E-Paper

হন্তারক

দক্ষিণ-পূ‌র্ব রেলের খড়্গপুর-ঝাড়গ্রাম শাখার বড়বাড়ির জঙ্গলে কয়েক দিন ধরেই ২৫-৩০টি হাতির আনাগোনা। তাদের দলে শাবকও ছিল। নিকটেই খড়গপুর-টাটানগর ব্যস্ত লাইন। গত দশকেও এই বিভাগের দলমা-খড়্গপুর-টাটানগর অংশে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস তিনটি হাতির মৃত্যুর কারণ হয়।

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৫ ০৭:৩৩

এশীয় হাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা ক্রমশ বাড়ছে। অনুমান, বুনো এশীয় হাতির সংখ্যা মোটামুটি ৫২,০০০। এরা ১৩টি দেশ জুড়ে রয়েছে। তার মধ্যে ৩০ হাজারই ভারতে বিচরণ করছে। সরাসরি এদের কবরস্থান বলেই উল্লেখ করা হচ্ছে অবিবেচক মানুষে ভরা উন্নয়নশীল দেশটির ক্রমবর্ধমান সড়কপথ ও রেললাইনকে। গত দশকে পশ্চিমবঙ্গে রেল-দুর্ঘটনায় হাতির মৃত্যুর বাড়বাড়ন্ত নিয়ে তীব্র সমালোচনার পর কয়েক বছর অঘটনে রাশ পড়েছিল, কিন্তু পুরনো অভিযোগ ফিরে এসেছে ঝাড়গ্রামের হাতিমৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে। মধ্যরাতে দ্রুতগামী জনশতাব্দী এক্সপ্রেস দু’টি শাবক-সহ একটি মা-হাতিকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে গিয়েছে। প্রমাণ করেছে, প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণ নিয়ে সচেতনতা ও কর্মোদ্যোগে এই রাজ্যের নীতি-নিয়ন্তারা বাকি দেশের চেয়ে কত পিছিয়ে আছেন।

দক্ষিণ-পূ‌র্ব রেলের খড়্গপুর-ঝাড়গ্রাম শাখার বড়বাড়ির জঙ্গলে কয়েক দিন ধরেই ২৫-৩০টি হাতির আনাগোনা। তাদের দলে শাবকও ছিল। নিকটেই খড়গপুর-টাটানগর ব্যস্ত লাইন। গত দশকেও এই বিভাগের দলমা-খড়্গপুর-টাটানগর অংশে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস তিনটি হাতির মৃত্যুর কারণ হয়। তাই হাতির গতিবিধি বিষয়ে এত্তেলা দিয়ে রেলকে গতি কমিয়ে রাখার পরামর্শ ছিল বন দফতরের প্রথম কর্তব্য। কিন্তু, অন্ধকারে হাতির উপস্থিতি বিষয়ে ওয়টস্যাপে বার্তা ফেলে দিয়ে দায় সেরেছে দফতরের কর্মীরা। অন্য দিকে, বিলম্বের রোগে ন্যুব্জ রেল এসেছে নির্দিষ্ট সময়ের সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর। নষ্ট সময়ের ঘাটতি মেটাতে হাতির পদচিহ্ন আঁকা পথটিকে বেছেই ১০০ কিলোমিটার গতিও তুলেছে। এই বিপুল অব্যবস্থা, গাফিলতির সম্মিলিত ফল এই প্রাণহানি। দুর্ঘটনায় হাতিমৃত্যু আটকাতে গত দু’দশকে বহু রাজ্য বন মন্ত্রকের পরামর্শগুলি মেনে লাভবান হয়েছে। রেললাইনের চার পাশের তৃণভূমি ছেঁটে হাতিকে অন্য পথে চালিত করার চেষ্টা, পশু চলাচলের পথে গতি নিয়ন্ত্রণের চিহ্ন রাখা এবং স্টেশন মাস্টার ও লোকোপাইলটকে হাতির অবস্থান সম্পর্কে অবগত করার জন্য কর্মীর ব্যবস্থা তারই প্রচলিত গুটিকয়েক। এগুলি মেনে চললে যথেষ্ট ফল পাওয়া সম্ভব। উত্তর ভারতে দুর্ঘটনা রুখতে অত্যাধুনিক সেন্সর পর্যন্ত ব্যবহার হচ্ছে। সেখানে, একটি সময়মতো ফোন-বার্তার মারফত যোগাযোগ নিশ্চিতিতে আলস্য শাবক-সহ হাতির প্রাণ কাড়ল। পশুমৃত্যু না হয় নেহাত অদরকারি, রেল চলাচলে দীর্ঘ বিপর্যয়ের কথা ভেবেও গাত্রোত্থান সম্ভব হল না?

রেল ও বন দফতরের পারস্পরিক দোষারোপের প্রক্রিয়া আরও হতাশাজনক। দুই দফতরের সুসম্পর্ক, ঘন ঘন বৈঠক দুর্ঘটনা প্রশমনের আলোচনা সুগম করে। এগুলি তো ন্যূনতম চাহিদামাত্র, বন্যপ্রাণ রক্ষায় অন্য রাজ্যের মতো আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণই এ রাজ্যেও লক্ষ্য হওয়া উচিত। কারণ, হিসাব মতো দেশের এক-ষষ্ঠাংশ হাতি চলার বন-করিডরগুলি এ রাজ্যে। পথগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করলে হাতিরা অন্য এলাকায় আটকে পড়বে, মানবজীবন তাতে বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা। রেলপথে সঙ্গীদের প্রাণ যাচ্ছে দেখলে মানুষের প্রতি গজরাজের আক্রোশও বাড়তে পারে। পশুকে আপদ রূপে দেখার প্রবণতা বদলে প্রাণিসম্পদ রূপে তাদের গুরুত্ব অনুধান করা জরুরি। অজ্ঞতা, অবহেলাই মানব-পশু সংঘাতের বিপদ ডেকে আনছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Elephant Death Elephants Forest department

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy