ছিল নাত্সি পতাকা, হল চমৎকার গাউন
বার্লিনের রাইখস্ট্যাগ থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া মস্ত একটা নাত্সি পতাকা। বিয়াত্রিস জ্যাকম্যান সেটাকেই নিয়ে গিয়েছিলেন এক দরজির কাছে। পতাকার সাদা-কালো স্বস্তিকাচিহ্নটা কেটে উড়িয়ে দিয়ে, বাকি অংশ থেকে সেই দরজি চমৎকার একটা গাউন বানিয়ে দিয়েছিলেন জ্যাকম্যানকে। সেই গাউনই নিলামে উঠল ৬৬ বছর পর। ১৯৩৯ সালে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হল, জ্যাকম্যান তখন থাকতেন ডেনমার্কে। কিশোরী জ্যাকম্যান সাইকেলে চড়ে গ্রামে গ্রামে গোপন মেসেজ পৌঁছে দিতেন। এতই সফল হয়েছিলেন সে কাজে, যে, সরকার তাঁকে সিক্রেট এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করে। জ্যাকম্যান এমনকী নিজের জীবন বাজি রেখে মিত্রশক্তির হয়ে কাজ করা আহত বিমানচালকদের লুকিয়ে রেখেছিলেন, ১৯৪২-এ নাত্সি সদর দফতরের রেকর্ডস অফিস হামলাতেও জড়িত ছিলেন। পরের বছর সুইডেনে পালিয়ে যান, যুদ্ধ শেষ হওয়া অবধি সেখানেই দোভাষীর কাজ করতেন। মিত্রশক্তির বোমায় রাইখস্ট্যাগের বাড়িটা বিধ্বস্ত হওয়ার পর বারান্দা থেকে ঝোলা সেই পতাকাটা খুলে নিয়েছিলেন তাঁর প্রেমিক। উজ্জ্বল লাল রঙের গাউনটা পরে জ্যাকম্যান পার্টিতে যেতেন। ৯১ বছরের বৃদ্ধা এখন থাকেন ইংল্যান্ডের সারে-তে। দু’চোখের দৃষ্টিশক্তি আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে আসছে, কিন্তু একটা বড় টেলিভিশন কিনবেন বলে গাউনটা নিলামে তুলছেন।
জড়িয়ে ইতিহাস
সত্তর বছরেরও বেশি সময় ধরে অন্দরসজ্জা আছে একই রকম। ওয়েটারদের পরনে ‘ইন্ডিয়ান কফিহাউস’ ধাঁচের সাদা পোশাক, টেবিলের উপর দেওয়ালে টাঙানো কৃষ্ণ মেনন, গাঁধীজি, দাদাভাই নওরোজির ছবি। রেস্তরাঁর উপরে স্বল্প মূল্যে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থাও আছে। আর এই সবই শহরের প্রাণকেন্দ্রে, ট্রাফালগার স্কোয়ার থেকে মিনিট কয়েকের দূরত্বে। লন্ডনের ‘ইন্ডিয়া ক্লাব’-এর সঙ্গে জড়িয়ে অনেক ইতিহাস। স্বাধীনতার আগে এখানেই ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা দেখাসাক্ষাৎ করতেন; নেহরুর বন্ধু কৃষ্ণ মেনন এখানেই ইন্ডিয়া লিগ-এর সভা করেছিলেন। নেহরু ও এডুইনা মাউন্টব্যাটেন ছিলেন এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। স্বাধীনতার পর এখানেই সাংবাদিক তারাপদ বসু ও চন্দন তারুর (শশী তারুরের বাবা) শুরু করেন ‘ইন্ডিয়ান জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন’। সম্প্রতি ইন্ডিয়া ক্লাব ও গোটা তিনতলা বাড়িটিই ভেঙে ফেলার একটা ভয় দেখা দিয়েছিল, এখানে নাকি বড় হোটেল হবে। ক্লাবের বর্তমান মালিক ইয়াদগার মার্কার ক্লাবকে বাঁচাতে শুরু করেছেন প্রচার-অভিযান, বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও লেখকদের সই জোগাড় করেছেন ইন্ডিয়া ক্লাব-এর সংরক্ষণের দাবিতে। সমর্থনের হাত বাড়িয়েছে গণমাধ্যমগুলোও। আশা করা হচ্ছে, ইতিহাস-মাখা এই ক্লাবকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে না।
অতীত-ভবিষ্যৎ
সৃষ্টি: জগদীশচন্দ্র বসুর তৈরি যন্ত্র
শূন্যের আবিষ্কার যে ভারতে, তা অধিকাংশ মানুষই জানেন। ৫০০০ বছর ধরে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ভারতের কীর্তিগুলির উদ্যাপনে লন্ডনের সায়েন্স মিউজিয়মে ‘ইলিউমিনেটিং ইন্ডিয়া’ নামে এক প্রদর্শনী চলছে। প্রদর্শনীতে আছে বাখশালি পাণ্ডুলিপি, যা ছিল প্রাচীন সিল্ক রোডের বণিকদের ব্যবহারবিধি। এর অনেকটা লেখা হয়েছিল তৃতীয় শতকে। পাণ্ডুলিপির পাতায় আছে কতকগুলো বিন্দু, প্রদর্শনীর কিউরেটর ম্যাট কিম্বারলির মতে, এই বিন্দুগুলোই আধুনিক শূন্যের পূর্বসূরি। আছে আলবার্ট আইনস্টাইনকে লেখা সত্যেন্দ্রনাথ বসুর চিঠি, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর তৈরি ক্রেস্কোগ্রাফ, উদ্ভিদের বৃদ্ধি পরিমাপের যন্ত্র। ‘জম্বুদ্বীপ’ নামে জৈন সৃষ্টিতত্ত্বে ব্যবহৃত একটি মানচিত্র আছে, খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে যা আঁকা হয়েছিল। আছে আসল ‘রমন স্পেকট্রোমিটার’। মুম্বই শহর জুড়ে রোজ লক্ষ লক্ষ মানুষের খাবার পৌঁছে দেন যে সাইকেল-চড়া ডাব্বাওয়ালারা, তাঁদের পরিবহণব্যবস্থা যে দ্রুতগতির অ্যাপ-ক্যাবগুলিকেও টেক্কা দেবে, প্রদর্শনীতে বলা হয়েছে তা-ও। হলিউড-ছবি ‘গ্র্যাভিটি’ বানাতে যত টাকা লেগেছে, তার চেয়ে কম খরচে ভারত মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে গবেষণা চালাচ্ছে। বিজ্ঞানসাধনায় ভারতের গৌরবময় অতীত এখন আহ্বান করছে উজ্জ্বল এক ভবিষ্যৎকে, প্রদর্শনীর মূল সুর এটাই।
থাকবে কত ক্ষণ
দুর্গাপুজো শেষ ঠিকই, কিন্তু লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ-এর হলঘরে ঠাকুর গড়ার কাজ চলছে এখনও। কুমোরটুলির দুই পটুয়া সুদর্শন দাস ও কৌশিক ঘোষ ও উৎসুক দর্শক-পড়ুয়াদের হাতে-কলমে দেখাচ্ছেন, কী করে প্রতিমা বানানো হয়। ১৯-২০ অক্টোবর ব্লুমসবেরি ফেস্টিভ্যালে প্রতিমাটি প্রদর্শিত হবে। কলকাতা তথা বাংলার ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক বৈচিত্র তুলে ধরাই উৎসবের উদ্দেশ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy