Advertisement
E-Paper

লন্ডন ডায়েরি

ভিক্টোরিয়ার তেরো খণ্ডের ‘হিন্দুস্তানি জার্নাল’ সাধারণত উইন্ডসর কাস্‌ল-এর আর্কাইভে রাখা থাকে। জনসাধারণের জন্য সেগুলি উন্মুক্ত নয়।

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৭ ০০:২৬

রানি বলতেন,আন্ডা ঠিকসে উবলা নহীঁ হ্যায়

‘ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আবদুল’ বই আর চলচ্চিত্র, দুটোই যে ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ জাগিয়েছে তা হল, ভিক্টোরিয়ার উর্দু-প্রীতি। মহারানি উর্দু পড়তে ও লিখতে শিখেছিলেন। ভিক্টোরিয়ার তেরো খণ্ডের ‘হিন্দুস্তানি জার্নাল’ সাধারণত উইন্ডসর কাস্‌ল-এর আর্কাইভে রাখা থাকে। জনসাধারণের জন্য সেগুলি উন্মুক্ত নয়। কিন্তু ছবিটা মুক্তি পাওয়ার পর আর মানুষের এই ব্যাপারে উৎসাহ দেখে, জার্নালগুলি এখন ভিক্টোরিয়ার ছুটি কাটানোর বাড়ি ‘অসবর্ন হাউস’-এ প্রদর্শিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ খুশি, এই প্রথম তাঁরা সেগুলিকে দেখতে পাবেন। মহারানিকে উর্দু শিখিয়েছিলেন আবদুল করিম, যিনি ১৮৮৭ সালে ভারত থেকে রানির দরবারে উপস্থিত হন। রানি অনেক উর্দু কথা শিখেছিলেন। যেমন, ‘চায়ে অসবর্ন মে হামেশা খরাব হ্যায়’, বা ‘আন্ডা ঠিকসে উবলা নহীঁ হ্যায়’, ইত্যাদি। প্রাসাদের সবাইকে বলতেন, ‘তুম মুনসি কো বহত ইয়াদ করোগে’। অসবর্ন হাউসের চিফ কিউরেটর মাইকেল হান্টার উচ্ছ্বসিত, যে বাড়িতে বসে ‘হিন্দুস্তানি জার্নাল’ লেখা, এত বছর পর সেখানেই তারা ফিরল বলে। বলছেন, রানির নিজস্ব হস্তাক্ষরে এত লেখা চোখে দেখাটা দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। আবদুলও যে কী নিষ্ঠায় রানিকে উর্দু শিখিয়েছিলেন, বোঝা যায়। জীবনের শেষ দিকে ভিক্টোরিয়া উর্দুতে অর্ধেক পৃষ্ঠা অনায়াসে লিখতে পারতেন।

ঐতিহাসিক: মহারানি ভিক্টোরিয়ার উর্দু হাতের লেখা। পাশে, আবদুল করিম

দুই পড়শির টুইট-ফাইট

রোজ রোজ তো আর সেরা দুই মিউজিয়মের মধ্যে টুইট-যুদ্ধ হয় না। তবে যখন হয়, এ অন্যের দিকে ছুড়ে দেয় নিজেদের সেরা সেরা জিনিসগুলো। সম্প্রতি কেনসিংটনের সায়েন্স মিউজিয়ম আর ন্যাচরাল হিস্ট্রি মিউজিয়মের টুইট-যুদ্ধে তা-ই হল। সায়েন্স মিউজিয়ম শুরুটা করেছিল এই বলে, আমাদের পড়শি শুধু প্রাচীন ফসিলে ভরা। ন্যাচরাল হিস্ট্রি মিউজিয়ম জবাবে ওদের সংগ্রহ থেকে একটা ভ্যাম্পায়ার ফিশের ছবি টুইট করল। সায়েন্স মিউজিয়াম এ বার দিল নিউক্লিয়ার মিসাইল পোলারিস-এর ছবি। পরমাণু আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে ন্যাচরাল হিস্ট্রি মিউজিয়মের পালটা জবাব আরশোলার ছবি, সঙ্গে লেখা: আমাদের আরশোলা-প্রজাতিরা কিন্তু বেঁচে থাকবে। এ ছাড়ে সি-ড্রাগনের ছবি তো ও পাঠায় সাবমেরিন। টুইটারে অসংখ্য মানুষ উপভোগ করলেন এই জাদুঘর-যুদ্ধ।

ইতিহাসের খণ্ডচিত্র

রবীন্দ্রনাথ বার্মিংহাম গিয়েছিলেন ১৯৩০-এ, ওঁর আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয়েছিল সেখানে। পরের বছর বার্মিংহাম যান মহাত্মা গাঁধীও। বার্মিংহাম লাইব্রেরি ও ব্রিটিশ লাইব্রেরির যৌথ উদ্যোগে ‘ব্রিটিশ এশিয়ান হেরিটেজ’ প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়েছে এই দু’জনের কৃতি। আছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সভার কার্যবিবরণী লেখা খুব পুরনো খাতা, তাতে একেবারে গোড়ার দিককার বিনিয়োগকারীদের তালিকা, সাল লেখা ১৫৯৯! মহাত্মা গাঁধী ও ব্রিটেনের অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় মানুষদের সই-সম্বলিত একটা চিঠি আছে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে। আছে মহারাজা রঞ্জিত সিংহের নাতনি রাজকুমারী সোফিয়া দলীপ সিংহ, লন্ডনে ‘হিন্দুস্তানি কফি হাউস’-এর প্রতিষ্ঠাতা শেখ দিন মহম্মদের (যিনি পরে রাজা চতুর্থ জর্জের ‘শ্যাম্পু-সার্জন’ হয়েছিলেন) ছবিও।

সৃষ্টি: ফসেট-এর মূর্তির সামনে গিলিয়ান

মিলিসেন্ট ফসেট স্মরণে

পার্লামেন্ট স্কোয়্যারে উইনস্টন চার্চিল আর জান স্মাটস-এর মূর্তির পাশে মহাত্মা গাঁধী ও নেলসন ম্যান্ডেলাও আছেন। সম্প্রতি জানা গেল, বিখ্যাত ‘সাফ্রাজিস্ট’ প্রচারক মিলিসেন্ট ফসেটই প্রথম নারী, যাঁর মূর্তি বসতে চলেছে স্ক্যোয়ারে। অদ্ভুত যোগাযোগ। জেলবন্দি অবস্থায় সাফ্রাজেটদের অনশন প্রাণিত করেছিল গাঁধীকে, আর ম্যান্ডেলা উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন গাঁধীকে দেখে। ফসেটের ব্রোঞ্জমূর্তিটি বসানো হবে চার্চিলের মূর্তির কাছেই। ১৮ নভেম্বর ১৯১০-এ পার্লামেন্টের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় যখন সাফ্রজেটরা আক্রান্ত হন, তখন হোম সেক্রেটারি ছিলেন চার্চিল। ব্রিটিশ ইতিহাসে সে দিনটা ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’। ফসেট-এর মূর্তির হাতে একটা প্ল্যাকার্ড, তাতে লেখা ‘সাহসই সর্বত্র সাহসকে আহ্বান করে’। আশা করা হচ্ছে, ১৯১৮-র ‘রেপ্রিজেন্টেশন অব দ্য পিপল অ্যাক্ট’, যার বলে ব্রিটেনে কিছু নারী প্রথম ভোট দিয়েছিলেন, তার শতবর্ষে এই মূর্তিটির উদ্বোধন হবে। সুন্দর মূ্র্তিটি বানিয়েছেন শিল্পী গিলিয়ান ওয়্যারিং।

London Diaries
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy