Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: স্বামীজির আশঙ্কা

এই চিত্তসঙ্কট মিসেস বুলের কাছে ধরা পড়েছিল। মিসেস বুল স্বামীজিকে ১৯০০ সালের মে মাসে লিখলেন, ‘‘না, বিষয়ে জড়িয়ে আপনাকে বিষয়ী হতে হবে না। আপনি বিষয়বিরাগী সন্ন্যাসীই থাকুন, তাতেই পৃথিবীর মঙ্গল।’’

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

জীবনের শেষভাগে বিবেকানন্দ কাজের চক্র থেকে কেন নিজেকে মুক্ত করতে চাইছেন, সে সম্পর্কে বিশ্বজিৎ রায় (‘নিজস্ব প্রত্যাহারেও তিনি স্বতন্ত্র’, ২৬-১) বিবেকানন্দের পত্র থেকেই দু’টি কারণ উদ্ধৃত করেছেন। এক, বিবেকানন্দের শরীর-মন ভেঙে গিয়েছে, তাঁর বিশ্রাম দরকার। দুই, গুরুভাইরা যাতে তাঁর উপর নির্ভরশীল না হয়ে পড়েন, স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।

কিন্তু এ ঘটনার পিছনে এই দুই কারণের অতিরিক্ত গভীরতর কারণও ছিল। আসলে তখন মঠের আর্থিক ও অন্যান্য দায়দায়িত্বের বোঝা হেতু স্বামীজি নিজের মধ্যে সন্ন্যাসীর মৃত্যু-সম্ভাবনা দেখে আতঙ্কিত হচ্ছিলেন।

ওই সময় বেলুড় মঠের সম্পত্তি স্বামীজির নামে ছিল। মঠকে স্বামীজির ব্যক্তিগত সম্পত্তি ধরে নিয়ে, বালি মিউনিসিপ্যালিটি বিরাট কর চাপিয়েছিল, মামলা চলছিল তা নিয়ে। স্বামীজি মিসেস বুলকে ১২ ডিসেম্বর ১৮৯৯-এ লেখেন, ‘‘ভাল কথা, মিউনিসিপ্যালিটি অত্যধিক কর বসিয়ে আমাদের উচ্ছেদ করতে চায়। সেটা আমারই দোষ, কারণ আমিই ট্রাস্ট করে মঠটি সাধারণ-সম্পত্তি করে দিইনি।’’

স্বামীজি মঠের কর্তৃত্ব থেকে অব্যাহতি চাইছিলেন। মিসেস বুলকে ১৭ জানুয়ারি ১৯০০ সালে লিখলেন, ‘‘আমার কাছে এটা স্পষ্টতর হয়ে উঠছে যে, আমায় মঠের সব ভাবনা ছেড়ে দিতে হবে।... আমার কাছে এই সর্বোচ্চ ত্যাগের আহ্বান এসেছে— উচ্চাশা, নেতৃত্ব ও যশকে বিসর্জন দিতে হবে। সে তপস্যার জন্য মন প্রস্তুত।... সারদানন্দ, ব্রহ্মানন্দ ও আপনার নামে মঠের ট্রাস্ট-ডিড করে দিতে চাই। সারদানন্দের কাছ থেকে কাগজপত্র পেলেই কাজটা করে দেব।’’ আসলে স্বামীজি তখন আশঙ্কা করছিলেন, তিনি কি বিষয়ী হয়ে পড়ছেন!

তাঁর এই চিত্তসঙ্কট মিসেস বুলের কাছে ধরা পড়েছিল। মিসেস বুল স্বামীজিকে ১৯০০ সালের মে মাসে লিখলেন, ‘‘না, বিষয়ে জড়িয়ে আপনাকে বিষয়ী হতে হবে না। আপনি বিষয়বিরাগী সন্ন্যাসীই থাকুন, তাতেই পৃথিবীর মঙ্গল।’’

‘বিশ্রাম অত্যাবশ্যক’ লিখলেও স্বামীজি বিশ্রাম নেননি। জীবনের শেষ দিনটিতেও সাধু-ব্রহ্মচারীদের ক্লাস নিয়েছিলেন আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। পড়িয়েছিলেন ব্যাকরণ। বিশ্রাম নিলেন কোথায়?

উত্তমকুমার পতি

শালডিহা হাইস্কুল, বাঁকুড়া

ডাউন সিনড্রোম

‘গর্ভপাতে সায় নেই কোর্টের’ (৩০-১) শীর্ষক প্রতিবেদন বিষয়ে এই পত্র। মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে সহমত হয়েও কয়েকটি প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া যায় না। বেলেঘাটার বাসিন্দা

গর্ভবতী মহিলাটি যখন জানতে পারেন যে তাঁর গর্ভস্থ ভ্রূণটি ‘ডাউন সিনড্রোম’ নিয়ে জন্মাবে তখন উদ্বিগ্ন হয়েই গর্ভপাতের বিষয়ে মনস্থির করেন। কিন্তু ভ্রূণের বয়স ছাব্বিশ সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ায় হাইকোর্টের অনুমতি প্রার্থনা করেন। কুড়ি সপ্তাহের পরে গর্ভপাত করাতে আদালতের অনুমতি লাগে। এ ক্ষেত্রে হাইকোর্ট তাঁকে অনুমতি দিচ্ছে না। এই প্রসঙ্গে দু’টি মন্তব্য বিশেষ ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

এক, এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন যে ক্রোমোজ়োমের জটিলতার কারণে শিশুটি ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্মালেও বেঁচে থাকবে। ভ্রূণটি মানবাকৃতি ধারণ করেছে। ফলে সিজ়ারিয়ান করে তাকে গর্ভপাত করানোর অর্থ শিশুটিকে খুন করা।

দুই, রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেছেন যে মহিলা কোর্টে আসতে দেরি করে ফেলেছেন।

দু’টি মন্তব্য পড়ে কয়েকটি প্রশ্ন জাগছে। কুড়ি সপ্তাহের মধ্যে যে জানা যায়নি গর্ভস্থ ভ্রূণটির ক্রোমোজ়োমের জটিলতা রয়েছে তার জন্য কি ওই গর্ভবতী মহিলা দায়ী? না কি এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদেরও কিছু দায় থেকে যায়? গর্ভবতী মহিলার আইনজীবীর বয়ান অনুযায়ী তাঁর আর্থিক অবস্থা ততটা সবল নয় যাতে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত সন্তানকে তিনি যথাযথ ভাবে পালন করতে পারেন। এ কথা অনেকেই জানেন যে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের জন্য বিশেষ ধরনের শিক্ষা ও যত্ন প্রয়োজন যা অত্যন্ত খরচ সাপেক্ষ। এই রোগে আক্রান্তরা সাধারণত পঞ্চাশ থেকে ষাট বছর বয়স পর্যন্ত জীবিত থাকেন। এই লম্বা সময় ধরে মানুষটির প্রতিপালন আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা এক মায়ের পক্ষে কী ভাবে সম্ভব?

এখানেই প্রশ্ন উঠছে দেশের সরকারের ভূমিকা নিয়ে। যেখানে সার্ভে বলছে প্রতি তেরোশো জন বয়স্ক মায়ের ক্ষেত্রে এক জন করে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুর জন্মের সম্ভাবনা থাকে, সেখানে সরকারের কিছু দায় থেকে যায় না কি? হাইকোর্ট যেমন এক জন সন্তানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন মাকে গর্ভপাতের অনুমতি দেয় না গর্ভস্থ শিশুর মানবাধিকার রক্ষার্থে, তেমনই কি সরকারকে নির্দেশ দিতে পারে না শিশুটির দেখভালের

দায়িত্ব নেওয়ার জন্য? কারণ ওই সন্তান তো কেবলমাত্র মায়েরই নয়, দেশেরও সম্পদ!

এই প্রসঙ্গে আরও বড় এক প্রেক্ষাপট উন্মোচিত হয়ে যায়। বড় শহরের বড় হাসপাতালের সৌজন্যে তবু জানা যায় যে গর্ভস্থ ভ্রূণ একুশ নম্বর ক্রোমোজ়োমের গোলমালে জটিলতার শিকার এবং ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্মাবে। কিন্তু আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ গর্ভবতী মায়েদের কী হবে যাঁদের সামনে এই জাতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনও সুযোগই নেই? ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুকে ঈশ্বরের অভিশাপ, অপয়া মায়ের সন্তান, পাপের ফল ইত্যাদি চিহ্নে চিহ্নিত করে দিয়েই দায়িত্ব খালাস হয়ে যাবে?

এই সামাজিক সমস্যার কথা ভেবে আদালত কোনও দিশা দেখাতে পারে না কি?

সুরথ রায়

ভদ্রকালী, হুগলি

বাবার ভূমিকা

সম্পাদকীয় ‘পিতার অবকাশ’ (২৮-১) প্রসঙ্গে কিছু বলার জন্য এই পত্র। এ বার থেকে সরকারি নির্দেশনামা অনুযায়ী সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের শিক্ষকগণ ৩০ দিন ছুটি নিতে পারবেন। অপর দিকে শিক্ষিকাগণ মাতৃত্বের ছুটি ছ’মাস ছাড়াও অতিরিক্ত দু’বছর ছুটি পাবেন সন্তানের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত। সন্তান জন্মের পর তাকে সুস্থ ভাবে বড় করে তোলায় মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি ঠিকই। কিন্তু সন্তান লালন-পালনে বাবার ভূমিকাও কোনও অংশে কম নয়। এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে মা সন্তানের সমস্যা দূর করতে পারেন না, সেখানে বাবার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সে ক্ষেত্রে কর্মরত বাবা-মায়ের যেমন বাড়ি ভাড়া ভাতা সম্মিলিত ভাবে ৬০০০ টাকার বেশি নিতে পারেন না, তেমন ভাবে সন্তানের জন্য নির্ধারিত ছুটি বাবা ও মা সম্মিলিত ভাবে ২ বছর ৩০ দিন যদি নিজেদের প্রয়োজনে নিতে পারতেন,

হয়তো অনেক কর্মরত যুগল আরও ভাল ভাবে সন্তানকে বড় করে

তুলতে পারতেন।

মৌটুসী পন্ডা

বেনামুড়ি, কাঁথি, পূর্ব মেদিনীপুর

জুটমিলের শ্রমিক

আমরা জুটমিলের শ্রমিক যারা মাসে ১০০০ বা ১৫০০ টাকা পেনশন পাই। আমাদের জন্য কেউ কোনও চিন্তা করে না, শুধু বলে ধর্মঘট করো, তা হলে ৬০০০ টাকা পেনশন হবে। কিন্তু কত বার ধর্মঘট করলাম, কিছুই পেলাম না। আমাদের ১৯৯৫ সাল থেকে পিএফের টাকার একটা অংশ সরকার কেটে নেয় পেনশনের জন্য, অবসরের পর আমরা হাতে ১৫০০ টাকা পাই। এই টাকায় দু’জন লোকের কি জীবনধারণ সম্ভব? আর যার স্বামী মারা গিয়েছে সে আবার এর অর্ধেক পেনশন পায়, তাদেরই বা কী করে চলে? বিজেপি যখন সরকারে ছিল না তখন অনেক চেঁচামেচি করেছিল সংসদে, এখন গদিতে এসে ভুলেই গিয়েছে। সিপিএম আগে সংসদে বলত, এখন আর কেউ বলেও না, চেঁচায়ও না, শুধু ভোটের সময় বলে।

অসীম কুমার দাস

চন্দননগর, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE