—ফাইল চিত্র।
হিংসা এবং রক্তপাতে মাথা হেঁট হয়েছে আগের দু’দফায়। বর্ধিত নিরাপত্তা এবং কঠোরতর নজরদারির মাঝে আজ তৃতীয় দফার ভোট। কিন্তু ভোট দিতে যাওয়ার আগে আজ বেশ কয়েকটা প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়ানো প্রয়োজন। সব পক্ষের জন্যই বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে। সে সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা যদি আমরা না করি, তা হলে পরিস্থিতি বদলানোর সম্ভাবনা কমই।
আজ ৯২ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা। নির্বাচন কমিশন অন্তত তেমনই জানিয়েছে। বাংলার বর্তমান পরিস্থিতিকে এক দশক আগের বিহারের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছেন কমিশনের পাঠানো বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক। কমিশনের এই পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষিতেই ৯২ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত যে নেওয়া হয়েছে, সে কথা বলাই বাহুল্য।
রাজ্যের শাসক দল কিন্তু অখুশি। নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের মন্তব্যে অখুশি তো বটেই। অখুশি নির্বাচনী বন্দোবস্ত নিয়েও। সাত দফায় নির্বাচন করানো বা রাজ্য পুলিশে ভরসা না রেখে সিংহ ভাগ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত বা বাংলার বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে দশ বছর আগের বিহারের পরিস্থিতির তুলনা করা— এই সবেতেই বাংলার অপমান দেখছে রাজ্যের শাসক দল।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
রাজ্যের শাসক দল সর্বাংশে ভুল দেখছে, এমন হয়তো নয়। নির্বাচন কমিশনের পাঠানো বিশেষ পর্যবেক্ষকের মন্তব্যে কেউ অপমানিত বোধ করতেই পারেন বা কারও ভাবাবেগে আঘাত লাগতেই পারে। অনিচ্ছাকৃত ভাবেই হয়তো পর্যবেক্ষকের ওই মন্তব্য কারও পক্ষে রাজনৈতিক লাভদায়ী হয়ে উঠতে পারে। অতএব ওই মন্তব্য অজয় নায়েক না করলেই ভাল করতেন। পরবর্তী দিনগুলোয় কমিশনের কর্তারা ওই রকম মন্তব্য এড়িয়ে চললেই বোধ হয় ভাল করবেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কিন্তু প্রশ্নের মুখোমুখি তো রাজ্যের শাসক দলকেও দাঁড়াতে হবে। নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের কোনও মন্তব্যকে অনাকাঙ্খিত বা অগ্রহণযোগ্য মনে হতে পারে। কিন্তু সাত দফায় নির্বাচন করানো বা ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া বা অবাধ-শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সুনিশ্চিত করার জন্য গৃহীত কোনও পদক্ষেপে বাংলার অপমান কী ভাবে হচ্ছে? কমিশন কঠোর নিরাপত্তায় এবং নজরদারিতে ভোট করাতে চাইলে বাংলার মানুষ অপমানিত বোধ করবে, এমনটা কারও কেন মনে হচ্ছে?
আরও পড়ুন: ৯২ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আজ তৃতীয় দফার ভোটে বাংলা
বাংলা যেন সেই বিহার, মন্তব্য বিশেষ পর্যবেক্ষকের, অপসারিত মালদহের এসপি অর্ণব ঘোষ
ভোটগ্রহণের দিনে যখন বাংলার বুকে মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত করা হচ্ছিল সাংবাদিককে, তখন অপমানিত লাগছিল না? কোচবিহারের কোনও এক গ্রামে সাধারণ নাগরিকরা ছুটে এসে যখন মারধরের চিহ্ন দেখিয়ে বলছিলেন যে, তাঁদের ভোট দিতে যেতেই দেওয়া হচ্ছে না, তখন সেই অসহায় কণ্ঠস্বরে বাংলার অপমান হচ্ছিল না? গণতন্ত্রের বৃহত্তম উৎসব যখন গুলি-বোমার তাণ্ডবে রক্তাক্ত হয়ে উঠছিল উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায়, তখন বাংলার অপমান হচ্ছিল না?
মান-অপমান বোধের প্রকাশেও তো একটু যৌক্তিকতা থাকা দরকার। আবার বলছি, অজয় নায়েকের মন্তব্যে কেউ অপমানিত বোধ করলে খুব বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু ওই মন্তব্যে যাঁরা অপমানিত বোধ করেন, ভোটের দিনে গণতন্ত্রের ভূলুণ্ঠন দেখে তাঁরা কী ভাবে অবিচল থাকেন, তা দুর্বোধ্য ঠেকে।
আজ তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হোক, সর্বাগ্রে কাম্য এটাই। পরবর্তী ধাপগুলোও নির্বিঘ্নে মিটুক, কাম্য তা-ও। নির্বাচন কমিশনকেই সে সব নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু তা করতে গিয়ে পর্যবেক্ষকরা বা কমিশনের আধিকারিকরা যাতে অনাকাঙ্খিত মন্তব্য না করেন, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে কমিশনকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy