পরিচালক বিকাশ বহেল।
বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের মন্দ্রস্বরে ত্রিশক্তির বন্দনা গান যখন রাতের আঁধার কাটিয়ে ভোর আনছে, ঠিক তখনই নারীর কণ্ঠস্বর যেন নিকষ অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে বলিউডে। সম্প্রতি নির্যাতন বা যৌন নিগ্রহের বিরুদ্ধে বলিউডে মুখ খুলতে শুরু করেছেন একের পর এক নারী। কিন্তু যাঁরা মুখ খুলছেন, তাঁদের প্রতি সহানুভূতি বা সংবেদনশীল আচরণ যেন বিরল। কণ্ঠস্বরগুলো যেন কাঙ্খিতই নয়— বলিউডের বিরাট অংশের ভাবখানা এমনই। যে কোনও উপায়ে অস্বস্তিকর প্রসঙ্গগুলো ঢাকা-চাপা দেওয়া গেলেই যেন ভাল হয়, এমন মানসিকতার প্রতিফলন ধরা পড়ছে বলিউডের অনেক রথী-মহারথীর আচরণে। কিন্তু হাজার চেষ্টাতেও ধাক্কা সামলানো যাচ্ছে না, হাটের মাঝখানে ভেঙে যাচ্ছে একের পর এক হাঁড়ি।
প্রথমে তনুশ্রী দত্ত, তার পরে কঙ্গনা রানাউত, এ বার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও এক অভিনেত্রী— অভিযোগকারিণীর সংখ্যাটা ক্রমশই লম্বা হচ্ছে। এঁদের তিন জনের মাঝে একটি প্রোডাকশন হাউসের এক ক্রু-সদস্যাও একই ধরনের অভিযোগ তুলেছেন। এ যেন আর এক #মিটু।
পশ্চিমী দুনিয়া থেকে যখন #মিটু নামক ঝড়টা উঠেছিল, তখন কেঁপে গিয়েছিল গোটা পৃথিবী। কিন্তু সেই মিটু-র ঢেউ যে এমন অবিশ্বাস্য প্রাবল্যে আছড়ে পড়বে আরব সাগরের তীরবর্তী ভারতীয় শহরটায়, তা অনেকেই কল্পনা করতে পারেননি। বিলম্বে হলেও, মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে শুরু হওয়া এই হইচই ওই মিটু আন্দোলনেরই ধারাপ্রবাহ। নির্দ্বিধায় বোধহয় বলে দেওয়া যায়, #মিটু-ই প্রেরণা জুগিয়েছে বলিউডের প্রতিবাদীদেরও।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
কিন্তু সবটাই মিল নয়, সবটাই ধারাপ্রবাহও নয়। মিটু হ্যাশট্যাগে মুখ খুলেছিলেন যাঁরা, প্রায় গোটা পৃথিবী তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কোনও অভিযোগকেই ঢাকা-চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়নি। অভিযুক্তরা বরং বয়কটের মুখে পড়েছিলেন। বলিউডে এখনও সে ছবি দেখা যায়নি। পুরুষতান্ত্রিকতার অভিযোগ বলিউডের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিনের। সেই অভিযোগের সত্যতা অনেকাংশেই প্রমাণ করে দিয়ে যৌন হেনস্থার অভিযোগের বিষয়ে বলিউডের অধিকাংশ কেউকেটা চুপ। কেউ কেউ আবার অভিযুক্তদের পাশে। বিভাজন বেশ বেনজির ভাবে স্পষ্ট করে তুলে বলিউডে বেশ কয়েক জন অভিনেত্রীকেই এগিয়ে আসতে হয়েছে অভিযোগকারী অভিনেত্রীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। কয়েক জন তরুণ বা অপেক্ষাকৃত তরুণ অভিনেতাও অভিযোগকারিণীদের সাহসের প্রশংসায় মুখ খুলেছেন। কিন্তু সংখ্যাটা নগণ্য।
আরও পড়ুন: ‘জোর-জবরদস্তি আমার ঠোঁটে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করেছিল বিকাশ’
ধর্মীয় আচারে নারীশক্তির উপাসনার প্রস্তুতি যখন গোটা ভারতে, বাস্তব জীবনে তখনও কঠিন সংগ্রামের মুখে নারী। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই দ্বিচারিতার মধ্যে কাটিয়ে দিলাম আমরা। আর কতগুলো শতাব্দী এ ভাবেই কাটবে, হিসেব কষতে বসা দরকার। না হলে দেবীপক্ষ আসবে, কিন্তু নারীর পক্ষে অন্ধকার বহাল থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy