Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Munawar Faruqui

হাসির ছলে

তাঁহার দ্য নেম অব দ্য রোজ় উপন্যাসে তিনি তির্যক হাসির প্রবল ক্ষমতার কথা বিস্তারে লিখিয়াছিলেন।

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৩৬
Share: Save:

শিল্পমাত্রেই শাসকের প্রতি গভীর প্রশ্নশীল হইতে পারে— বস্তুত, একটি চিন্তাকাঠামো বলিবে যে, ক্ষমতাকে প্রশ্ন করা, তাহার অসঙ্গতির দিকে নির্দেশ করাই শিল্পের প্রধানতম কাজ। ফলে, শিল্পের প্রতি শাসকের— বিশেষত, গণতন্ত্রের তোয়াক্কা না করিয়া ক্রমেই সর্বাধিপত্যকামী হইয়া উঠিতে চাওয়া শাসকের— রোষ স্বাভাবিক। তবুও, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় কেহ প্রশ্ন করিতে পারেন, কোনও কোনও শিল্প কি শাসকের অধিকতর চক্ষুশূল হইয়াছে? স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান মুনাওয়ার ফারুকির উপর ক্রমাগত আঘাত তেমনই সাক্ষ্য দিবে। মুম্বই হইতে রায়পুর হইতে সুরাত, উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হুমকির সম্মুখে বারংবার তাঁহার শো বন্ধ হইয়াছে, এই বার ‘আইনশৃঙ্খলা’র কারণ দর্শাইয়া তাহা বাতিলের পরামর্শ দিল খোদ বেঙ্গালুরু পুলিশই। গত মাসে হাসির ছলে দেশকালের অপ্রিয় বাস্তব তুলিয়া ধরিয়া সরকারের বিরাগভাজন হইয়াছেন বীর দাসও। পরাক্রমকে বিপর্যস্ত করিবার অস্ত্ররূপে হাস্যরস কিঞ্চিদধিক শক্তিশালী, রাষ্ট্র স্বভাবতই তাহাকে তেরছা নজরে দেখে— কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র তো বটেই। কেননা, যে কথা কেঠো রাজনৈতিক বাগাড়ম্বরে ভর করিয়া অপর প্রান্তে পৌঁছাইতে পারে না, রসের মোড়কে তাহা অনায়াসে মর্মে আঘাত করে। বিরুদ্ধমত জনতার হৃদয়গ্রাহী হইলে তাহা রাষ্ট্রকে স্বস্তি দিতে পারে না, অতএব সেই মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করিবার প্রয়াস।

উমবের্তো একো অবশ্য এই ঘটনাক্রমে আশ্চর্য হইতেন না। তাঁহার দ্য নেম অব দ্য রোজ় উপন্যাসে তিনি তির্যক হাসির প্রবল ক্ষমতার কথা বিস্তারে লিখিয়াছিলেন। নাগপুরের দর্শন যে একশৈলিক সমাজব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করিতে চাহে, ভারতের স্ট্যান্ড আপ কমেডি বারংবার তাহার মূলে আঘাত করিতেছে। রাষ্ট্রযন্ত্র প্রত্যাঘাত করিবে, তাহা স্বাভাবিক। কিন্তু, এই প্রত্যাঘাত ইহাও দেখাইয়া দিতেছে যে, গৈরিক রাষ্ট্রযন্ত্রের নিজের প্রতি, নিজের পথের ন্যায্যতার প্রতি আস্থা কতখানি কম। হাসির দমকে তাহাদের দুর্গ ভাঙিয়া পড়ে। ধমক দিয়া ঠাসিয়া যে সমাজ এই গৈরিক জাতীয়তাবাদীরা গড়িতে চাহেন, তাহাতে অন্তর্ঘাত ঘটাইবার একটি প্রকৃষ্ট রাস্তা যে হাস্যরস, সেই কথাটি তাঁহারাই বুঝাইয়া দিতেছেন। রাজার যে কাপড় নাই, এই কথাটি কেহ হাসির ছলে নিরন্তর বলিয়া চলিলে রাজা বিপন্ন হইবেনই। আজ বা কাল।

বেঙ্গালুরু পুলিশ জানাইয়াছে, যাঁহারা ফারুকিকে পছন্দ করেন না, তাঁহারা গোলযোগ বাধাইতে পারেন, তাই তাহা অনুষ্ঠিত না হওয়াই সমীচীন। কিন্তু, বিপদ হইলে তাহা প্রশমন করা ও বিপন্নকে রক্ষা করা পুলিশের কর্তব্য, সঙ্কটের পূর্বাভাস করিয়া বাক্‌স্বাধীনতা দমন করা নহে। বস্তুত, আইনরক্ষার ন্যায় মৌলিক অধিকারের ঢাল ধরিবার কর্তব্যও আইনরক্ষকের পক্ষে সমধিক জরুরি। স্মর্তব্য, ইতিপূর্বে স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া ‘সেন্সর’-এর ভূমিকা লওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনা শুনিতে হইয়াছে পুলিশকে। আদালত এই প্রশ্নও তুলিয়াছে যে, রাষ্ট্রের কবচ না থাকিলে মতপ্রকাশের অধিকার বস্তুটির গুরুত্ব আর থাকে কি? দুর্ভাগ্যের কথা, বারংবার এই অনভিপ্রেত প্রক্রিয়াটিই ঘটিয়া চলিতেছে। বর্তমান জমানায় পুলিশ হইতে সিবিআই, ইডি, সকল প্রতিষ্ঠানই যে কেন্দ্রীয় শাসকদের লেঠেলবাহিনীতে পরিণত হইয়াছে, তাহারই নিত্যনূতন দৃষ্টান্ত মিলিতেছে দেশের হরেক প্রান্তে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Munawar Faruqui Stand up comedian Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE