Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

এমন উচ্চশিক্ষার কী মূল্য প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী?

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এই প্রথমবার লোকসভা ভোটে লড়ছেন না। এর আগেও একাধিকবার লড়েছেন। মনোনয়ন পত্র দাখিল করার সময়ে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া তথ্যে আগে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৩৬
Share: Save:

আহা কী সংবেদনশীলতা! রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ত্রুটি খুঁজে পাওয়া মাত্রই তীক্ষ্ণ বাণে বিদ্ধ করার সুযোগ হাতছাড়া করলেন না কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র। নির্বাচনী মরসুমে এই সক্রিয়তার বা তৎপরতার প্রশংসা করবেন না, এমন কে আছেন? এরকমই বোধহয় ভেবেছিলেন প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী। কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতা সংক্রান্ত বিতর্কে স্মৃতি ইরানিকে এক ধাক্কায় ধরাশায়ী করে দিতে গিয়ে নিজের সংবেদনশীলতা এবং সামাজিকতার বোধ নিয়েই সংশয় তৈরি করে দিয়েছেন কংগ্রেস নেত্রী।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এই প্রথমবার লোকসভা ভোটে লড়ছেন না। এর আগেও একাধিকবার লড়েছেন। মনোনয়ন পত্র দাখিল করার সময়ে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া তথ্যে আগে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। তবে তিনি আদৌ স্নাতক কি না, তা নিয়ে বিতর্ক ছিল। এ বার মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যে তথ্য নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, তিনি সত্যিই স্নাতক নন।

স্নাতক না হয়েও কেন নিজেকে স্নাতক হিসেবে দাবি করেছিলেন, সে প্রশ্ন অত্যন্ত গুরুতর। এই মিথ্যাচার কোনও ভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়। স্মৃতি ইরানি অন্যায় করেছিলেন, এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই। এই অন্যায়ের জন্য যদি কোনও শাস্তির প্রতিবিধান থাকে, তাহলে স্মৃতি ইরানির শাস্তি হোক। কিন্তু অন্যায়টা সামনে আসার পরে স্মৃতির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যে পন্থায় তাঁকে আক্রমণ করলেন, তা সুস্থ রুচির পরিচয় দেয় না। সামাজিকতার বোধ কম থাকলেই এই ধরনের আক্রমণে মেতে ওঠা যায়।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আরও পড়ুন: ‘কিঁউকি মন্ত্রীভি কভি গ্র্যাজুয়েট থি’, স্মৃতিকে কটাক্ষ কংগ্রেসের, গান বাঁধলেন প্রিয়ঙ্কা

কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী ব্যঙ্গাত্মক গান বানিয়ে ফেলেছেন স্মৃতি ইরানিকে নিয়ে। ‘কিঁউকি সাস ভি কভি বহু থি’ নামের একটা জনপ্রিয় হিন্দি ধারাবাহিকের অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে বিখ্যাত হয়েছিলেন স্মৃতি ইরানি এক সময়ে। সেই ধারাবাহিকের টাইটেল সং-কে নকল করে প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী ব্যঙ্গাত্মক গান গেয়েছেন। ‘কিঁউকি মন্ত্রীভি কভি গ্র্যাজুয়েট থি’ বলে স্মৃতিকে খোঁচা দিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা।

প্রথমেই প্রশ্ন ওঠে, জনপ্রিয় হিন্দি ধারাবাহিকটায় অভিনয় করে স্মৃতি ইরানি কি কোনও অপরাধ করেছিলেন? ওই ধারাবাহিকে একটা ইতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বলে পরবর্তীকালে তাঁর যে কোনও নেতিবাচক কাজকে রুচি বহির্ভূত ভাবে কটাক্ষ করার অধিকার কি পেয়ে গিয়েছেন অন্যেরা? নিশ্চয়ই তা নয়। তাহলে ওই ধারাবাহিকের গানের প্যারডি বানিয়ে স্মৃতিকে ব্যঙ্গ করার পথে হাঁটলেন কীভাবে প্রিয়ঙ্কা? শিল্পী স্মৃতিকে রাজনীতিক স্মৃতির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা কি আদৌ উচিত হল?

দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, স্নাতক হওয়া কি রাজনীতি করার জন্য বা জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক এ দেশে? স্নাতক না হতে পারা কি অপরাধ? যাঁরা স্নাতক নন এ দেশে, তাঁরা যদি কখনও নিজেদের স্নাতক বলে দাবি করে পরে সে দাবি প্রত্যাহার করে নেন, তাহলে কি তাঁদের ওই বিষয়টি নিয়ে হইহই করে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করার অধিকার পেয়ে যান স্নাতকরা বা স্নাতকোত্তররা বা তার চেয়েও বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্নরা?

তৃতীয় প্রশ্ন হল, এ দেশের নাগরিকদের মধ্যে কতজন স্নাতক? ক’জন স্নাতক হওয়ার সুযোগ পান? স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার মতো অনুকূল পরিবেশ-পরিস্থিতি কি প্রত্যেকের জন্য তৈরি করতে পেরেছে ভারতীয় রাষ্ট্র? যদি তা না পেরে থাকে, তাহলে দায়টাতো দেশের রাজনীতিকদেরই নিতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বই তো এ রাষ্ট্রের ভাগ্যবিধাতা। সে কথা কি ভুলে গিয়েছিলেন প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী?

দেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি পায় যে সংগঠন, এখনও দেশের সবচেয়ে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের অন্যতম যে সংগঠন, সেই জাতীয় কংগ্রেসের মুখপাত্র আপনি প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে এমন জ্বালাময়ী প্যারডি ভাইরাল করে দেওয়ার আগে দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবেশ, পরিস্থিতি, সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি সম্পর্কে ভেবে নেওয়া আপনার উচিত ছিল না? স্মৃতি ইরানিকে আক্রমণ করার সবরকম অধিকার আপনার রয়েছে প্রিয়ঙ্কা। তাঁর অন্যায়ের তীব্র নিন্দা করার অধিকারও রয়েছে। কিন্তু যে ভঙ্গিতে কটাক্ষ ছুড়লেন আপনি, তা শুধু স্মৃতির জন্য নয়, আরও অনেকের জন্য অপমানজনক হয়ে উঠল। স্বাধীনতার পরে সাত দশক কাটিয়ে এসেও যখন আমরা দেখি, দেশের সব পড়ুয়াকে স্নাতক করে তোলার মতো সক্ষম এখনও হয়ে উঠতে পারেনি আমাদের রাষ্ট্র, তখন আঙুলটা কি দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দিকেই ওঠে না? ভেবে দেখুন প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী। আপনাকে তো উচ্চশিক্ষিত বলেই জানি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE