Advertisement
E-Paper

অসভ্যতার নিশান

অধিকাংশ মানুষ মনে করিয়াছেন কাজটি অন্যায়, ইহাতে স্বস্তির শ্বাস লইবার কালেই মনে রাখিতে হইবে, টুইটার ব্যবহারকারী তিপ্পান্ন সহস্রের অধিক মানুষ স্পষ্ট বলিতেছেন, সুষমার প্রতি নিক্ষিপ্ত তীব্র জঘন্য বাক্যবাণগুলি ন্যায়সঙ্গত। অস্যার্থ, এত জন ভারতীয় মনে করেন, মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করাই উচিত।

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৮ ০১:৫৬
সুষমা স্বরাজ। ফাইল চিত্র।

সুষমা স্বরাজ। ফাইল চিত্র।

এক সপ্তাহ ধরিয়া বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে টুইটারে বহু মানুষ ‘ট্রোল’ করিলেন। অর্থাৎ প্রবল অপমান করিলেন। লখনউয়ে এক পাসপোর্ট আধিকারিক এক দম্পতিকে হেনস্থা করিয়াছিলেন, কারণ স্ত্রী হিন্দু অথচ স্বামী মুসলিম, ইহা তাঁহার চক্ষে অত্যন্ত বিসদৃশ ঠেকিয়াছিল। দম্পতি সুষমাকে নালিশ জানাইবার পর, তিনি তৎক্ষণাৎ আধিকারিকের বদলির ব্যবস্থা করেন, দম্পতির পাসপোর্টেরও বন্দোবস্ত করিয়া দেন। সঙ্গে সঙ্গে টুইটারে বিদ্বেষপূর্ণ ক্ষুদ্রমনা নীচ বাক্যঝটিকা উত্থিত হয়, যাহার মূল সুর: সুষমা মুসলিম তোষণ করিতেছেন। শেষে সুষমা টুইটারেই জনমত লইবার আয়োজন করেন— তাঁহাকে এই রূপ অকথ্য অপমান করা কি ঠিক হইতেছে? ১,২৪,৩০৫ জন এই প্রসঙ্গে মত দান করেন, ৫৭% বলেন, ইহা অত্যন্ত অন্যায়। কিন্তু ৪৩% জানান, ইহা ঠিকই হইতেছে। এই সংখ্যাটি ৫৩,৪৫১ (রবিবার দ্বিপ্রহর অবধি প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী)। অর্থাৎ, অধিকাংশ মানুষ মনে করিয়াছেন কাজটি অন্যায়, ইহাতে স্বস্তির শ্বাস লইবার কালেই মনে রাখিতে হইবে, টুইটার ব্যবহারকারী তিপ্পান্ন সহস্রের অধিক মানুষ স্পষ্ট বলিতেছেন, সুষমার প্রতি নিক্ষিপ্ত তীব্র জঘন্য বাক্যবাণগুলি ন্যায়সঙ্গত। অস্যার্থ, এত জন ভারতীয় মনে করেন, মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করাই উচিত। আর, কেহ সেই বৈষম্য থামাইতে চাহিলে, তাঁহাকে আক্রমণের সময় সভ্যতা ও শালীনতার মাত্রা অতিক্রম করা যাইতেই পারে। ইহার প্রায় ভ্রাতৃপ্রতিম কিছু মতামতও বুঝিয়া লওয়া যায়— এক, মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্য লইয়া সরব হইলেই তাহা তোষণ। দুই, বিরুদ্ধ-মতাবলম্বীকে আক্রমণ করিবার সময় ন্যায্যতার বালাই রাখিবার দরকার নাই। এতগুলি মানুষ এমন অনুচিত মানসিকতা লালন করিতেছেন ও সদর্পে প্রকাশ করিতেছেন, জানিয়া দেশের মানচিত্রের দিকে তাকাইতে ভয় ধরে।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জাগিয়া উঠে: অশ্লীল অপমান ঠিক কাজ কি না, সেই লইয়া কোনও জনমত সমীক্ষা করিবার অর্থ অাছে কি? ইদানীং সকল সিদ্ধান্তই জনমতের নিকট জোড়হস্তে দাঁড়াইয়া অাছে, কে ভাল গায় তাহাও এসএমএস-পোল’এ ঠিক হয়, কোন চলচ্চিত্র চমৎকার তাহাও কেবল বক্স অফিস অনুযায়ীই বিচার করিবার চল হইতেছে, কে নেতা হইবেন তাহা তো জনমতের উপর নির্ভরশীল বটেই। কিন্তু তাহা বলিয়া কোন নীতি শ্রেয়, কোন মূল্যবোধ কাঙ্ক্ষিত, তাহাও জনমতের দ্বারা বিচার্য হইলে, তত্ত্ব যুক্তি দর্শন চিন্তনের তো দিন যাইল! আজ যদি জনতার অধিকাংশ মত প্রদান করেন, ছেলেধরা সন্দেহে মানুষকে গণপ্রহারে হত্যা করা উচিত, বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘর জ্বালাইয়া দিলেই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহা হইলে সেই মত অনুযায়ী রাষ্ট্র কাজ করিবে কি? সুষমা নেত্রী হিসাবে, মন্ত্রী হিসাবে তাঁহার কর্তব্য করিয়াছেন। তাহার সমালোচনা করা যাইতেই পারে, কিন্তু তাহা বলিয়া এক টুইটারীর ন্যায় এই কথা লিখা যাইতে পারে না— সুষমা বাড়ি ফিরিলে তাঁহার স্বামী যেন তাঁহাকে প্রহার করেন ও শিক্ষা দেন মুসলিম তোষণ না করিতে! সুষমাকে আক্রমণ ঠিক না ভুল, তাহার বিচার জনতার হাতে তুলিয়া দিবার মধ্যে আপাত-গণতান্ত্রিক কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে এক পশ্চাদমুখী ও বিপজ্জনক প্রক্রিয়ার কোরক রহিয়াছে। জনতা বহু ক্ষেত্রেই অগভীর, আবেগসর্বস্ব, উগ্র, অ-ভাবুক। তাহার চেতনা উন্মেষ রাষ্ট্রনিয়ন্তাদের প্রধান কার্য। তাই জনগণের ভোটের মাধ্যমে অভব্যতাকে, ভিত্তিহীন ঘৃণাকে যথার্হ বা অযথাযথ প্রমাণ করিবার মনোভঙ্গিটিই দুর্বলতার পরিচায়ক। মানবপ্রেম বা অসাম্প্রদায়িকতার ন্যায় মহান নীতিকেও কোলাহলরত জনতার দরবারে তৌল করিতে দিলে, ভয়াবহ অ-যৌক্তিক বিকৃতির সম্ভাব্য মঞ্চ প্রস্তুত হইতে পারে, যাহা সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ইতরতার প্রবল ও অবাধ দাপাদাপিতে ইতিমধ্যেই প্রতীয়মান।

Sushma Swaraj Twitter Inter-Faith Couple Passport Troll সুষমা স্বরাজ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy