Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

তবু রঙ্গে ভরা

স্বয়ং ট্রাম্প টুইটে কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করিলেন, পরে মজা করিয়া লিখিলেন, চলচ্চিত্রটি যেমন ছিল তেমন আর রহিবে না।

ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র

ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

পঁচিশ বৎসরেরও অধিক কাল পূর্বে হলিউডের এক ছবিতে কিয়ৎক্ষণের জন্য দেখা গিয়াছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে, বর্ষশেষের অবসরে কানাডার এক টেলিভিশন চ্যানেল সেই অংশটুকু ছাঁটিয়া ছবিটি সম্প্রচার করায় হইচই পড়িয়াছে। স্বয়ং ট্রাম্প টুইটে কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করিলেন, পরে মজা করিয়া লিখিলেন, চলচ্চিত্রটি যেমন ছিল তেমন আর রহিবে না। পুত্র-সহ ভক্ত-সমর্থকেরা এই কর্তন-কাণ্ডে মর্মাহত, ট্রাম্প অবিচল। তাঁহার যাহা বলিবার ছিল, তিনি বলিয়া দিয়াছেন। বিগত কিছু কাল যাবৎ তাঁহার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনিবার লক্ষ্যে আদালত ও কংগ্রেসে ধুন্ধুমার হইয়াছে। তাহাতেও ট্রাম্প বাহ্যত অচল অটল থাকিয়াছেন, স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সমগ্র ব্যাপারটিকেই ‘রসিকতা’ বলিয়া উড়াইয়া দিয়াছেন।

জাগতিক বিয়োগ বা বর্জনে যিনি অনুদ্বিগ্নমনা, বরাসন হইতে টানিয়া নামাইবার তৎপরতা দেখিয়াও বিগতস্পৃহ, তাঁহাকে মহাপুরুষ বলা যাইতেই পারিত। চারিপার্শ্বে ঘূর্ণায়মান ঘটনাস্রোত যিনি সহাস্যে নিরীক্ষণ ও আস্বাদন করেন, তাঁহার দুর্দম রসবোধ অন্তত প্রশংসার দাবি করিতেই পারিত। ট্রাম্পের আচরণে উভয় লক্ষণই আপাত-প্রকট হইলেও তিনি যে বস্তুত সাধক বা সুরসিক কোনওটিই নহেন, তাহা বুঝিতে মনস্তত্ত্ববিদ হইবার প্রয়োজন নাই। জনপরিসরে তাঁহার আচরণই বারংবার বুঝাইয়া দিতেছে, এই মানুষটি আসলে কোনও কিছুকেই পরোয়া করেন না। তাঁহার আক্ষরিক অর্থে অনর্গল এবং বেহিসাবি মন্তব্যও তাঁহাকে সুরক্ষা দিবে, সমর্থনেরও অভাব ঘটিবে না। তিনি চাহিলেই অপছন্দের মানুষটিকে সারমেয়র সহিত তুলনা টানিবেন, নিদেনপক্ষে কুৎসিত কদাকার বলিবেন, আত্মবিশ্বাসের সহিত একের পর এক ভুল তথ্য দিবেন এবং কেহ সংশোধন করিয়া দিলেও বিন্দুমাত্র লজ্জিত বা দুঃখিত হইবেন না। এই সকলই তাঁহার সহজাত না হইলেও অনায়াস-অর্জিত চারিত্রবৈশিষ্ট্য। সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, তাঁহার স্পর্ধিত ও বেপরোয়া ভাবমূর্তিটি তাঁহার অনুরক্তদের তো বটেই, বহুলাংশে নাগরিকদেরও শাবাশি পাইয়াছে। তাই রাষ্ট্রপ্রধানের স্থূল ও কুরুচিকর রসিকতাও হইয়া উঠে জনতার আমোদ ও আলোচনার উৎস।

ট্রাম্প একক বা বিচ্ছিন্ন চরিত্র নহেন। সাম্প্রতিক বিশ্ব বহু রাষ্ট্রে দক্ষিণপন্থার উত্থান ও শাসনের সাক্ষী, সেই সব রাষ্ট্রপ্রধানকে দেখিলেই কমবেশি এই একই চারিত্রবৈশিষ্ট্য দেখা যাইবে। বাগ্মিতাকে উড়াইয়া ইঁহারা বাক্‌পটুতায় দড়, পরিস্থিতিবিশেষে কঠোর বা রঙ্গপ্রিয় রূপটানটি ঝুলি হইতে বাহির করিয়া বহিরঙ্গে বুলাইয়া লন। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসিবার পূর্বে তথ্য ও সত্যের প্রামাণ্যতা-সন্ধানী একটি ওয়েবসাইট বিশ্লেষণ করিয়া দেখাইয়াছিল, নির্বাচনী প্রচারে বলা তাঁহার কথাগুলির মাত্র ২ শতাংশ সত্য, ৭ শতাংশ অধিকাংশে সত্য, ১৫ শতাংশ অর্ধসত্য, ১৫ শতাংশ অধিকাংশে মিথ্যা, ৪২ শতাংশ মিথ্যা, ১৮ শতাংশ নির্লজ্জ অসত্য। বলা হইয়াছিল, এই রূপ নেতা ক্ষমতায় আসিলে দেশের অবস্থা সহজেই অনুমেয়, কিন্তু তদ্‌সত্ত্বেও তাঁহার যোদ্ধৃ-মনোভাব তাঁহাকে বিপুল জনসমর্থন আনিয়া নিতে ব্যর্থ হইবে না। সেই অনুমান বাস্তব হইয়াছে। পৃথিবী সবিস্ময়ে দেখিতেছে দেশে দেশে সেই নেতাদের, যাঁহারা দেশ চালাইতেছেন ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাবে। অথবা, নিতান্ত রঙ্গপ্রিয়তায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE