এ বছর দীপাবলিতে নতুন সংযোজন ছিল ‘কার্বাইড গান’ বা ‘দেশি ফায়ারক্র্যাকার’। এই বাজির কারণে মধ্যপ্রদেশের বেশ কিছু পরিবারে দীপাবলির উৎসবের আলো নিবে গিয়ে নেমে এসেছে গভীর আঁধার। ছোটদের আবদার মেটাতে কুণ্ঠা করেননি বড়রা। কিন্তু সেই আবদারের এমন মাসুল চোকাতে হবে, ভাবেননি কেউ। মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই বছরের দীপাবলির মরসুমে প্রায় তিনশো জন চোখের সমস্যায় আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জন স্থায়ী ভাবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। কার্বাইড বন্দুক হল পিভিসি পাইপের অংশ, ক্যালশিয়াম কার্বাইড এবং ইগনিশন-এর (রাসায়নিক মিশ্রণকে জ্বালানোর প্রক্রিয়া) মাধ্যমে বাড়িতে তৈরি যন্ত্র। ক্যালশিয়াম কার্বাইডে জল যোগ করলে অ্যাসিটিলিন গ্যাস তৈরি হয়। তার পর একটি স্ফুলিঙ্গ গ্যাসকে জ্বালিয়ে দেয়, যার ফলে হঠাৎ শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে যে বিষাক্ত বাষ্প নির্গত হয়, তা মানুষের চোখে গেলে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে দিতে সক্ষম। আর ঠিক এই ঘটনাটিই ঘটেছে ওই রাজ্যে।
আইনি বিধিনিষেধ সত্ত্বেও, ই-কমার্স সাইটগুলি কার্বাইড-ভিত্তিক বন্দুকগুলির বিক্রি অব্যাহত রেখেছিল। তবে, শুধুমাত্র প্রশাসনের নজরদারির দাবি না তুলে অভিভাবকদের তাঁদের সন্তানদের এই ধরনের বিপজ্জনক বাজি থেকে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্বও নিতে হবে।
অমিয় বিশ্বাস, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
ট্রেনে দেরি
দক্ষিণ-পূর্ব রেলে ভ্রমণ করা এখন দুঃসহ হয়ে উঠেছে। ট্রেন-যাত্রা না বলে এখন লোকে লেট-যাত্রা বলছেন। গড়ে প্রতিটি ট্রেন দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা দেরিতে গন্তব্য হাওড়া স্টেশনে পৌঁছচ্ছে। এতে নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে যে কোনও রেলযাত্রীর সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে। বাসের ভাড়া যে-হেতু অনেক বেশি, তাই ট্রেন যাত্রাই সাধারণ মানুষের কাছে সুবিধাজনক। কিন্তু লকডাউনের পর থেকে এই রুটে এমন সমস্যা দিনে দিনে বাড়ছে। সম্প্রতি ন’টা সাতচল্লিশে মেচেদায় একটি পাঁশকুড়া লোকাল ধরে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছলাম দুপুর দুটো সাত মিনিটে। অর্থাৎ, মেচেদা থেকে হাওড়া এই প্রায় ষাট কিলোমিটার রাস্তা যেতে চার ঘণ্টারও বেশি সময় লাগল। আশ্চর্যের বিষয়, এত সব কাণ্ডের পরেও রেল কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। কেউ কেউ সাফাই গাইছেন, ট্রেন নাকি বেড়ে গিয়েছে। তাই এই সমস্যা। সরকার কি সরকারি ভাবে আর ট্রেন চালাতে চাইছে না? যাতে বেসরকারি হাতে এই পরিষেবা তুলে দেওয়া যায়, তাই এই হয়রানি?
অন্য দিকে, নতুন কিছু নামীদামি ট্রেন ও পণ্যবাহী রেলগাড়িকে নির্দিষ্ট সময়েই চালাচ্ছেন রেল কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ, দীর্ঘ দিন যাবৎ এই সমস্যা ফেলে রেখে সাধারণ মানুষের আর বিপদ বাড়াবেন না।
শম্ভু মান্না, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
অব্যবস্থা
ঠাকুরপুকুর এলাকায় কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য এমজি রোড ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু কবরডাঙা এলাকায় যানজটে সবাইকে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে প্রত্যেক দিন। বিশেষত, কেওড়াপুকুর বাজার এলাকা থেকে কবরডাঙা পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা বেহাল এবং কবরডাঙায় আনাজপাতির আড়ত থাকার কারণে মেন রোড তুলনায় অনেকটাই সঙ্কীর্ণ। এক দিকে কবরডাঙা এলাকায় মাছের আড়ত, মোড়ে কবরডাঙা-ঠাকুরপুকুর অটোর লাইন এবং অন্য দিকে ঠাকুরপুকুর থেকে আসা বেসরকারি বাসগুলির কবরডাঙা মোড়ে হঠাৎ হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়া প্রত্যেক দিন সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তা ছাড়া, জোকা-ঠাকুরপুকুর অঞ্চলে বেশ কিছু স্কুলও রয়েছে। এ দিকে, কবরডাঙা থেকে ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হসপিটাল পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা বেহাল। গত বছরের তুলনায় রাস্তা চওড়া হলেও যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে তা সেই ভাবেই পড়ে থাকে বহুকাল। বর্ষাকালে ওই রাস্তায় গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে অসুবিধা হয়। প্রশাসনিক স্তরে ট্র্যাফিক পুলিশ বা সিভিকদের প্রায় দেখাই যায় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি শীঘ্র বিবেচনার অনুরোধ রইল।
দেবজিৎ সিংহ রায়, কলকাতা-৯৩
অকেজো যন্ত্র
অ্যাপ-ভিত্তিক পার্কিং ফি আদায়ের ব্যবস্থায় কলকাতা পুরসভা ই-পস যন্ত্র চালু করে শহরে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে। ৬০০টি ই-পস যন্ত্র কিনে পার্কিং-ফি আদায়ের ৪০টি বরাতপ্রাপ্ত সংস্থার হাতে তুলেও দেয় পুরসভা। রাজকোষ থেকে এত খরচ করে যন্ত্রগুলো কেনা হলেও তা নাকি ব্যবহার হচ্ছে না, নগদে পার্কিং ফি আদায় চলছে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে। এমনটাই ‘নগদেই চলছে পার্কিং-ফি নেওয়া, সমস্যা কি ই-পস যন্ত্রে?’ (২০-১০) শীর্ষক সংবাদে প্রকাশ।
ই-পস যন্ত্র বসানো তো প্রযুক্তিনির্ভর একটি ব্যবস্থা, যা ঠিকঠাক চালু রাখা পুরসভার পার্কিং বিষয়ক দফতরের দেখার কথা। যদি সংস্থার হাতে দিতেই হয় বা নগদে আদায় ব্যবস্থা চালু রাখতে হয়, তা হলে কোষাগার থেকে কয়েক কোটি টাকা খরচ করা হল কেন? বরাতপ্রাপ্ত সংস্থাগুলির অভিযোগ, যন্ত্রগুলি ঠিকঠাক কাজ করে না, সরবরাহকারী সংস্থা প্রতি মাসে যন্ত্র পিছু ৫০০ টাকা সার্ভিস চার্জ নিলেও পরিষেবা ঠিকমতো দেয় না। অভিযোগ, যন্ত্রগুলিতে দু’টি করে সিম কার্ড দেওয়ার কথা হলেও একটি সিম ভরে চালানোয় তা সব সময় কাজ করে না, নেটওয়ার্কের সমস্যায় অকেজো থাকে। অথচ, প্রকল্পটির নিয়মিত খোঁজ নেওয়া বা সিস্টেমটিতে নজরদারি চালানো হলে এমন উন্নত প্রকল্পটি মাঠে মারা যেত না। বিদেশে তো এই ব্যবস্থাতেই পার্কিং-ফি আদায় হয়, ফি দেওয়ার রসিদ গাড়ির ভিতরে রেখে লোকজন চলে যান। দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ এসে যাতে তা দেখে আশ্বস্ত হয়, নইলে গাড়ি টেনে নিয়ে গিয়ে স্থানীয় থানায় জমা হয়ে যায়। মধ্যবর্তী কারও ভরসায় না গিয়ে নিখুঁত একটি ব্যবস্থা গড়ে তুললে অনেক বেশি রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা। তাই আরও নিবিড় ভাবে বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার।
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪
রূপমাধুরী
তৃষ্ণা বসাকের ‘হেমন্তের ঘ্রাণ’ (রবিবাসরীয়, ১৯-১০) প্রবন্ধটি মন ছুঁয়ে গেল। কার্তিক-অগ্রহায়ণ এই দুই মাস হেমন্তকাল বলে চিহ্নিত হলেও এতে মিশে থাকে শরৎ আর শীতের পরশ। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ধরা পড়ে হেমন্ত প্রকৃতির অপরূপ রূপমাধুর্য— “প্রথম ফসল গেছে ঘরে—/ হেমন্তের মাঠে-মাঠে ঝরে/ শুধু শিশিরের জল;/ অঘ্রাণের নদীটির শ্বাসে/ হিম হ’য়ে আসে/ বাঁশপাতা-মরা ঘাস-আকাশের তারা;/ বরফের মতো চাঁদ ঢালিছে ফোয়ারা;” তবে হেমন্তের প্রকাশ হয় খেতের চকচকে নতুন ধানের শিষ দেখে আর সর্ষের ফুল দেখে। শিশিরে ভেজা সকাল, কাঁচা সোনা রোদ, মেঘমুক্ত নীল আকাশ আর জোছনা ডোবা রাতে হেমন্তিকা আর গোপনে থাকে না, পরিস্ফুট হয় তার মোহময়ী রূপ নিয়ে। রবিঠাকুর লিখেছেন: “হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে/ হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে।।/ ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো— ‘দীপালিকায় জ্বালাও আলো,/ জ্বালাও আলো, আপন আলো, সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে।’”
হেমন্তকালে নতুন ধান চাষি ভাইদের ঘরে আসে বলে তাঁদের খুব আনন্দ হয়। সেই আনন্দের অভিব্যক্তি ধরা পড়ে বৈষ্ণব পদকর্তা লোচন দাসের লেখায়: “অগ্রাণে নোতুন ধান্য বিলাসে/ সর্বসুখ ঘরে প্রভু কি কাজ সন্ন্যাসে।।/ পাটনেত ফোটে ভোটে শয়ন কম্বলে/ সুখ নিদ্রা যাও তুমি আমি পদ তলে।।” কবি নজরুল ইসলাম তাঁর ‘অঘ্রাণের সওগাত’ কবিতায় হেমন্ত প্রকৃতির ছবির সঙ্গে পারিবারিক সংস্কৃতির ছবিটা ফুটিয়ে তুলেছেন— “ঋতুর খাঞ্চা ভরিয়া এল কি ধরণির সওগাত?/ নবীন ধানের আঘ্রাণে আজি অঘ্রাণ হলো মাত।”
প্রদীপ কুমার দাস, শ্রীরামপুর, হুগলি
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)