Advertisement
E-Paper

বিষকুম্ভ

সেই দৈনন্দিনতা বলে: কাশ্মীর উপত্যকায় গুলি চলিবে, কখনও জঙ্গিরা মরিবেন, কখনও জওয়ানরা মরিবেন

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২৭
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

ঘন বরফাবৃত কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর গুলিতে সাত জন নিরীহ সাধারণ মানুষের মৃত্যু হইল— ইহাকে কখনওই বিশেষ সংবাদ বলা চলে না। ইহা নেহাতই ভারতীয় বাস্তবের দৈনন্দিনতা। সেই দৈনন্দিনতা বলে: কাশ্মীর উপত্যকায় গুলি চলিবে, কখনও জঙ্গিরা মরিবেন, কখনও জওয়ানরা মরিবেন, আর সেই মরণপ্রবাহের ফাঁকেফোকরে মৃত্যুর কোলে ঢলিয়া পড়িবেন একের পর এক সাধারণ অসামরিক মানুষ, সেনা বা জঙ্গি কোনও পক্ষের প্রতিই যাঁহাদের সাগ্রহ সমর্থন নাই, যাঁহারা কেবল পরিবার পরিজনকে লইয়া শান্তিতে বাঁচিতে চাহিয়াছিলেন, অর্থাৎ বাঁচিতে চাহিবার স্পর্ধা দেখাইয়া মারাত্মক ভুল করিয়াছিলেন। মধ্য ডিসেম্বরে এমনই কয়েকটি সন্তপ্ত পরিবারকে ঘিরিয়া গোটা পুলওয়ামায় নামিয়া আসিল ভারী শোকের পর্দা। ঠিক একই ছবি দেখা গিয়াছিল নভেম্বরে শোপিয়ানে আট অসামরিক কাশ্মীরির মৃত্যুর পর এবং অক্টোবরে কুলগামে সাত অসামরিক কাশ্মীরির মৃত্যুর পর। আকস্মিক আঘাতে হতচকিত পরিবারগুলি কিছুতেই বুঝিয়া উঠিতে পারেন না, কী তাঁহাদের অপরাধ, কেন হঠাৎ কাশ্মীরের নামে ভারত ও পাকিস্তানের তীব্র ঘৃণা-বিসংবাদের দাম তাঁহাদের মতো মানুষগুলির জীবন দিয়া চুকাইতে হইতেছে। তাঁহাদের এই বিভ্রান্ত অস্থিরতার সংবাদ দিল্লি দরবারে পৌঁছাইতেছে কি না জানা নাই, কিন্তু তাহা আন্তর্জাতিক সীমান্ত ছাড়াইয়া তরঙ্গ তুলিয়াছে। গত দুই বৎসরে উপত্যকায় যে ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও হননের মাত্রা সীমা ছাড়াইয়াছে, তাহাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত রিপোর্টেও কাশ্মীর লইয়া উদ্বেগ স্পষ্ট। বিশেষ সংবাদ হইল, এই বারের এক নিহত যুবক ইন্দোনেশিয়াবাসী ও ইন্দোনেশীয় নাগরিকের স্বামী হইবার কারণে জাকার্তাতে কাশ্মীরে মানবাধিকার হনন বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ উত্তাল হইতে দেখা গিয়াছে। ইহার পরও দিল্লিতে হেলদোল থাকিবে না?

দিল্লির হেলদোল থাকুক না থাকুক, দিল্লির দায়িত্ব বিরাট। ইতিমধ্যে কাশ্মীরের রাজনীতির পালাবদলে দিল্লির দায় ও দায়িত্ব আরও প্রত্যক্ষ হইয়াছে। রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের হাতে সরাসরি ক্ষমতা যাইবার পর হইতে জঙ্গি কার্যকলাপ ও সামরিক দমনপীড়ন পাল্লা দিয়া বাড়িতেছে। অসামরিক মানুষের মৃত্যুর পর প্রতি ক্ষেত্রেই সেনাবাহিনীর পক্ষ হইতে অজুহাত শোনা গিয়াছে— ভিড় তাহাদের দিকে ধাবিয়া আসাতেই নাকি সেনা গুলি চালাতে বাধ্য হইয়াছে। এই যুক্তি কোনও মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভিড়ের কাজই ধাবিয়া আসা, এবং সেনাবাহিনীর কাজ, একটিও অসামরিক মানুষের যাহাতে প্রাণ না যায়, তাহা নিশ্চিত করা। জঙ্গি দমন যে পদ্ধতিতে ঘটে, এবং সাধারণ মানুষের ভিড় যে পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাহার মধ্যে পার্থক্য রাখিবার কাজটি মানবাধিকারের প্রাথমিক পাঠ।

দিল্লি সরকারের নির্দেশে কী ভাবে সেনা বিপথচালিত হয়, তাহার উদাহরণ হুরিয়ত মিছিল বিষয়ে এই বারের সরকারি ঘোষণাটিতে। মৃত্যুমিছিলের প্রতিবাদে মিছিলের ডাক দিয়াছিলেন হুরিয়ত নেতারা। এমন ঘটনার পর এই ধরনের মিছিল অপ্রত্যাশিত নয়, অস্বাভাবিকও নয়। অথচ দিল্লির নির্দেশানুযায়ী সেনাবাহিনীর ঘোষণা, কোনও কাশ্মীরি যেন মিছিলে সাড়া না দেন। পিডিপি একটি প্রতিবাদ মিছিল করিলে প্রাক্তন বিধায়কও গ্রেফতার হন। সরকারের তরফে এমন অতিপ্রতিক্রিয়া কাশ্মীরি মানুষের মন দ্বিগুণ বিষাইয়া দিবার জন্য যথেষ্ট। কাশ্মীর বাস্তবিক এখন একটি বিষকুম্ভে পরিণত। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ স্থানীয় মানুষের বিরুদ্ধে যাইবে, এবং স্থানীয় মানুষ প্রতিবাদ দেখাইলেই তিনি জঙ্গিদের সহিত সমপদবাচ্য হইবেন। মোদী সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিক্ষীণতা যে কোন আশঙ্কাময় ভবিতব্যে কাশ্মীরকে টানিয়া লইয়া যাইতেছে, ভাবিলে শিহরন হয়।

Delhi Kashmir Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy