E-Paper

বিশ্রামের মূল্য

প্রতিটি কর্মক্ষেত্রেই বিশ্রাম ও কাজের একটা নির্দিষ্ট নকশা থাকা প্রয়োজন, যা লঙ্ঘিত হলে দুর্ঘটনা ঘটে, প্রাণ ও সম্পত্তি, উভয়েরই ক্ষতি হয়।

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪ ০৮:৩৬
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

কাজের মধ্যে কত ক্ষণ বিশ্রাম বাধ্যতামূলক করা দরকার ট্রেন চালকদের জন্য, তা নির্ধারণ করতে কমিটি গঠন করল কেন্দ্রীয় সরকার। কেবল চালকদের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্যই নয়, এই পদক্ষেপ জরুরি যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্যেও। কর্মীদের যথেষ্ট বিশ্রামের সময় না দিলে কাজের ক্ষতি হয়, ঘটতে পারে দুর্ঘটনাও— এই সত্যটি নিয়োগকারীরা জানেন, কিন্তু সহজে মানতে চান না। বিমানচালকদের জন্য বিশ্রামের সময় নির্দিষ্ট রয়েছে। ট্রেন চালকদের জন্যেও এমন বিধি রয়েছে, কিন্তু কর্মীর সংখ্যায় ঘাটতির জন্য বর্তমানে ভারতীয় রেলের ট্রেন চালকদের দিনে একটানা যতক্ষণ কাজ করা উচিত, তার চেয়ে অনেকটাই বেশি কাজ করতে হয়। ক্লান্তির ফলে অসতর্কতা অস্বাভাবিক নয়। ভারতে বড় বড় ট্রেন দুর্ঘটনার অনেক ক’টিতেই রেলকর্মীদের ভুলকে প্রধান বা অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অথচ, রেল-সুরক্ষার জন্য বরাদ্দ টাকা পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য যতটা ধার্য হয়েছে, রেলকর্মীদের কাজের পরিকাঠামোর উন্নয়নে অতটা হয়নি। যথাযথ বিশ্রামের সময় ও তার উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন, এই দাবি রেলকর্মীরা দীর্ঘ দিন ধরেই করে আসছেন। গত কয়েক বছরে চালকদের বিশ্রামের জায়গার পরিবেশ উন্নত করা হয়েছে, বেশ কিছু ইঞ্জিনে শৌচালয়ও তৈরি হয়েছে। ট্রেন চালকদের শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ রাখার ব্যবস্থা করা রেল-কর্তৃপক্ষেরই কর্তব্য। কেন্দ্রের শ্রম মন্ত্রকের নির্দেশে সম্প্রতি জাতীয় শ্রম কমিশনারকে চেয়ারম্যান করে যে কমিটি সম্প্রতি গঠিত হল, আশা করা যায় তার সুপারিশ ট্রেন চালক ও যাত্রী, উভয়কেই আরও সুরক্ষিত করবে।

তবে, এই সঙ্কট কেবল ট্রেন চালকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। প্রতিটি কর্মক্ষেত্রেই বিশ্রাম ও কাজের একটা নির্দিষ্ট নকশা থাকা প্রয়োজন, যা লঙ্ঘিত হলে দুর্ঘটনা ঘটে, প্রাণ ও সম্পত্তি, উভয়েরই ক্ষতি হয়। ভারতে ট্রাক চালকদের মধ্যে একাধিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, তাঁরা একটানা কয়েক দিন ধরে ট্রাক চালান, ক্লান্তিতে স্টিয়ারিং হাতেই তাঁরা নিদ্রালু হয়ে পড়েন, এবং তাতেই বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে। বহু কলকারখানাতে দেখা গিয়েছে, একাধিক শিফটে কর্মরত শ্রমিকের সামান্য ত্রুটিতে মস্ত দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। শৌচাগারে যাওয়ার সময়-সুযোগও থাকে না অনেকের। একটানা অতি দীর্ঘ সময় ‘ডিউটি’-র ফলে শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হয়, কর্মশক্তি কমে। অতিশ্রম, অসুস্থতা, প্রাণহানি, পঙ্গুত্ব, কর্মচ্যুতি— ভারতে শ্রমিকদের কর্মজীবনের এই বিপন্নতার অন্যতম কারণ কাজের অনির্দিষ্ট সময়, পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব।

নয়া চারটি শ্রম কোড কাজের সময়কে নমনীয় করেছে। অতএব কর্মক্ষেত্রে যথাযথ বিশ্রামের পরিবেশ এবং বিশ্রামের নির্ধারিত সময় সব কর্মক্ষেত্রের জন্য নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। ঠিকাদারের মাধ্যমে নিযুক্ত শ্রমিকরাও যাতে সেই সুযোগ পান, তা দেখতে হবে। শ্রমিকের সংখ্যা কমিয়ে, অল্পসংখ্যক শ্রমিককে একাধিক শিফট-এ কাজ করানোর প্রবণতা বেড়েছে অনেক শিল্পে। মজুরি সাশ্রয়ের এই কৌশল যে বিপজ্জনক এবং অমানবিক, ঠিকাদার এবং নিয়োগকারীদের মধ্যে সেই বোধ গড়ে তুলতে হবে। বিশ্রামহীন ভাবে একটানা কাজ করলে বেশি টাকার লোভ দেখানোও বিপজ্জনক। শিল্প ও শ্রমিক, উভয়েরই স্বার্থরক্ষায় চাই কর্মীর যথেষ্ট বিশ্রাম।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Indian Railways Central Government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy