Advertisement
E-Paper

সত্য সে যে সুকঠিন

নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি এমন উক্তি না করিলেই তাঁহার এবং তাঁহার প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা সুরক্ষিত থাকিত। এই বিষয়ে প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনারের অভিমত যুক্তিসঙ্গত।

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০০
নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশন।

নিয়োগ বিধিসঙ্গত নহে— রাজ্যের শাসক দলের এই অভিযোগ কমিশনের বিচার্য। লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফায় পশ্চিমবঙ্গের ৯২ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা প্রয়োজন— বিশেষ পর্যবেক্ষকের এই অভিমত কতটা বাস্তবানুগ, শতাংশটি ৯২ অপেক্ষা কম না বেশি হওয়া উচিত, তাহা লইয়াও তর্ক চলিতে পারে। এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই শিরোধার্য, কিন্তু প্রশ্ন তুলিবার অধিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় থাকিয়াই যায়।

অশান্তি বা হিংস্র কার্যকলাপের মাপকাঠিতে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী পরিস্থিতি দশ-পনেরো বছর আগেকার বিহারের সহিত তুলনীয়— এমন মন্তব্য নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষকের পক্ষে শোভন কি না, সেই প্রশ্নও নিশ্চয়ই অসঙ্গত নহে। তৃণমূল কংগ্রেস ইহাতে পশ্চিমবঙ্গের অপমান দেখিয়াছে, তাহা হয়তো রাজনৈতিক কৌশলমাত্র। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি এমন উক্তি না করিলেই তাঁহার এবং তাঁহার প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা সুরক্ষিত থাকিত। এই বিষয়ে প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনারের অভিমত যুক্তিসঙ্গত।

কিন্তু তাহার পরও প্রশ্ন থাকিয়া যায়। শ্রীনায়েক যাহা বলিয়াছেন, তথ্য বা বাস্তব হিসাবে তাহাকে উড়াইয়া দেওয়া চলে কি? নির্বাচনী হিংসায় এক কালে, কেবল বিহার নহে, উত্তর ভারতের একাধিক রাজ্য রীতিমতো অভ্যস্ত ছিল। বোমা, গুলি, বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, বিশেষ এলাকার বা জনগোষ্ঠীর মানুষকে ভোট দিতে না দেওয়া— আকছার চলিত। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা এখন মোটের উপর অতীত। বহু রাজ্যেই, বিশেষত মোদী জমানায় নির্বাচনী অনাচার অন্য রূপ ধারণ করিয়াছে, যথা, যথেচ্ছ টাকা ও অন্যান্য উৎকোচ বিতরণ, সরাসরি প্রলোভন ও হুমকি, কুৎসিত এবং হিংস্র নির্বাচনী প্রচার, ধর্ম হইতে সেনাবাহিনী পর্যন্ত সমস্ত প্রকরণের অপব্যবহার। কিন্তু পুরানো মডেলের নির্বাচনী হিংসার প্রকোপ লক্ষণীয় ভাবে কমিয়াছে। বিচ্ছিন্ন এবং বিক্ষিপ্ত অশান্তি হয় নিশ্চয়ই, কিন্তু তাহা বিচ্ছিন্ন এবং বিক্ষিপ্তই। গত বছরেই বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হইয়াছে, রীতিমতো দ্বন্দ্বসঙ্কুল, উত্তেজনাময় নির্বাচন, কিন্তু প্রচার এবং ভোটের মরসুমে গুলি, বোমা, বুথ দখল ইত্যাদির অভিযোগ বিশেষ শোনা যায় নাই। এই বিষয়ে ভারতের ভোটচিত্রে কিছুটা উন্নতি ঘটিয়াছে।

ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। এই রাজ্যে এখনও ভোট মানেই হিংসা, অথবা হিংসার ভয়। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের জনস্মৃতি এখনও তাজা। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসনে প্রার্থী, এবং প্রায় সম্পূর্ণত শাসক দলের প্রার্থী, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হইতেছেন, এই পরিণতি স্বাভাবিক হইতে পারে না। এই লোকসভা নির্বাচনেও হিংসার দীর্ঘ ছায়া পড়িয়াছে। চোপড়ার কাহিনি সর্বজনবিদিত। কিন্তু হিংসা কেবল আগুন এবং রক্তের রূপ লইবে, তাহা নহে। ভীতিপ্রদর্শনও হিংসার একটি গুরুতর রূপ। এবং পশ্চিমবঙ্গের বহু এলাকায় ভীতিপ্রদর্শনের বিস্তর অভিযোগ। পশ্চিমবঙ্গে সর্বত্র ভোটদাতারা নিশ্চিন্ত মনে শান্তিতে আপনার ভোট আপনি দিয়া আসিবেন, সেই ভরসা আজও দূর অস্ত্। বামফ্রন্ট জমানাতেও ভোটপর্বে প্রত্যক্ষ হিংসা এবং প্রচ্ছন্ন ভীতির প্রবল প্রকোপ ছিল। কিন্তু তাহার দায় যেমন সেই জমানার শাসকদের, বর্তমান অশান্তির দায়ও তেমনই বর্তমান শাসকদেরই স্বীকার করিতে হইবে। এবং এই জমানাতেও প্রশাসন যখন দলের বশীভূত, অতএব শেষ বিচারে নির্বাচনী অশান্তির দায় বর্তায় দল তথা দলীয় নেতৃত্বের উপরেই। অন্য রাজ্যে যে অনাচার বন্ধ হইয়াছে, পশ্চিমবঙ্গে আজও তাহা চলিতেছে— ইহাতেই পশ্চিমবঙ্গের প্রকৃত অপমান। রাজ্যের শাসকরা যদি সত্যই সেই অপমান ঘুচাইতে চাহেন, তবে অবিলম্বে যথার্থ মুক্ত এবং অবাধ নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গড়িয়া তুলিতে তৎপর হউন। তাহা হইলেই দেশে ও দুনিয়ায় পশ্চিমবঙ্গের সুনাম হইবে।

Lok Sabha Election 2019 Election Commission Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy