Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: খেলার স্পিরিট কই

কিছু দিন আগে বিরাট কোহালির ঔদ্ধত্য সম্পর্কে নাসিরুদ্দিন শাহ খুব সঙ্গত ভাবে নিন্দাসূচক টুইট করেছিলেন।

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

আইপিএল-এর একটি ম্যাচে (রাজস্থান রয়্যালস বনাম কিংস ইলেভেন পঞ্জাব) অশ্বিনের মতো বিখ্যাত ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটার যা করলেন, তাতে ক্রিকেটের মাথা হেঁট হয়ে গেল। ক্রিকেট নাকি ভদ্রলোকের খেলা। কিন্তু ইদানীং কিছু ভারতীয় ক্রিকেটার মাঠে যে অঙ্গভঙ্গি করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী খেলোয়াড়ের উদ্দেশে, তাতে তো কথাটা ঠিক মনে হয় না। কিছু দিন আগে বিরাট কোহালির ঔদ্ধত্য সম্পর্কে নাসিরুদ্দিন শাহ খুব সঙ্গত ভাবে নিন্দাসূচক টুইট করেছিলেন। এ বার লোকে টিভিতে, ইউটিউবে বহু বার দেখবেন, অশ্বিন কী ভাবে জস বাটলারকে আউট করলেন। ধারাভাষ্যকাররা অবধি প্রথমে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। অশ্বিন আইন ভাঙেননি, এবং সেটাই আরও ভয়াবহ। আইনে না থাকলে আমার ভদ্র আচরণ করার বাধ্যতা নেই! নিয়ম করে দিতে হবে, তবে আমার সৌজন্য থাকবে! খেলায় হারজিত আছে, কিন্তু সেই উত্তেজনার মধ্যেও যাঁরা সৌজন্য ও সৌহার্দ্য বজায় রেখে খেলেন, তাঁদেরই আছে প্রকৃত স্পোর্টসম্যান স্পিরিট। শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে স্পোর্টসম্যান হয়?

রমেশ সাহা

কলকাতা-৩৩

শিক্ষিকাদের কষ্ট

প্রায় হাজারখানেক শিক্ষিকাদের দৈনন্দিন জীবনের অমানুষিক নিত্য যন্ত্রণার কথা তুলে ধরছি। প্রথমে আমার সমস্যার কথা বলব। আমি গত ০৪-০৭-২০১১ সালে বাঁকুড়া জেলা থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের একটি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসাবে যোগদান করি। বিদ্যালয় থেকে বাড়ির দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিমি। শুধুমাত্র দূরত্বের কারণে বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা এবং পরিবারের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হচ্ছি। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার জন্য মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। যার ফলে শ্রেণিকক্ষে নির্ধারিত ক্লাসগুলিতে মনোযোগ সহকারে পাঠদান করতে ব্যর্থ হচ্ছি। বর্তমানে আমি অন্তঃসত্ত্বা। কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে ‘হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি’র অবস্থায় বাড়ি থেকে ২৫০ কিমি দূরে একা পড়ে আছি। দূরত্বের কারণে পরিবারের লোকজনের পরিচর্যা থেকে বঞ্চিত।

আবার নন্দীগ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুরের এক জন শিক্ষিকা, যিনি বর্ধমানের বাসিন্দা— দেড় বছরের ছোট্ট বাচ্চাকে নিয়ে হাজার সমস্যার মধ্যেও থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। স্বামী ব্যবসার সূত্রে বাইরে থাকেন। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তিনি গল ব্লাডার স্টোনের সমস্যায় ভুগছেন। দূরত্বের কারণে বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি, বাবা-মা এবং পরিবারের প্রতি কোনও দায়িত্ব ও কর্তব্যপালনে তিনি অক্ষম।

এ বার আসি কলকাতা, সোনারপুরের বাসিন্দা এক জন শিক্ষিকার সমস্যার কথায়। তিনি বাঁকুড়ার শালতোড়ার একটি গ্রামের বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। বিদ্যালয় থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব ৩০০ কিমি। তাঁর ৬ বছরের ছোট্ট মেয়ে আছে। বাচ্চাটি ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের শিকার। দুর্ভাগ্যবশত তিনি বাচ্চাটিকে তাঁর কাছে রাখতে পারেন না। কারণ তিনি যেখানে থাকেন, সেখানকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও শিশু বিশেষজ্ঞ এবং অক্সিজেন সিলিন্ডারের কোনও ব্যবস্থা নেই। এবং তিনি নিজেও গ্যাসট্রোএন্টারাইটিস-এর সমস্যায় দীর্ঘ দিন ধরে ভুগছেন।

এ রকম আরও অনেক শিক্ষিকা নানান সমস্যার সম্মুখীন হন নিত্য দিন। এমতাবস্থায় আমরা শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক থেকে ক্লান্ত। আমরা শিক্ষিকারা যাঁরা ২০১১ সাল পর্যন্ত নিয়োগ পেয়েছি, তাঁরা অনেকেই নিজ নিজ জেলার বিদ্যালয়ে যুক্ত হতে পারিনি। যার ফলে স্কুল থেকে আমাদের বাড়ির দূরত্ব ২৫০-৩০০ কখনও বা ৫০০ কিমিরও বেশি!

শিক্ষিকাদের এই গুরুতর সমস্যার কথা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য চিঠি, ফ্যাক্স এবং ইমেলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। গত ৪-৬-২০১৮ তারিখে হাজারেরও বেশি শিক্ষিকার স্বাক্ষর সংবলিত একটি চিঠি কালীঘাট মিলনী সঙ্ঘে জমা করা হয় এই মর্মে যে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মহিলাদের সাধারণ বদলির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন।

২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন শিক্ষকশিক্ষিকা বিশেষ বদলির আবেদনপত্র জমা দেন। তাঁদের বেশির ভাগই বদলি হয়ে গিয়েছেন। আবার আমরা অনেকেই এই আবেদনপত্র জমা দিতেই পারিনি নানা কারণে। বেশির ভাগ জমা দিতে পারেননি এনওসি-র কারণে। বর্তমানে বিশেষ কারণবশত এই আবেদনপত্র জমা নেওয়া স্থগিত রয়েছে।

২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেন যে দূরবর্তী শিক্ষিকাদের (বিশেষ করে যাঁরা এক জেলার বাসিন্দা হয়েও, অন্য জেলায় কর্মরতা) নিজ নিজ জেলার বদলি করা হবে এবং শিক্ষিকাদের বদলির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এই বিষয়টি ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৬ মাস অতিক্রান্ত হলেও এই ব্যাপারে কোনও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি।

আমরা শিক্ষিকারা (মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক) চাই, স্বচ্ছ ভাবে ২০১৪ সালের মতো একটি সাধারণ বদলি চালু হোক, যেখানে মহিলাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হোক (বিশেষ করে, যাঁরা এক জেলায় থাকেন কিন্তু অন্য জেলায় কর্মরতা)।

নবনীতা খাঁ

সাহানাপল্লি, কেন্দুয়াডিহি, বাঁকুড়া

মিল কর্মী

আমি এক জন মিড ডে মিল কর্মী। আমরা মোট ১১ জন এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে একটি বিদ্যালয়ে কাজ করি। এই বিদ্যালয়ে মোট আটটি বিদ্যালয়ের মিড ডে মিল রান্না করা হয়। আমাদের সময় দিতে হয় প্রায় চার ঘণ্টা। এ ছাড়া প্রায় ১০০০ জন ছাত্রছাত্রীকে আমাদের খাবার দিতে হয়। আমাদের বেতন মাসিক ১৫০০ টাকা। তাও আবার দশ মাস। দু’মাস আমরা বেতন পাই না। এই বেতন কি আমাদের পরিশ্রমের মাপকাঠিতে এবং বর্তমানের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ঠিক? কেন্দ্রীয় সরকার তো সংগঠিত শ্রমিকদের জন্য পেনশন প্রকল্প চালু করেছে, আমরা যারা চল্লিশোর্ধ্ব আছি, তারা এর আওতায় নেই। আমরা প্রায় ন’বছর ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত আছি। কিন্তু সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই।

বিনিতা রত্না মণ্ডল

কলকাতা-৩৪

ট্রেনে ইঁদুর

গত ১২-০৩-২০১৯ তারিখে মালদহ টাউন স্টেশন থেকে শিয়ালদহগামী ‘গৌড় এক্সপ্রেস’-এ যাত্রাকালীন যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেই প্রসঙ্গে এই চিঠি।

আমি এক জন বরিষ্ঠ মহিলা নাগরিক। আমার সঙ্গে সে দিন পরিবারের আরও তিন জন এবং একটি এক বছর দু’মাসের শিশু ছিল। কামরায় উঠে বসামাত্র পায়ে একটি কাঁটা ফোটার মতো তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করি এবং কিছু ক্ষণের মধ্যে ক্ষতস্থান দিয়ে রক্ত বার হতে লাগল। সহযাত্রীদের পরামর্শে টয়লেটে গিয়ে পা ভাল করে ধুয়ে আমাদের সঙ্গে থাকা ডেটল লাগালাম। জানতে পারলাম, অনেকে কামরায় একটি বড় ইঁদুরকে ঘোরাফেরা করতে দেখেছে, পায়ে ইঁদুরেরই কামড়। কামরায় কর্তব্যরত টিকিট পরীক্ষক সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা শুনে মোবাইলে কোনও ঊর্ধ্বতন অফিসারকে এক জন ডাক্তার পাঠাতে বললেন, অবশ্য ডাক্তার সে দিন আসেননি। তখন তিনি আমাকে বার বার ১৮২ নম্বরে ফোন করতে বলায় আমি বেশ কয়েক বার ওই নাম্বারে ফোন করি, রিং হলেও কেউ রিসিভ করেনি। এর পর শিশুটিকে নিয়ে ওর মা লোয়ার বার্থে শুয়ে পড়লে আবার সেই ইঁদুর বার্থে উঠে পড়ে এবং বাচ্চাটিকে নিয়ে বাবা-মা সাইড আপার বার্থে চলে যায়। অতঃপর আলো জ্বালিয়ে সারা রাত যাত্রীরা ঘুম বাদ দিয়ে পাহারা দিতে লাগল। অনেক চিৎকার-চেঁচামেচির পরে কেউ এক জন এসে একটি ইঁদুর মারার কল বসিয়ে দিয়ে যায়। এই ভাবেই সেই ভয়ঙ্কর রাত কাটে আমাদের।

কৃষ্ণা সমাজদার

কলকাতা-৫৫

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Sportsman Spirit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE