Advertisement
E-Paper

অ-স্বচ্ছ

শারীরিক সমস্যা তো বটেই, পরিসংখ্যান বলছে, গণশৌচাগারের অভাবে ৫০ শতাংশ মেয়ে মানসিক চাপে ভোগেন। নিরাপত্তার প্রশ্নটিও অগ্রাহ্য করার নয়।

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৪৫
পরিচ্ছন্ন শৌচালয় ব্যবহারের অধিকার একটি সভ্য দেশের প্রতিটি মেয়ের থাকা প্রয়োজন।

পরিচ্ছন্ন শৌচালয় ব্যবহারের অধিকার একটি সভ্য দেশের প্রতিটি মেয়ের থাকা প্রয়োজন। ফাইল চিত্র।

ভারতে প্রতি বাড়িতে শৌচালয় তৈরির কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্মের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়াসও চলছে। কিন্তু সেই দেশেই মেয়েরা যখন পথে বেরোন, তাঁরা পরিচ্ছন্ন শৌচালয়ের সুবিধা পান কি? শৌচালয় নিয়ে প্রচারসর্বস্বতার আড়ালের চিত্রটি কী, তা সম্প্রতি ধরা পড়ল পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন থানায় মহিলা পুলিশকর্মীদের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। অনেক থানায় রাত আটটার পর মহিলা কর্মীদের কার্যত ছুটি হয়ে যায়। কারণ, তাঁদের জন্য শৌচালয়ের সুবন্দোবস্ত নেই। প্রত্যন্ত এলাকার থানাতে শৌচালয় ব্যবহারের প্রয়োজন পড়লে অনেক দূরে যেতে হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে অন্যত্র যেতে হলে সঙ্গে থাকে না বায়ো-টয়লেটের গাড়ি। অর্থাৎ, মহিলা কর্মী থাকলে শৌচালয়ের মতো ন্যূনতম সুবিধাটুকু থাকা যে প্রয়োজন, সেই বোধই নেই।

মেয়েদের শৌচালয় নিয়ে অব্যবস্থার চিহ্ন সর্বত্র। কিছু দিন আগে জানা গিয়েছিল যে, উত্তরবঙ্গের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলে তিন শিক্ষিকা এবং ছাত্রীদের জন্য কোনও শৌচালয় না থাকায়, তাঁদের যথাক্রমে প্রতিবেশীদের বাড়ি এবং খোলা মাঠ ব্যবহার করতে হয়। বহু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে উপযুক্ত শৌচাগার না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয় শিশু থেকে কর্মী, সকলকেই। ২০১২ সালে ‘দিশা’ প্রকল্পে হাসপাতাল চত্বরে আশা কর্মীদের জন্য পৃথক বিশ্রামাগারের সঙ্গে শৌচাগার নির্মাণের কথা বলা হয়েছিল। সেই প্রকল্প সর্বত্র গড়ে উঠেছে কি? খাস কলকাতায় কিছু দূর অন্তর সুলভ শৌচালয় গড়ে উঠলেও তার ক’টি মেয়েদের ব্যবহারের উপযুক্ত? মনে রাখা প্রয়োজন, মেয়েদের শৌচালয় বলতে শুধুমাত্র একটি কাঠামো বোঝায় নয়, তাতে কিছু বিশেষ সুবিধা থাকা আবশ্যক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-সহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের শৌচালয়ে সুলভে স্যানিটারি ন্যাপকিন পাওয়ার দাবি উঠলেও হাতেগোনা ক্ষেত্র ছাড়া সেই সুবিধার দেখা মেলে না। এমনকি পর্যাপ্ত জলটুকুও না থাকায় শৌচাগারগুলি সংক্রমণের আঁতুড়ঘর হয়ে ওঠে।

সুতরাং, অনেক মেয়েকেই দিনে দশ ঘণ্টা শৌচাগারে না যাওয়ার অভ্যাস রপ্ত করতে হয়। শারীরিক সমস্যা তো বটেই, পরিসংখ্যান বলছে, গণশৌচাগারের অভাবে ৫০ শতাংশ মেয়ে মানসিক চাপে ভোগেন। নিরাপত্তার প্রশ্নটিও অগ্রাহ্য করার নয়। গণশৌচাগার ব্যবহার করতে গিয়ে পুরুষদের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে, এমন উদাহরণ কম নেই। এই দেশে লিঙ্গবৈষম্যের শিকড়টি যে কত গভীরে প্রোথিত, মেয়েদের উপযুক্ত শৌচালয়ের অভাব তার একটি প্রকৃষ্ট প্রমাণ। বাড়ির বাইরে পা রাখলেই স্বাস্থ্য, সুরক্ষা সংক্রান্ত নানাবিধ বাধার পাহাড় যদি সৃষ্টি হয়, তবে তাঁরা যথেষ্ট সংখ্যায় কর্মক্ষেত্রে যোগদান করবেন কী ভাবে? বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে মহিলাদের সম্মানরক্ষার প্রসঙ্গটি উঠে আসে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কর্মক্ষেত্রে আরও বেশি সংখ্যায় মেয়েদের যোগদানের উপরজোর দেন, অথচ সেই দেশেরই এক রাজ্যে মেয়েদের একাংশকে এখনও পরিচ্ছন্ন শৌচালয়ের অভাবে প্রতিনিয়ত ভুগতে হয়। ঋতুকালীন সময়ে স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্রে না গিয়ে বাড়িতে বসে থাকতে হয়। পরিচ্ছন্ন শৌচালয় ব্যবহারের অধিকার একটি সভ্য দেশের প্রতিটি মেয়ের থাকা প্রয়োজন। স্বচ্ছ ভারত সেই সভ্যতার অনুশীলন করবে কি?

Society Women
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy