Advertisement
E-Paper

মৃত্যুক্ষুধা

বাণিজ্যের বিশ্বায়নের জন্য বহু দেশবাসী বহু বিপন্নতা সহ্য করেছে। এ বার বিশ্বায়িত সুশাসনের দায় গ্রহণ করুন রাষ্ট্রনেতারা।

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:১০
সর্বাধিক বিপন্ন আফ্রিকা।

সর্বাধিক বিপন্ন আফ্রিকা।

অনাহারের কারণ যত না শস্য উৎপাদনে ঘাটতি, তার চাইতে অনেক বেশি খাদ্যবণ্টনে অসাম্য, অন্যায়— বিংশ শতাব্দী বার বার এ কথা বুঝিয়ে দিয়েছে। বহু দুঃখার্জিত সেই শিক্ষা আবার যেন ভুলতে বসেছে বিশ্ব। তাই বর্তমানে প্রতি চার সেকেন্ডে এক জনের মৃত্যু ঘটছে অনাহারে। এই তথ্য তুলে ধরে বিশ্বের অনেকগুলি অসরকারি সংস্থা একত্রে আবেদন করেছে, সব দেশের জননেতারা যেন একজোট হয়ে এর মোকাবিলা করেন। একুশ শতকের গোড়ায় রাষ্ট্রপ্রধানরা একত্রে অঙ্গীকার করেছিলেন, বিশ্বকে আর দুর্ভিক্ষ দেখতে হবে না। কিন্তু সে প্রতিশ্রুিত রক্ষিত হল কোথায়? আফ্রিকার দেশগুলিতে খাদ্যাভাব এমন তীব্র হচ্ছে যে, তা ক্রমশ দুর্ভিক্ষের আকার নিচ্ছে। সোমালিয়া, ইথিয়োপিয়া, নাইজিরিয়া, ইয়েমেনের মতো দেশেতে দীর্ঘ দিন অনাহারের প্রকোপ চলছে, যা অক্টোবর থেকে আগামী জানুয়ারির মধ্যে আরও মারাত্মক আকার নিতে চলেছে বলে সাবধান করে দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। তবে এমন কোনও দেশ বা মহাদেশ নেই, যেখানে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়েনি, অনাহারের করাল ছায়া আরও গাঢ় হয়নি। অনেকগুলি কারণ ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। প্রধান কারণ অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তন, এ বছর ভারতেও যার প্রভাব পড়েছে— বৃষ্টির স্বল্পতার জন্য গম ও ধান উৎপাদনে ঘাটতি দেখা গিয়েছে।

সর্বাধিক বিপন্ন আফ্রিকা। পূর্ব আফ্রিকায় খরা তীব্রতর হচ্ছে, সোমালিয়ায় পর পর পাঁচ বছর অনাবৃষ্টিতে কৃষি, পশুপালন বিপর্যস্ত। খাদ্যাভাব, পানীয় জলের অভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘর ছেড়েছেন। খাদ্যাভাবে মৃত্যুর ঘটনা ক্রমবর্ধমান, শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার ভয়াবহ। সেই সঙ্গে রয়েছে অতিমারি-জনিত আর্থিক বিপর্যয়, এবং বিশ্ব জুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা। কোভিড অতিমারি প্রায় সমস্ত দরিদ্র দেশে কর্মহীনতা বাড়িয়েছে, রোজগার কমিয়েছে। দরিদ্রতর মানুষ আরও বিপন্ন হয়েছেন। তার উপর ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ এক মহাসঙ্কট হয়ে এসেছে, কারণ খাদ্যশস্য ও জ্বালানির জন্য বিশ্বের অনেকগুলি দেশ এই দুই দেশের উপর নির্ভরশীল। বিশেষত আফ্রিকার দেশগুলিতে ইউক্রেন গম আমদানি করে বিপুল পরিমাণে। তবে সর্বোপরি দরিদ্রকে বিপন্ন করছে ক্রমবর্ধমান আর্থিক অসাম্য। এক দিকে ধনকুবেরদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, অন্য দিকে বাড়ছে কর্মহীন, অপুষ্ট, ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা। অতিমারি এই চিত্রকে আরও নগ্ন করে দিয়েছে।

বিশ্বের কাছে এমন চূড়ান্ত বৈষম্যের অন্যতম উদাহরণ ভারত। বিশ্বের সর্বাধিক ধনীদের তালিকায় একাধিক ভারতীয়ের স্থান রয়েছে, অতিমারির চরম দুর্দশার মধ্যেও ভারতে কোটিপতিদের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে, তাঁদের মিলিত সম্পদের পরিমাণও অনেক গুণ বেড়েছে। অথচ একই সময়ে ভারতে বেড়েছে ক্ষুধা ও অপুষ্টি। বিশ্বের ক্ষুধা সূচকে ভারতের স্থান ১১৬টি দেশের মধ্যে ১০১ নম্বরে। কেবল অন্য দেশের তুলনায় নয়, নিজের অতীত অবস্থানের তুলনাতেও ভারত দ্রুত পিছিয়ে যাচ্ছে। অতিমারির জন্য বিশ্বে যত মানুষ দারিদ্রে পতিত হয়েছেন, তাঁদের অর্ধেকই ভারতে— এই পরিসংখ্যান স্বস্তিকর নয়। শেষ অবধি প্রশ্নটি সুশাসনের। রাষ্ট্র যেখানে সক্রিয়, সামাজিক ন্যায় নিশ্চিত করতে তৎপর, সেখানে অল্প মানুষের হাতে বিপুল সম্পদ জড়ো হওয়ার সুযোগ পায় না, আইন তার প্রতিরোধ করে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও দুর্গতদের আপৎকালীন সহায়তা থেকে শুরু করে কূটনীতির দ্বারা ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা রাজনীতিরই কাজ। ক্ষুদ্র স্বার্থরক্ষা না করে অগণিত প্রাণরক্ষা করা যে কত প্রয়োজন, তা কি ক্ষুধার্তের মৃত্যুমিছিল দেখাচ্ছে না? বাণিজ্যের বিশ্বায়নের জন্য বহু দেশবাসী বহু বিপন্নতা সহ্য করেছে। এ বার বিশ্বায়িত সুশাসনের দায় গ্রহণ করুন রাষ্ট্রনেতারা।

Starvation Death Global Food Crisis
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy