Advertisement
E-Paper

জননিরাপত্তার দায়টা কেউ স্বীকার করবেন কি?

মাঝে মধ্যেই চমকে উঠতে হচ্ছিল। বিস্তীর্ণ গ্রাম-বাংলার নানা প্রান্ত থেকে বোমা বিস্ফোরণের শব্দ আসছিল। এ বার বিস্ফোরণটা ঘটল খাস কলকাতাতেই।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৫৭
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মাঝে মধ্যেই চমকে উঠতে হচ্ছিল। বিস্তীর্ণ গ্রাম-বাংলার নানা প্রান্ত থেকে বোমা বিস্ফোরণের শব্দ আসছিল। এ বার বিস্ফোরণটা ঘটল খাস কলকাতাতেই। নাগেরবাজারের মতো জনবহুল, কর্মচঞ্চল এলাকা শরতের এক ঝকঝকে সকালে আচমকা ঢেকে গেল ধোঁয়ায়, বাতাস ভারী হয়ে উঠল বারুদের গন্ধে, শুরু হল হতাহতের তালিকা প্রস্তুত করা। জননিরাপত্তার হালটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে— এখনও কি প্রশ্নটা করব না?

সকলের অলক্ষেই যে বাংলার আকাশে কালো মেঘ জমছিল এবং সে মেঘের আড়ালে-আবডালে যে বারুদের স্তূপ ক্রমশ উঁচু হয়ে উঠছিল, তা আমাদের প্রথমবার দেখিয়ে দিয়েছিল সম্ভবত খাগড়াগড়। আতঙ্কের আয়োজনের উপর থেকে আচমকা যেন একটা পর্দা সরে গিয়েছিল। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের অভিঘাত শুধু বাংলায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, পৌঁছে গিয়েছিল দিল্লি পর্যন্ত। ঘটনাচক্রে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের চতুর্থ বর্ষপূর্তির দিনেই কেঁপে উঠল নাগেরবাজার। এর মাঝে কখনও নারায়ণগড় থেকে বিস্ফোরণের শব্দ এসেছে, কখনও মুর্শিদাবাদে বোমার দাপট দেখা গিয়েছে, কখনও আমডাঙা বা কেতুগ্রাম থেকে অজস্র বোমা উদ্ধার হয়েছে। আর বীরভূমে কতগুলো জায়গায় কী রকম বিস্ফোরণ ঘটল, তার হিসেব রাখাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একের পর এক বিস্ফোরণ, একের পর এক হিংসাত্মক ঘটনা, প্রাণহানি, রক্তপাত, অশান্তি— এত কিছু দেখেও পুলিশের যেন কিছুই করার নেই। কোন ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বার করা গেল, কোন ঘটনায় এই বোমা-বারুদের কারবারিদের বিচারের কাঠগড়ায় পৌঁছে দেওয়া গেল, কোন ঘটনায় কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা গেল— এই সব প্রশ্ন করলে কোনও স্পষ্ট উত্তর মিলবে না। উত্তর দেওয়ার কোনও গরজ কারও মধ্যে রয়েছে কি না, তা নিয়েও সংশয়ের অবকাশ যথেষ্টই।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

নাগেরবাজারে বিস্ফোরণের পরে যথারীতি তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে। বিস্ফোরণের অল্পক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে স্থানীয় পুরপ্রধান দাবি করছেন, তাঁকে খুন করার জন্যই এই বিস্ফোরণ। পুরপ্রধানের এই দাবির পরে একাধিক স্বনামধন্য নেতা-মন্ত্রী ঘটনাস্থলে গেলেন, পুরপ্রধানের তোলা অভিযোগকে সমর্থন করলেন, আরও স্পষ্ট করে রাজনৈতিক অভিসন্ধি এবং চক্রান্তের তত্ত্ব আওড়ালেন।

বিরোধী দলও নীরব রইল না। স্বাভাবিক কারণে প্রশাসনের বিরুদ্ধে তাঁরা সুর চড়াল। শাসক দলের দিক থেকে আসা অভিযোগগুলো নস্যাৎ করে শাসকের দিকেই আঙুল তুলল।

আরও পড়ুন: পুলিশ বলল সকেট বোমা! আসলে কী? দানা বাঁধছে রহস্য

একটা বিস্ফোরণকে ঘিরে এই তুমুল দলবাজি আর দায় ঠেলাঠেলির জেরে যে তীব্র কোলাহল তৈরি হল, তাতে চাপা পড়ে গেল অনেক আর্তনাদ, কান্না, হাহাকার। বিস্ফোরণে সওয়ার হয়ে মৃত্যু হানা দিয়েছে নাগেরবাজারে। বিস্ফোরণটা খেয়ে নিয়েছে ৮ বছরের শিশুকে। মৃত্যুর সঙ্গে দড়ি টানাটানি চলছে বেশ কয়েকজনের। এই কথাগুলোই তো সবচেয়ে বেশি করে উঠে আসা উচিত এমন একটা মর্মান্তিক ঘটনার পরে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর আত্মরবই তো সবচেয়ে বেশি করে কানে বাজা উচিত এই মুহূর্তে। কিন্তু বাজছে রাজনীতির ঢাক-ঢোল, কাড়া-নাকাড়া। শোনা যাচ্ছে দোষারোপ আর গালিগালাজ।

দোষারোপের ভার কাউকে না কাউকে তো বহন করতেই হবে। অবধারিতভাবে আঙুলটা উঠবে পুলিশ-প্রশাসনের দিকেই। জননিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা এবং জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব পুলিশ-প্রশাসনের। সেই দায়িত্ব পালনে পুলিশ-প্রশাসন যদি এরকম শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়, তাহলে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তেই হবে। কিন্তু রাজনীতির অভিসন্ধিমূলক কোলাহল প্রশাসনের সেই ব্যর্থতাকেও কিছু আড়াল করে দিচ্ছে।

আরও পড়ুন: বোমা ফাটতেই বিজেপির দিকে আঙুল তৃণমূলের, এনআইএ তদন্ত চাইলেন দিলীপ

মনে রাখতে হবে, বিস্ফোরণ শুধু নাগেরবাজারে ঘটল এমন নয়। গত ৪ বছরে আরও অনেক বিস্ফোরণ ঘটে গিয়েছে, অগণিত বোমা উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের যে প্রান্তেই হাত বাড়ানো হয়, সেখানেই এখন মেলে বোমার স্তূপ, বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের ভান্ডার। এই বেনজির বারুদের স্তূপে সামান্য স্ফূলিঙ্গপ্রপাত ঘটলেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, তেতে উঠছে খাগড়াগড় থেকে নাগেরবাজার পর্যন্ত। প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কি আদৌ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এ রাজ্যের প্রশাসনের? জননিরাপত্তার বিন্দুমাত্র নিশ্চয়তাও কি রয়েছে? এই প্রশ্নগুলোর জবাব রাজ্যের পুলিশ বা প্রশাসন স্পষ্ট করে দিতে পারবে না সম্ভবত। জবাব না মিললে আঙুল কিন্তু উঠবেই।

Nagerbazar Explosion Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Nagerbazar Blast
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy