উন্মত্ত জনতার ইটবৃষ্টি পশ্চিম মেদিনীপুরে। ছবি পিটিআই।
আরও এক বার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলাম আমরা, এই পশ্চিমবঙ্গ। আরও এক বার খেয়াল করে দেখলাম ভারতব্যাপী এই বিপুল ভোটযজ্ঞে হিংসা-তাণ্ডব-অশান্তি-ছাপ্পা-রিগিং এবং সর্বোপরি রক্ত-বোমা-গুলির ইতিহাসটা জড়িয়ে রইল মূলত এই আমাদের সঙ্গেই। মোটের উপর পরিচ্ছন্ন রইল গোটা দেশের ছবি। অন্তত ভোটগ্রহণের দিন, অন্তত ভোটারের ভোট দেওয়ার অধিকার প্রয়োগের পর্যায় পর্যন্ত।
কেন অনুত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছি আমরা? অসহিষ্ণুতার প্রসঙ্গে সবচেয়ে বেশি সরব আমরা, এই রাজ্য, রাজনৈতিক পরিসরে সবচেয়ে বেশি অসহিষ্ণুতার পরিচয় দিচ্ছি কেন? রেনেসাঁর উত্তরাধিকারী আমরা এই বঙ্গীয়কুল কেন গণতান্ত্রিক চর্চাকে নিজেদের রক্তের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে নিতে পারছি না? বিনাযুদ্ধে সূচ্যগ্র মেদিনী না দেওয়ার ঘোষণায় যে বলদর্পী হুঙ্কার থাকে, সেখানে যে অপরিসীম এক ক্ষাত্র তেজেরই দরকার রয়েছে, সে কথা বুঝিনি আমরা কখনই। ক্ষাত্র তেজ হীন কৌশল অবলম্বন করে না। আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি দর্পটুকুই পেয়েছি, হীনবলে বলীয়ান হওয়ার চেষ্টা করেছি এবং মারি অরি পারি যে কৌশলে এই তত্ত্ব অবলম্বন করে মুচকি হেসে ঘনিষ্ঠজনের কাছে ‘কেমন দিলাম’ ভঙ্গি করে মেদিনী জয়ের আনন্দ পেতে চেয়েছি। অন্যায়ের পথে জেতার কৌশলের চেষ্টায় যে একটা হীনম্মন্যতা রয়েছে, তা বোঝার মতন বৌদ্ধিক পরিপক্কতা থেকে আমরা বাঙালি এই মুহূর্তে সহস্র যোজন দূরে। এহেন পরিস্থিতিতে যা হওয়ার তা-ই হল ষষ্ঠ দফার নির্বাচনেও। সাধারণ মানুষের নামে রাজনৈতিক গুন্ডাদের দাপাদাপি চলল, চলল অবাধ হিংসা এবং দিনের শেষে মুচকি হাসি। ওই মুচকি হাসিতে যে পরাজয়ের গন্ধ আছে, ন্যায়ের পথ থেকে সরে যাওয়ার মধ্যে আত্মঅবমাননা আছে, এ কথা আমরা বুঝব কবে? যদি আমরা বুঝতে অসমর্থ থাকি, তা হলে প্রশাসনের মুষ্টিকে আরও বেশি বজ্রকঠোর হতে হয়। দুর্ভাগ্যের কথা, নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামূহিক উপস্থিতিতেও রাজসিক বজ্রনির্ঘোষের সন্ধান পেলাম না। প্রজার স্বর যদি দুর্বৃত্ত লুণ্ঠন করার চেষ্টা করে, রাজার কর্তব্য লুণ্ঠিত সেই সম্পদকে আবার ফিরিয়ে দেওয়া। মন্থন সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি বোধ হয় আমরা এখন। অমৃত হয়তো এক দিন উঠে আসবে। তার আগে একবিংশ শতকের দ্বিতীয় এই দশকেও পশ্চিমবঙ্গ নামের এক প্রান্তিক রাজ্যে গণতন্ত্রের লুণ্ঠনের মূক সাক্ষী ছিলাম আমরা, এই প্রজন্ম— ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এ কথা বলার সময় লজ্জায় মাথাটা নত করব তো? এখনও শেষ হয়ে যায়নি সব কিছু। ঘুরে দাঁড়ানোর সময় রয়েছে এখনও। এখনও এক বার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বলার সময় রয়েছে, এই পথ আমাদের নয়।
শেষ হোক মানুষের নামে, গণতন্ত্রের নামে, অবাধ লুণ্ঠনের এই প্রতিযোগিতা।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আরও পড়ুন: ঝাড়গ্রামে বিজেপি কর্মী খুন, ইটবৃষ্টি, গুলিতে রণক্ষেত্র কেশপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy