যে দিন চার্লস টিভিতে জানান, তিনি তাঁর বিশ্বাস ভেঙেছেন, সেই সন্ধ্যাতে হাইড পার্কের সার্পেন্টাইন গ্যালারিতে প্রদর্শনীর উদ্বোধনে যুবরানি ডায়ানা বিখ্যাত কালো ‘রিভেঞ্জ ড্রেস’ পরে আসেন। পাপারাৎজ়িদের ভিড় ছিল সেখানে। যে শিল্পীরা লন্ডনে প্রাপ্য স্বীকৃতি পান না, তাঁদের তুলে ধরা এই গ্যালারিটির বৈশিষ্ট্য। মার্চ থেকে এখানে বাঙালি শিল্পী অর্পিতা সিংহের ছ’দশকেরও বেশি কর্মজীবনের বাছাই কাজগুলি দেখা যাবে। ভারতের বাইরে এটাই তাঁর প্রথম একক প্রদর্শনী। ৮৮ বছরের শিল্পীর কাজের কেন্দ্রে সমাজের উত্থানপতন, বিশ্ব মানবতার নানা সঙ্কট। বড় ক্যানভাসের তৈলচিত্র থেকে জলরঙের ঘন কাজ, কালি দিয়ে আঁকা ছবি— সবই থাকবে। অর্পিতার জন্ম কলকাতায়, উত্থান ষাটের দশকে। তাঁর অলঙ্করণে প্রভাব পড়েছে অণুচিত্র থেকে বাংলা লোকশিল্পের। নব্বইয়ের দশক থেকে লিঙ্গ, মাতৃত্ব, নারীর ইন্দ্রিয়চেতনা ও বিপন্নতার মতো বিষয়গুলিতে জোর দেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের হিংসা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা ধরেন রূপকে। নির্দিষ্ট ব্যাখ্যার বিরোধী তিনি। বলেন, “শিল্প যত এগোয়, সূচনাবিন্দুটি নিশ্চিহ্ন হয়। অনুষঙ্গগুলিই অন্যদের, সবাইকেই শিল্পের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। ...ছবির ফ্রেম চুরমার করে দাঁড়িয়ে থাকে এক মানবী, সে যে কেউ হতে পারে।”

ভারতযোগ: অর্পিতা সিংহের আঁকা ছবি।
বলিউডে ব্রিটিশ লেখক
বেস্টসেলিং ব্রিটিশ লেখক জন ল কারে-র (আসল নাম ডেভিড কর্নওয়েল) সঙ্গে ভারতীয়দের পরিচয় বাড়তে চলেছে শীঘ্র। টিঙ্কার টেলর সোলজার স্পাই, দ্য কনস্ট্যান্ট গার্ডেনার, দ্য নাইট ম্যানেজার, দ্য লিটল ড্রামার গার্ল প্রভৃতি গুপ্তচর-বিষয়ক উপন্যাসের জন্য বিখ্যাত তিনি। সবই জনপ্রিয় ফিল্ম, সিরিজ়ে রূপান্তরিত। ভারতীয়দের তাঁর লেখনীর সঙ্গে পরিচয় অনিল কপূর অভিনীত দ্য নাইট ম্যানেজার সিরিজ়ের হিন্দি ভার্শনে। মূল ইংরেজি ভার্শনটিতে ছিলেন টম হিডলস্টন ও দ্য ক্রাউন-খ্যাত এলিজ়াবেথ ডেবিকি। ২০১৬-য় প্রদর্শনমাত্র সিরিজ়টি প্রবল জনপ্রিয় হয়, ডিজিটাল স্বত্ব কেনে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলি। ২০২০-তে ৮৯ বছর বয়সে প্রয়াত জন ল কারের সাহিত্য-ভান্ডার তথা টিভি ও ফিল্ম স্বত্বের মালিক তাঁর দুই ছেলে। হিন্দি দ্য নাইট ম্যানেজার-এর সাফল্যের পর তাঁরা বলেছেন, উপন্যাসগুলি এশীয় বাজারে আগ্রহী। ভারতীয়দের জন্য বাকি উপন্যাসগুলিকেও চিত্ররূপ দিতে চাইবেন বলিউড প্রযোজকরাও। সারা জীবন ধরে ২৫টি উপন্যাস লিখেছেন জন ল কারে, কাজের সুযোগ অনেক।

দ্য নাইট ম্যানেজার-এর পোস্টার।
দুঃসাহসী প্রীত
সেনাবাহিনীর প্রাক্তন ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট, ৩৬ বছরের ব্রিটিশ পঞ্জাবি হরপ্রীত চণ্ডী প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মহিলা রূপে দক্ষিণ মেরুতে একক অভিযান করেছেন। এ বার কোনও সহায়তা ছাড়া প্রথম মহিলা একক যাত্রী হিসাবে একা উত্তর মেরু যাত্রা করবেন। দুঃসাহসিক অভিযানের জন্য তাঁকে ‘পোলার প্রীত’ ডাকা হয়। ৭০ দিনে ১৪৮৫ কিমি পেরিয়ে দীর্ঘতম একমুখী সহযোগিতাবিহীন পোলার স্কি অভিযানের রেকর্ড ভেঙেছেন। এ বার সফল হলে দুই মেরুতেই প্রথম একক মহিলা অভিযাত্রী রূপে নজির গড়বেন। প্রায় -৫০ ডিগ্রিতে ৫০০ মাইলের মতো হাঁটতে হবে ৭০ দিনে। সহযোগিতা-বিনা এই একক অভিযানে সফল হয়েছেন মাত্র দু’জন পুরুষ (১৯৯৪, ২০২৩-এ)। প্রীত বরফের রাজ্য পেরিয়ে, ৬০ ফুটের বরফের চাঁইয়ে চড়বেন, ডিঙিয়ে যাবেন জলরাশি। সব করতে হবে সমুদ্রের উপরের নড়বড়ে বরফপৃষ্ঠে। প্রস্তুতির জন্য শীত কাটিয়েছেন আন্টার্কটিকায়। বলছেন, ভয় করছে, বিচ্ছিন্নতা নিয়ে শঙ্কিতও, তবুও চেষ্টা ছাড়ার প্রশ্ন নেই। মেরুভল্লুকদের তাড়াতে সঙ্গে রাখবেন আগুন।

অভিযাত্রী: হরপ্রীত চণ্ডী।
ক্যাপ্টেন হ্যাডকের মা
এসেক্সে ৩০০ বছর পুরনো সমাধিই কি ক্যাপ্টেন হ্যাডকের অনুপ্রেরণা? সমাধিটি মেরি হ্যাডকের। বিশিষ্ট নাবিক পরিবারে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। ১৬৮৮-তে মৃত্যুর পর পরিবার তাঁর স্মৃতিসৌধ গড়ে। তাঁর ছেলে অ্যাডমিরাল রিচার্ড হ্যাডক ও নাবিক পরিবারটির ইতিহাসে অনুপ্রাণিত অ্যার্জে টিনটিনের গল্পে হ্যাডক চরিত্র সৃষ্টি করেন বলে ধারণা। সম্ভবত লেখক ব্রিটেন সফরে বিখ্যাত সমাধিটি দেখেন বা পরিবারটির কথা শোনেন। সমাধিটি ঐতিহাসিক সংরক্ষণের তালিকাভুক্ত হল। লিঙ্গ অসাম্যের যুগে এক মহিলার একক স্মৃতিসৌধের বিরল সম্মানের তারিফ করেছেন ঐতিহ্য-বিশারদেরা। হ্যাডকের মায়ের সমাধিটি আবিষ্কার করতে পারলে টিনটিন আর ক্যাপ্টেন হ্যাডক নির্ঘাত খুশি হতেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)