Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সাইকেল ও দোলনা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ নির্বাচনের কিছু পূর্বে ঘোষণা করিয়াছেন, প্রাথমিক স্কুলগুলিতে দোলনা দিবে সরকার। প্রশ্ন উঠিয়াছে, ইহা কি নির্বাচনে ভোট পাইবার কৌশল নহে? স্কুলগুলির পরিকাঠামোয় আজও অনেক ঘাটতি রহিয়াছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ নির্বাচনের কিছু পূর্বে ঘোষণা করিয়াছেন, প্রাথমিক স্কুলগুলিতে দোলনা দিবে সরকার। প্রশ্ন উঠিয়াছে, ইহা কি নির্বাচনে ভোট পাইবার কৌশল নহে? স্কুলগুলির পরিকাঠামোয় আজও অনেক ঘাটতি রহিয়াছে। খেলাধুলার জন্য এত অর্থব্যয়ের প্রয়োজন কী? প্রশ্নটি অসঙ্গত নহে। সরকারি টাকা কী ভাবে খরচ হইবে, তাহা স্থির করিবার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি থাকিবে, এমনই প্রত্যাশিত। স্কুল কমিটির সদস্য, শিক্ষক ও অভিভাবকদের পরামর্শ অনুসারে স্কুলপড়ুয়াদের প্রয়োজন মিটাইবে সরকার, ইহাই প্রচলিত প্রথা। যদিও বাস্তব এই যে, ভারতের সর্বত্রই নির্বাচনের পূর্বে, অথবা জিতিয়া আসিবার অব্যবহিত পরে, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নানা প্রকার অনুদান ঘোষণা করেন নেতারা। পশ্চিমবঙ্গও ব্যতিক্রম নহে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পূর্বে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আর্থিক অনুদান, এবং সবুজসাথী প্রকল্পের সাইকেল, এই দুইটি ঘোষিত হইয়াছিল। বিধানসভায় বিপুল জনসমর্থন পাইতে সরকারকে সাহায্য করিয়াছিল এই দুইটি প্রকল্প, এমনই ধারণা রাজনৈতিক মহলে। তাই নির্বাচনের আগে স্কুলশিক্ষায় কোনও নূতন অনুদান ঘোষিত হইবে, ইহা আশ্চর্য নহে। লক্ষণীয়, ইতিপূর্বে রাজ্য সরকার যে সকল প্রকল্প ঘোষণা করিয়াছে, যথা আর্থিক অনুদান, সাইকেল, ব্যাগ, জুতা, স্কুলের পোশাক, তাহার সকলই পড়ুয়ার জন্য। দোলনা দুলিতে চাহিলে স্কুলে আসিতে হইবে শিশুদের। স্কুলে অনুপস্থিতির হার তবে কমিতে পারে। অতএব দোলনার জন্য অর্থব্যয় নিতান্ত ‘ছেলেখেলা’ না হইতেও পারে।

কথা হইল, ইতিপূর্বে নির্বাচনকে ঘিরিয়া যে সব শিক্ষা-অনুদান দেখিয়াছে নানা রাজ্য, তাহাতে কী লাভ হইয়াছে? নেতাদের অধিক ভোট মিলিয়া থাকিলেও, শিশুদের উপকার হইয়াছে কি? সম্প্রতি এক গবেষণা বলিতেছে, বিহারে নবম শ্রেণির ছাত্রীদের সাইকেল কিনাইবার অনুদান প্রকল্প শুরু করেন নীতীশ কুমার, ২০০৬ সালে। সাইকেলপ্রাপ্তি মেয়েদের জীবনে পরিবর্তন আনিয়াছে কি না, তাহা বুঝিতে দুই গবেষক ২০১৬ সালে সমীক্ষা শুরু করেন। সিদ্ধান্ত, সাইকেল পাইবার দীর্ঘমেয়াদি সুফল ফলিয়াছে মেয়েদের জীবনে। নবম শ্রেণিতে সাইকেল পাইলে কেবল যে দশম শ্রেণি সম্পূর্ণ করিবার সম্ভাবনা বাড়িয়াছে, তাহাই নহে। দ্বাদশ শ্রেণি সম্পূর্ণ করিবার সম্ভাবনাও বাড়িয়াছে। এমনকি কলেজে পড়িবার ও বিবাহে বিলম্ব করিবার সম্ভাবনাও বাড়িয়াছে। তাহাদের কাজ করিবার আগ্রহ অধিক বলিয়া তাহাদের কর্মনিযুক্তি কমিয়াছে।

অতএব নির্বাচনের সহিত উন্নয়নের সম্পর্ক লইয়া চিন্তার প্রয়োজন। কিছু প্রকল্প ‘জনমোহিনী’ বলিয়া নিন্দিত হইলেও তাহাতে উপকৃত হইয়াছে প্রান্তবাসী। আবার অনেক ক্ষেত্রে অনুদান-ভর্তুকি রাজকোষের অপচয় করিয়াছে। নেতাকেও ডুবাইয়াছে। ছত্তীসগঢ়ে বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে বিজেপি সরকার স্মার্টফোন বিলি করিয়াছিল। ত্রিশ লক্ষ মহিলাকে ফোন দান করিয়াও রমন সিংহ সরকার বাঁচে নাই। কংগ্রেস সরকার আসিয়া সে প্রকল্প বাতিল করিয়াছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রাখিতে ফসলঋণ মকুব করিয়াছে। যদিও পূর্ব দৃষ্টান্ত সাক্ষী দেয়, ফোনসংযোগ মেয়েদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ঋণমকুব শেষ পর্যন্ত বিপন্ন করে চাষিকে। জনস্বার্থ এবং জনসমর্থন, দুইটিকেই রক্ষা করিতে পারে যে নীতি, গণতন্ত্রে তাহাই সার্থক রাজনীতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE