Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: কিন্তু কিছু প্রশ্ন ওঠে

শুজাতের মতো মধ্যবাদীদের সরিয়ে দিলে সব পক্ষেরই বড় সুবিধে। এতে ইঙ্গিত আছে, শুজাতের মৃত্যুতে ভারত রাষ্ট্রেরও সুবিধে। এমত পর্যবেক্ষণ কিছু প্রশ্ন তোলে।

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ০০:৪০

শুজাত বুখারি’র হত্যার প্রেক্ষিতে ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ’ (১৭-৬) নিবন্ধে সেমন্তী ঘোষের একটি বক্তব্য অনেকটা এ রকম: শুজাতের মতো মধ্যবাদীদের সরিয়ে দিলে সব পক্ষেরই বড় সুবিধে। এতে ইঙ্গিত আছে, শুজাতের মৃত্যুতে ভারত রাষ্ট্রেরও সুবিধে। এমত পর্যবেক্ষণ কিছু প্রশ্ন তোলে।

এ কথা ঠিক যে শুজাত চেয়েছিলেন, কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা চলুক। গত সাত দশকে অনেক বারই আলোচনা-বৈঠকের অনতিপূর্বে ইচ্ছাকৃত ভাবে এমন কিছু ঘটনা ঘটানো হয়েছে কাশ্মীরে যে বৈঠক বাতিল করতে হয়েছে, তবুও ইতিমধ্যে দু’দেশের মধ্যে অনেক বারই আলোচনা হয়েছে কিন্তু স্থায়ী কোনও সমাধান বেরোয়নি। কারণ মূল সমস্যা, পাকিস্তান কাশ্মীরের ভারতভুক্তি মেনে নিতে পারেনি। জন্মলগ্ন থেকেই পাকিস্তানের বাসনা, কাশ্মীর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হোক। একটিই অজুহাত, জম্মু ও কাশ্মীরের ভৌগোলিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাশ্মীর উপত্যকায় তাঁরাই ধর্মীয় সংখ্যাগুরু, যাঁরা বাকি ভারতবর্ষে সংখ্যালঘু। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই পাকিস্তান রাতের অন্ধকারে ভারত-পাকিস্তান কোনও রাষ্ট্রেই অন্তর্ভুক্ত না হওয়া স্বাধীন জম্মু ও কাশ্মীরে হানাদার পাঠিয়েছিল ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে। কিন্তু মহারাজা হরি সিংহ পাকিস্তানের হাত থেকে রক্ষা পেতে নিঃশর্তে ভারতে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় (২৬ অক্টোবর ১৯৪৭), সে পরিকল্পনা বানচাল হয়। ফলত পাক বাহিনী কাশ্মীরের সীমান্ত অতিক্রম করে আক্রমণ করে। শুরু হয় সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দুই রাষ্ট্রের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ, যা গড়ায় ১৯৪৮ পর্যন্ত, যদিও তৎকালীন ভারতের রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দের বদান্যতায় কাশ্মীরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পাকিস্তান দখলে আনতে সফল হয় এবং আজও দখলে রেখেছে।

কিন্তু সেই থেকেই পাকিস্তান ক্রমাগত কাশ্মীরে কখনও হানাদার পাঠিয়ে, কখনও সাহায্যপুষ্ট জঙ্গি অনুপ্রবেশ করিয়ে, হত্যালীলা ঘটিয়েছে কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিযুক্ত করতে; অন্য দিকে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে যাচ্ছে কাশ্মীরের মানুষ ‘নিপীড়িত’ এই অজুহাতে।

কাশ্মীরের জনগণের, বিশেষত হতাশাগ্রস্ত কাশ্মীরি যুবকদের মনে তাদের দাবিদাওয়ার প্রশ্নের সঙ্গে ধর্মীয় উন্মাদনা বা ধর্মান্ধতাকে সুকৌশলে উস্কে দিয়ে পাক সাহায্যপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জঙ্গিদের সাহায্যে তাদের স্বার্থসিদ্ধির স্বপ্ন দেখছে। এখন এ-ও জানা যাচ্ছে, সেনাবাহিনীর দিকে পাথর নিক্ষেপকারীরা পাকিস্তানের মদতেপুষ্ট। সুতরাং পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় সফলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

তবে ‘ট্র্যাক টু’ নীতিতে আশাবাদী শুজাতের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত-পোষণকারীরাও নির্দ্বিধায় স্বীকার করেন, কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে তাঁর নিজস্ব একটি গঠনাত্মক প্রয়াস ছিল এবং তিনি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ভীক ভাবে প্রকাশ করতেন। তিনি কাশ্মীরে ভারত সরকারের অনুসৃত নীতির সমালোচক ছিলেন, কিন্তু একই সঙ্গে কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপেরও তীব্র বিরোধী ছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই জঙ্গিরা বা কট্টর বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তাঁর উপর ক্ষিপ্ত হয় এবং তাঁদের হিট লিস্টে নাম ওঠে শুজাতের। জঙ্গিরা এর আগেও তাঁকে হুমকি দিয়েছে, তিনি তিন তিন বার হামলায় কোনও ক্রমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। এখন, জঙ্গিদের হাতেই শুজাত বুখারির মতো এক মডারেট কাশ্মীরির মৃত্যুর কথা জানা সত্ত্বেও এই সত্যটা সরাসরি বলতে এত দ্বিধা এবং সরকারকে দোষারোপ কেবলমাত্র ভাবের ঘরে চুরি নয়; এই সত্য থেকেও দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রয়াস যে, যদি সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের হত্যা কোনও এক ধর্মীয় উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর কাজ হয়, তবে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদীদের সহমর্মী আর এক ধর্মান্ধ গোষ্ঠী নিজেদের দুষ্কর্মের সমালোচনায় ক্ষিপ্ত হয়ে শুজাত বুখারির মতো কাশ্মীরিয়তের সমর্থক সাংবাদিককেও পরিকল্পনামাফিক রমজান মাসের মধ্যেই হনন করে এই বার্তাই দিতে চায়: যে তাদের সমর্থক নয়, তার জীবন অনিশ্চিত কাশ্মীরে।

রমজানের সময়ে সরকারের তরফে ঘোষিত একতরফা অস্ত্রবিরতিকে নিবন্ধে ‘রাজনৈতিক কারণ’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। কিন্তু রমজানের সময় প্রতি বছরই কাশ্মীরে তো বটেই, অন্যত্রও, এমনকি পশ্চিম এশিয়ায় দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে ব্যাপৃত পক্ষগুলির মধ্যেও সংঘর্ষবিরতি ঘটে এবং উভয় পক্ষই তা মোটামুটি মেনে চলে। কিন্তু কাশ্মীরে সরকারের একতরফা অস্ত্রবিরতির সুযোগে জঙ্গিরা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণে লিপ্ত হল। এমনকি ওই একই দিনে সেনাবাহিনীর রাইফেলম্যান ঔরঙ্গজেব, যিনি ইদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছিলেন, জঙ্গিরা তাঁকেও নৃশংস ভাবে হত্যা করে।

মনে রাখতে হবে, কংগ্রেস বা বিজেপির নীতির বিরোধিতা করতে হলে ভারত-বিরোধিতাও করতে হবে— এ তত্ত্ব ভ্রান্ত ও সর্বনাশী।

শান্তনু রায় কলকাতা-৪৭

বাংলায় নম্বর

সময় লেগে গেল অনেকটা, তবে জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের ছাত্র গ্রন্থন সেনগুপ্ত শেষ পর্যন্ত আমাদের মতো পরীক্ষকদের জিতিয়ে দিল। ৩২ বছর আগে নৈহাটির এক মেধাবী পরীক্ষার্থীকে বাংলা প্রথম পত্রে ৬৫ দিয়ে পরীক্ষকের চাকরিটি খুইয়েছিলাম। সে দিন অন্য পরীক্ষকদের সামনে খাতাটি পড়ার পরে প্রধান পরীক্ষক অন্য ঘরে নিয়ে গিয়ে আমাকে বলেন, ৬০-এর বেশি নম্বর দেওয়া নিয়ে অনেক বাধানিষেধ আছে। নানা ভাবে এ কথাও বলতে চেয়েছিলেন, নামীদামি স্কুলের ছাত্র হলেও কথা ছিল... প্রকারান্তরে তিনি নম্বর কমিয়ে দিতে বলেন। রাজি হইনি। পরের বছর জানতে পারলাম অযোগ্যতার কারণে পরীক্ষক হিসাবে আমার নিয়োগ বাতিল হয়েছে।

এর পর আনন্দবাজার পত্রিকায় এই বিষয়ে আমার লেখা একটি চিঠি (৩-৯-১৯৮৬) প্রকাশিত হলে অনেকেই এই বিষয়ে মুখ খোলেন। চিঠির শিরোনাম ছিল: ‘কেমন লিখলে বাংলায় দশে দশ পাব’। এই প্রশ্নের যুক্তিসঙ্গত উত্তর চাই, এড়িয়ে গেলে চলবে না। দশে দশ পাওয়ার মতো উত্তরই যদি না লেখা যায় তা হলে পরীক্ষাটাই তো অবৈজ্ঞানিক।

এত দিন পরে গ্রন্থন ৯৯ পেয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে, বাংলায়ও দশে দশ পাওয়া যায়। বিজয়ী গ্রন্থন তার পরীক্ষককেও জয়ী করেছে। বিশ্বখ্যাত সত্যেন্দ্রনাথ অঙ্কে ১০০-য় ১১০ পেয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন সবাই জানেন, কিন্তু সব প্রথা ভেঙে যিনি তাঁকে ওই নম্বর দিয়েছিলেন, তাঁর কথা ক’জন বলেন? গ্রন্থনের বাংলা খাতারও যিনি মূল্যায়ন করেছেন, তাঁর ঔদার্য এবং মেরুদণ্ডকে অবশ্যই কুর্নিশ জানাতে হবে। সততা এবং নিষ্ঠা অক্ষুণ্ণ রেখে অন্য এক পরীক্ষক গ্রন্থনকে একই উত্তরে দশে আট দিতেই পারতেন, কিন্তু আট আর দশের এই ব্যবধান সাহিত্যের ছাত্রদের আর কত কাল ব্রাত্য করে রাখবে? নম্বর দেওয়ার এই প্রথাটি যে কত অবৈজ্ঞানিক সে বিষয়ে শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক রাজকুমার চক্রবর্তীর একটি ভাষণের কথা মনে পড়ছে। সেনেটের এক সভায় তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছিলেন, সকালে বাজারে যাওয়ার আগে দেখা খাতার সঙ্গে বাজার থেকে ফিরে দেখা খাতার নম্বর কখনও এক হতে পারে না, ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নে তো কখনওই না। বাজারের ব্যাগ আর প্রথাগত সংস্কারের দাপট অগ্রাহ্য করে গ্রন্থনের বাংলা খাতার পরীক্ষক যে অর্গলটি খুলে দিলেন, সে জন্য তাঁকে ধন্যবাদ।

অরুণকান্তি দত্ত শিবপুর, হাওড়া

অসভ্যতা

নব্বই-ঊর্ধ্ব বড়দা প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে, লাঠি নিয়ে ধীরে ধীরে রাস্তার ধার ঘেঁষে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ পিছন দিক থেকে সাইকেলে চাপা এক তরুণ বড়দার মাথায় সপাটে চড় মেরে বলল, ‘‘কী রে বুড়ো, কবে ঘাটে যাবি?’’ হতবাক বড়দার মুখে কোনও কথা বেরোল না। একটি ১৪-১৫ বছরের তরুণের কাছে এই ধরনের আচরণ কি প্রত্যাশিত!

নন্দগোপাল ধর মিত্রবাগান, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ই-মেলে পাঠানো হলেও।

Shujaat Bukhari Murder India Pakistan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy