ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো এত দিনে চালু। মহানগরে এখন দুটো মেট্রো লাইনের সমন্বয়ে এক সচল নেটওয়ার্ক। নর্থ-সাউথ আর ইস্ট-ওয়েস্ট, দুই লাইন একে অন্যকে ছেদ করছে মধ্য কলকাতায়; পরিভাষায়, এই নেটওয়ার্ক-এর ‘হাব’ সাবেক ধর্মতলা। তবে, মেট্রো-খননের আগেই কিন্তু আমাদের নগর-পরিবহণের তো বটেই, শুধু ট্রেনেরই শতাব্দী-প্রাচীন নেটওয়ার্ক ছিল বইকি— সৌজন্য, ভারতীয়, থুড়ি, ব্রিটিশ রেল।
লন্ডনের অনুকরণে, কলকাতার আশেপাশে, আমাদেরও নেটওয়ার্ক-ঝুলন অনায়াসে সাজানো যায় কেবল পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া ও শিয়ালদহের লোকাল ট্রেনগুলো নিয়েই। তার সঙ্গে যদি নতুন কলকাতা স্টেশন আর চক্ররেল জুড়ি, তা হলে আমাদের রেল আর মেট্রো নেটওয়ার্ক তো হেসেখেলে লন্ডন-প্যারিসকে টক্কর দিতে পারে! এর উপরে সরকারি-বেসরকারি লঞ্চ-নৌকা, বাস-মিনি-ট্রাম, অটো-টোটো, এমনকি পাড়ার রিকশারও সমন্বয় ঘটে, তবে বোধ হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ত পরিবহণ-নেটওয়ার্ক আমাদের শহরেরই হবে।
এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে রোজই আমাদের এই পরিবহণ-নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে হয়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে রিকশা, তার পর একে একে লোকাল ট্রেন, লঞ্চ বা বাস, মেট্রো আর অটো ‘কানেকশন’ ধরে ধরেই আমরা অফিসে পৌঁছই। যাত্রার প্রতি পদে টিকিটের আলাদা আলাদা ভাড়াও গুনতে হয়। কিন্তু, প্রয়োজনীয় যাবতীয় অঙ্গের অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও, আমাদের শহরের পরিবহণ ব্যবস্থাটা কখনও নেটওয়ার্ক হয়ে ওঠেনি। বিভিন্ন শাখাপ্রশাখা পাশাপাশি থেকেও যেন মেলামেশা হয়নি। যেমন, বালিতে উপর-নীচে তিনটে রেললাইন, বড় রাস্তায় বাস, অটো মিলিয়ে সহজেই রমরমা এক ট্রান্সপোর্ট-হাব হওয়ার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তেলে-জলে মিশ খায়নি। একই ভাবে, দমদম জংশনে লোকাল ট্রেন আর মেট্রো রেল একে অন্যের হাত ধরেনি। আমাদের নেটওয়ার্কের বিভিন্ন জংশনে লাইনগুলো একে অন্যকে ছেদ করলেও বিভিন্ন পরিবহণ শাখার মধ্যে পরিষেবার, টাইমটেবিলের, টিকিটের সামঞ্জস্য ও যোগসাধনের চেষ্টা হয়নি।