনায়কের উপর ভরসা রাখা যেত না?
অধিনায়ক রোহিতের পরিসংখ্যানটা দেখা যাক। ২০২৩ বিশ্বকাপ থেকে এ বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত তিনটি আইসিসি টুর্নামেন্টের ২৪টি ম্যাচ খেলে রোহিতের নেতৃত্বে ২২টি ম্যাচই জিতেছে ভারত। হার বলতে ২০২৩-এ এক দিনের বিশ্বকাপ ফাইনাল এবং একটি পরিত্যক্ত ম্যাচ। শুধুমাত্র পরিসংখ্যান নয়, শেষ তিনটে বছরে রোহিত ক্রমাগত আইসিসি টুর্নামেন্টের নক আউট ম্যাচে হেরে মনোবল তলানিতে থাকা দলটাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে শিখিয়েছেন, যা সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউ জ়িল্যান্ডের মতো দলগুলোর থেকে সমীহ আদায় করেছে। এর পরিণতিই হল লাগাতার দু’টি আইসিসি খেতাব। তবে নির্বাচকমণ্ডলী বা বর্তমান কোচের কাছে এ সবই গুরুত্বহীন, তাই তো তাঁরা একবাক্যে রোহিত শর্মাকে অধিনায়কের আসন থেকে সরাতে এক বারও পিছপা হননি। পরিস্থিতি যা ইঙ্গিত দিচ্ছে হয়তো শীঘ্রই অধিনায়কত্বের পাশাপাশি এই ফরম্যাটে তিনটি দ্বিশতরানের মতো বিরল কৃতিত্বের অধিকারী রোহিতকে অবসর নিতেও বাধ্য করা হবে।
সুদীপ সোম, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
আজও নেই
পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলের নিকটে অবস্থিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র ‘কেপ ভার্দে’। সর্বশেষ জনগণনা অনুযায়ী এখানকার জনসংখ্যা মাত্র ৫ লক্ষ ৬০ হাজার, বিশ্বের সর্বনিম্ন জনসংখ্যার দেশগুলির একটি। ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে দ্বীপরাষ্ট্রটি। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, আসন্ন ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করেছে কেপ ভার্দে। চলতি বছরের ১২ অক্টোবর রাজধানীর ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ইসওয়াতিনি (সোয়াজ়িল্যান্ড)-কে ৩-০ গোলে হারিয়ে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছে। এ ব্যাপারে প্রথম সর্বকনিষ্ঠ দেশ হল ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী তৎকালীন তিন লক্ষ জনসংখ্যার দেশ আইসল্যান্ড।
এই কেপ ভার্দেই ২০০০ সালে ফিফা ক্রমতালিকায় ছিল ১৮২তম স্থানে। এ বছর সে রয়েছে ৭১তম স্থানে। অথচ, ১৪০ কোটির ভারত বিশ্বকাপের মূল পর্বে উঠতে পারল না আজও।
বিশ্বজিৎ কর, কলকাতা-১০৩
বাঙালি কই
মোহনবাগান তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলকে পরাজিত করে ২১তম ঐতিহ্যবাহী আইএফএ শিল্ড জিতেছে। দুই বাংলার দল ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। তবে বাংলা বা বাঙালির ফুটবল দেখে যে খুশি মেলে, সে খুশি কি আমরা পেলাম? সত্তর বা আশির দশকে আইএফএ শিল্ড জেতার খুশিতে প্রবল আনন্দে মেতে ওঠা সেই বাঙালি ক্রীড়াপ্রেমী ও তার আবেগ কোথায়? সে সময় মাঠে তিল ধারণের জায়গা থাকত না। মাঠে তাদের প্রিয় দলের সম্ভাব্য এগারো জন খেলোয়াড়ের নাম গড়গড়িয়ে সমর্থকরা বলে দিতে পারতেন। দুটো দলই বাঙালি খেলোয়াড়ে সমৃদ্ধ ছিল কতিপয় ভিনরাজ্যের খেলোয়াড় ছাড়া। কিন্তু সেই ভিনরাজ্যের খেলোয়াড়রাও বহু কাল ধরেই তিন প্রধান দলে খেলেছেন। বাংলার দর্শকদেরও তাই তাঁদের বাংলার ফুটবলার না ভাবার কোনও কারণ ছিল না।
এখন তো কারা মাঠে নামবেন, সেটাও বোধ হয় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কেউ জানে না। দলে কোন বিদেশি কখন আসছেন, সেটাও সমর্থকদের অজানা থাকে। কলকাতার দুই প্রধান দলেই ভিনরাজ্য এবং ভিনদেশি খেলোয়াড়ের আধিক্য। ফাইনালে খেলা মোহনবাগানে একমাত্র বাঙালি ফুটবলার শুভাশিস বসু আর ইস্টবেঙ্গলের পরিবর্ত প্লেয়ার হিসেবে তিন জন ছাড়া সব অন্য দেশ ও রাজ্যের খেলোয়াড় ছিলেন। ক্লাবেও নেই প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অমল দত্ত বা নইমুদ্দিনের মতো শৃঙ্খলাপরায়ণ ক্লাবদরদি কোচ। নেই সেই বিখ্যাত ভোকাল টনিক, ডায়মন্ড সিস্টেম-এর লড়াই। ব্যবসায়িক পরিকাঠামোয় আজ ক্লাবগুলি পরিচালিত। সেখানে কোটি কোটি খরচে বিদেশিদের আনাগোনা লেগে থাকে। না আছে তাঁদের দায়িত্ববোধ, না আছে ক্লাবের প্রতি মমতা। সবাই তো ক্লাব অন্তপ্রাণ সুব্রত ভট্টাচার্য, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শিশির ঘোষ বা মইদুল ইসলাম হতে পারেন না।
শুধুমাত্র কলকাতা ফুটবল লিগ ও আইএফএ শিল্ড নয়, ডুরান্ড, রোভার্স, দার্জিলিং গোল্ড কাপ— এই দুই প্রধানের লড়াইকে কেন্দ্র করে ভিনরাজ্য ও অন্য দেশে বসবাসকারী বাঙালির মধ্যেও বাঙাল-ঘটি বা চিংড়ি-ইলিশ নিয়ে ফুটবল আবেগ ও উদ্দীপনা দেখা যেত। এ বারের শিল্ড ফাইনালে গুটিকয়েক বাঙালি ফুটবলারকে দেখে কি বাঙাল-ঘটির সেই চিরাচরিত লড়াইয়ের স্বাদ পাওয়া গেল? সত্তর-আশির দশকের খেলার আনন্দ ও বাঙালি ফুটবলারদের নৈপুণ্য আজ দেখার সুযোগ মেলে না বলেই বোধ হয় প্রিয় দলের শিল্ড ফাইনাল জয়ের পরেও সমর্থকদের উচ্ছ্বাসে খানিক খামতি থেকেই গেল।
স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০
অপব্যবহার
‘পিএফের আরও বেশি টাকা তুলতে সায় কেন্দ্রের’ (১৪-১০) শীর্ষক সংবাদটি আপাতদৃষ্টিতে বর্তমানে পিএফ-এর আওতায় থাকা সাত কোটিরও বেশি সদস্যকে খুশি করবে, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। পিএফ-এর কেন্দ্রীয় অছি পরিষদের বর্তমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অত্যাবশ্যক প্রয়োজন, অর্থাৎ অসুস্থতা, শিক্ষা ও বিয়ে এবং বাসস্থানের প্রয়োজনের ক্ষেত্রে নিয়মের শিথিলতা অতি অবশ্যই আগামী দিনে পিএফ-এর সদস্যদের পক্ষে সুবিধাজনক ও স্বস্তিদায়ক হবে, এ কথা ঠিক। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে টাকা তোলার আবেদন জানানোর ক্ষেত্রে সবিস্তার ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই বলে যে নির্দেশ এখানে দেওয়া হয়েছে, তাতে এক শ্রেণির মানুষের অকারণে টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়েছে। এমনটা হলে পরবর্তী সময়ে বাধ্যতামূলক আর্থিক প্রয়োজনে বা অবসরের পর পিএফ-এর সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
তাই বিশেষ পরিস্থিতিতে টাকা তোলার ক্ষেত্রে পিএফ-এর সদস্যের অনুপস্থিতিতে যে মনোনীত সদস্য এই অর্থের দাবিদার, তাঁরও সম্মতি নিয়োগকর্তার মাধ্যমে অছি পরিষদের বিবেচনার জন্য পেশ করা বাধ্যতামূলক করা হোক। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জারি করা যে কোনও সিদ্ধান্তের অপব্যবহারের ফলে দেশের এক জন নাগরিকও যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেটা দেখার দায়িত্ব কিন্তু গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারেরই।
অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)