যোগী আদিত্যনাথ ও মায়াবতী। —ফাইল চিত্র।
নিয়মভঙ্গটাই যখন নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়, তখন থমকে দাঁড়াতে হয় নিশ্চিত ভাবেই। ভেবে দেখার সময় আসে, কোথাও একটা বড় ভুল হয়ে যাচ্ছে না তো? দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভোটের ময়দানে রাজনীতিকদের বেপরোয়া বাণীর ফোয়ারা কী পর্যায়ে গিয়েছে, তা সোমবার সুপ্রিম কোর্টের তিরস্কারে স্পষ্ট। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে ধমকের সুরে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ভোটের মরসুমে রাজনীতিকদের ঘৃণা-ভাষণের যে প্রতিযোগিতা চলছে, তাতে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন।
নির্বাচনী ময়দানে এখন এ বলে আমায় দ্যাখ ও বলে আমায়। ঘৃণা-ভাষণ এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, প্রায় বেনজির ভাবেই নির্বাচন কমিশন শাস্তি দিয়েছে দুই বৃহৎ নেতা যোগী আদিত্যনাথ ও মায়াবতীকে। নির্বাচনী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কমিশন। যোগীর ক্ষেত্রে তিন দিন আর মায়াবতীর দুই। এঁদের তো শাস্তি হল, কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় জাগছে নিশ্চিত ভাবেই। কারণ, ভারতের বর্তমান নির্বাচনী ভূমির অন্তরাত্মায় এখন শুধুই ঘৃণা, শুধুই বিভাজন, শুধুই নানান বিদ্বেষের সুর। কখনও ধর্মের নামে, কখনও জাতি, কখনও বা পুরুষতান্ত্রিকতার চিরাচরিত সুরে ধিক্কারযোগ্য মন্তব্য বেরিয়ে আসছে বিভিন্ন নেতানেত্রীর মুখে। বিজেপি-র গিরিরাজ সিংহ যদি ধর্মের নামে কুকথার স্রোত বইয়ে দেন, তো সমাজবাদী পার্টির নেতা আজম খান সেই কুবাক্যের প্রতিযোগিতায় আরও এক ধাপ এগিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী জয়াপ্রদার উদ্দেশে অধিকতর ধিক্কারযোগ্য অন্য এক মন্তব্য করেন। তখনই মেনকা গাঁধীর মুখে কখনও মুসলিমদের উদ্দেশে কঠোর ‘সতর্কবাণী’ (ভোট না দিলে পরে আর কাজ চাইতে এসো না কিন্তু) বেরিয়ে আসে। অথবা বেরিয়ে আসে, ভোটের সঙ্গে সমানুপাতিক ভাবে উন্নয়নের ‘এবিসিডি মডেল’-এর কথা। অর্থাৎ যেখান থেকে বেশি ভোট পাওয়া যাবে, উন্নয়নের কাজ সেখানেই বেশি হবে।
গণতন্ত্রের এমন নির্লজ্জ অপমান খুব কমই দেখেছি আমরা। এ ভাবে চলতে থাকলে খুব দ্রুত সংবিধানকে শিকেয় তুলে এক আজব রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়ে যাব আমরা, যে রাষ্ট্র শিবঠাকুরের আপন দেশ, আইনকানুনের বালাই থাকে না সেখানে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আরও পড়ুন: ঘৃণা ভাষণ: যোগী-মায়াবতীকে নির্বাচন কমিশনের শাস্তি, নিষেধাজ্ঞা জারি প্রচারে
আরও পড়ুন: ‘যেমন ভোট পাব, তেমন কাজ’! উন্নয়নের ‘এবিসিডি’ ফর্মুলা দিয়ে বিতর্কে মেনকা
নিয়মভঙ্গটাই রীতি করে নিই যদি, তা হলে এ রকমই বেলাগাম মন্তব্যের জন্ম হয় যখন তখন, যেখানে সেখানে। দ্রুত রাশ টানার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। না হলে কিন্তু সেই দিন আর বেশি দূর নয়, যখন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গল্প শুনবে, এই ভারতে এক দিন গণতন্ত্রের চর্চা ছিল, ছিল নিবিড় ভাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy