‘মাতৃঘাতী’ (১৬-১) সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, “মামণি রুইদাসের মৃত্যু প্রশাসনের কর্তব্যবিমুখ, অ-সংবেদী মুখটিই ফের প্রকাশ করল।” এই বাক্যটি আজ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের মনের কথা। সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধের সরবরাহ না থাকা বা নিম্নমানের ওষুধের ব্যবহার, সমস্ত ধরনের চিকিৎসা সংক্রান্ত সামগ্রী পাচার হওয়া বা চিকিৎসকদের একাংশের রোগীকে ঠিক পরিষেবা না দেওয়া, দালালরাজ প্রভৃতি চলে আসছে বছরের পর বছর। ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে, অথচ রাজ্য সরকারের কোনও হেলদোল আছে বলে মনে হয় না। এই বিষয়গুলি এবং সাম্প্রতিক আর জি কর কাণ্ডের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সরকারের পক্ষ থেকে মূল ঘটনাকে আড়াল করার এক মরিয়া প্রয়াস চলছে। এতে জনমানসে সরকারের সদিচ্ছার প্রতি সংশয় জাগতে বাধ্য।
মামণি রুইদাসের ক্ষেত্রেও তা-ই হল। নিম্নমানের স্যালাইন যখন তাঁর মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলে অনুমান করা হচ্ছে, তখন কর্তব্যরত ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করে স্বাস্থ্য দফতরের গাফিলতি আড়াল করার প্রচেষ্টাই লক্ষিত হল। জীবনদায়ী ওষুধের ক্ষেত্রে যেখানে ‘কোল্ড চেন’ মেনে চলা সর্বাগ্রে প্রয়োজন, সেখানে সেটাই অবহেলিত থেকে যায়। তার বদলে স্বাস্থ্য দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে নিচুতলা অবধি এক ‘দুর্নীতির চেন’ বিস্তৃত রয়েছে। ফলে, অবহেলার এই অভিযোগ সর্বত্র। সরকারের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বর্তমানকে আড়াল করতে অতীতকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা। মনে রাখা প্রয়োজন, পূর্বতন সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভই তাদের আজও অতীত করে রেখে দিয়েছে। রাজ্যের শাসক দলের ‘মা, মাটি, মানুষ’ স্লোগানের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের বিরুদ্ধে এই ‘মাতৃঘাতী’ বা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সংক্রান্ত দুর্নাম দূর করার প্রয়াস নেওয়া অবশ্য-কর্তব্য। সেটা করতে না পারলে বা এড়িয়ে গেলে, সরকারের শক্ত মাটি আলগা করতে মানুষ পিছপা হবেন না। এই বোধ-বিবেচনা বিস্মৃত হলে শাসক দলেরও অতীত হয়ে যাওয়া আশ্চর্যজনক নয়। তাই সম্পাদকীয়ের বক্তব্যকে অনুসরণ করে বলা যায়, সরকারের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে, যে কোনও অভিযোগকে রাজনৈতিক বিরোধিতায় পর্যবসিত না করে, সরকারের উচিত বিভিন্ন অনিয়ম দূরীকরণে মনোযোগ দেওয়া।
অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি
বিষের উৎস
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে মামণি রুইদাস এবং অন্য এক প্রসূতির শিশুসন্তানের মৃত্যু হয়েছিল। কয়েক জন প্রসূতি সঙ্কটজনক হওয়ায় গ্রিন করিডর করে দ্রুত কলকাতায় এনে তাঁদের চিকিৎসা চলেছে। সংবাদে প্রকাশ, গত কয়েক বছরে নানা মেডিক্যাল কলেজে অস্ত্রোপচার করে প্রসবের পরে একাধিক প্রসূতির অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়েছে, কয়েকটি মৃত্যুও হয়েছে। সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে কালো তালিকাভুক্ত উত্তরবঙ্গের এক সংস্থার স্যালাইনের ব্যবহার।
চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, সিজ়ারে যে ত্রুটি ছিল না, তা মৃতের ময়না তদন্ত রিপোর্টে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে রিপোর্টে এও স্পষ্ট, কোনও সংক্রমণ থেকে শকে চলে গিয়ে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। উত্তরবঙ্গের ওই সংস্থার তৈরি স্যালাইনের বিরুদ্ধে কর্নাটক সরকার অভিযোগ করেছিল। তখন রাজ্যের আধিকারিকরা তদন্তে গিয়ে বিস্তর গোলমাল পেয়ে সংস্থাটিকে নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু স্যালাইনের ব্যবহার অব্যাহত থাকে হাসপাতালে-হাসপাতালে। সম্প্রতি রাজ্য স্বাস্থ্য বিভাগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্যের সমস্ত হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে ওই সংস্থার তৈরি ১৪টি ওষুধের নামোল্লেখ করে তা ব্যবহারে ‘পুনরায়’ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রবীন্দ্রনাথের গল্পে কাদম্বিনীকে ‘মৃত’ ঘোষণা করা হলেও তিনি কিন্তু জীবিত ছিলেন। দুঃখের বিষয়, মেদিনীপুর মেডিক্যালের প্রসূতিও প্রাণ বিসর্জন দিয়ে প্রমাণ করে গেলেন, নিষিদ্ধ তথা ‘মৃত’ স্যালাইন এত দিন ‘জীবিত’ই ছিল।
নিকুঞ্জবিহারী ঘোড়াই, কলকাতা-৯৯
ফের অন্যায়
প্রসূতি মৃত্যুর কারণে সিনিয়র ও জুনিয়র-সহ বারো জন ডাক্তারকে সাসপেন্ড করে রাজ্য সরকার এক অভিনব পদক্ষেপ করল। মানুষ মাত্রেই ভুল হয়। ডাক্তারদেরও ভুল হতে পারে। কিন্তু সেই ভুল কখনও একাধিক প্রসূতির ক্ষেত্রে হতে পারে না। যদি তা হয় তা হলে বুঝতে হবে এর পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদের রাজ্য সরকার তা বুঝে উঠতে পারে না। যদি অপারেশন থিয়েটারে ভুলের কারণে প্রসূতি সংক্রমিত হতেন, এবং তা ঘটত দু’-এক জনের ক্ষেত্রে, তা হলে বিশ্বাসযোগ্য হত হয়তো। কিন্তু পাঁচ জন প্রসূতি সংক্রমিত হয়েছেন। এর আসল কারণ যে স্যালাইন, সরকার কিছুতেই তা স্বীকার করতে চায়নি। কর্নাটক সরকার স্যালাইন প্রস্তুতকারী সংস্থাটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট দিয়ে যাওয়ার পরেও কী করে এই রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে তা ব্যবহার করা হচ্ছিল?
মৃতার পোস্ট-মর্টেম রিপোর্টে বলা হয়েছিল, মৃত্যু ডাক্তারদের ভুলের কারণে হয়নি। তা সত্ত্বেও প্রসূতি মৃত্যুর জন্য ১২ জন ডাক্তারকে সাসপেন্ড করা হল। স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠছে অথচ সরকার শোধরানোর চেষ্টাই করছে না। বরং সরকারের অপদার্থতা ডাক্তারদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হল। কেন এই ক্রোধ? সাম্প্রতিক আন্দোলনের কারণে নয়তো?
প্রফুল্লকুমার সরকার, কলকাতা-৭৮
দোষ কার
মামণি রুইদাস ও আরও চার প্রসূতির সঙ্কটজনক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এখনও পর্যন্ত যে কারণগুলি উঠে এসেছে, তার মধ্যে একটি বিতর্কিত স্যালাইনের ব্যবহার, অন্যটি ‘অক্সিটোসিন’ (ইনজেকশন)-এর উচ্চমাত্রায় প্রয়োগ। তদন্তে নেমে সিআইডি সিনিয়র চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিকেই গাফিলতি হিসেবে মনে করছে। ফলস্বরূপ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সিনিয়র জুনিয়র মিলে মোট বারো জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
মৃতার পরিবারের পক্ষ থেকে বিতর্কিত স্যালাইন ও ওষুধকেই দায়ী করা হয়েছিল। ময়না তদন্তের রিপোর্ট শুনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনুমান, অস্ত্রোপচারের সময় কোনও স্যালাইন বা ইনজেকশন ব্যবহারের ফলে শরীরে প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে জলের মাত্রা বেড়ে গিয়ে সেগুলি ফুলে যায় এবং স্বাভাবিক কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ঠিক কী ঘটেছে, উত্তর সময় দেবে। অন্য দিকে অভিযোগ, জুনিয়র চিকিৎসকরা রোগীকে অচেতন করার ও অস্ত্রোপচারের দায়িত্ব নেন। সিনিয়র চিকিৎসকেরা নাকি তখন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আদৌ কি এটাই ঘটেছে, না কি স্যালাইন গাফিলতি ঢাকতে চিকিৎসকদের ঘাড়ে কোপ ফেলা হচ্ছে?
সেক ইমরান, গোলকুঁয়াচক,পশ্চিম মেদিনীপুর
ঋদ্ধির মান
ঋদ্ধিমান সাহাকে বসিয়ে ঋষভ পন্থকে খেলানো হয়েছে বার বার। তার পর অজুহাত দেখিয়ে বাংলা দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। সবই নিছক অবিচার। ভারতের গর্ব এই উইকেটরক্ষককে এক বার নাকি এক সাংবাদিক অপমান করেন। সাহস হল কী ভাবে? ঠান্ডা, শান্ত এবং ভদ্র— এগুলোই কি ঋদ্ধিমানের অপরাধ? ত্রিপুরা কিন্তু ঋদ্ধিমানকে সম্মান দিয়ে দলে নিয়েছিল, তাঁর উপর ভরসা রেখেছিল। বাংলার বদলে সেই দলের হয়ে খেলে রঞ্জি থেকে ঋদ্ধিমান অবসর নিলেই ভাল হত।
আশিস রায়চৌধুরী, পূর্ব বিবেকানন্দ পল্লি, শিলিগুড়ি
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)