E-Paper

সুযোগ

৩১ জন এনডিএ-এর পক্ষে, ২০ জন বিরোধী সাংসদ, সাতটি দলের প্রতিটিতে আট-নয় জন প্রতিনিধি। এমন ঘটনা ভারতীয় কূটনীতিতে অভূতপূর্ব। দীর্ঘ ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথে এতে অবশ্যই এ বার এক নতুন মাত্রা যোগ হল এই সংগঠিত সমন্বিত ডেলিগেশন-এর জন্য, শেষ পর্যন্ত ফলাফল যেমনই দাঁড়াক না কেন।

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৫ ০৪:৪৭

ইতিমধ্যে ভারতের সর্বদলীয় প্রতিনিধিবৃন্দ ছড়িয়ে পড়েছেন নানা দেশে, সরাসরি তাঁরা প্রচার করছেন অপারেশন সিঁদুর সম্পর্কে তথ্যপ্রমাণ, ভারতের অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি। জানাচ্ছেন, পাকিস্তান সরকার ভারতের মাটিতে হামলাকারী জঙ্গিদের পক্ষ নিয়ে আক্রমণ করাতেই ভারত প্রত্যাঘাত করেছে। জানাচ্ছেন, নিজের উদ্যোগেই ভারত এই সংঘাত আরও তীব্র করার ঝুঁকি থেকে সরে এসেছে, অন্য কোনও দেশের মধ্যস্থতার জন্য নয়। সব মিলিয়ে ৫৯ জন ভারতীয় প্রতিনিধি যাবেন ৩২টি দেশে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কেন্দ্রভূমি ব্রাসেলস-সহ। বিদেশে তাঁরা সকলেই এক সুরে, এক বয়ানে কথা বলবেন— এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী তাঁদের ভাষ্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন— যদিও তাঁরা ভারতের মাটিতে আলাদা আলাদা শত্রুভাবাপন্ন দলের নেতা। ৩১ জন এনডিএ-এর পক্ষে, ২০ জন বিরোধী সাংসদ, সাতটি দলের প্রতিটিতে আট-নয় জন প্রতিনিধি। এমন ঘটনা ভারতীয় কূটনীতিতে অভূতপূর্ব। দীর্ঘ ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথে এতে অবশ্যই এ বার এক নতুন মাত্রা যোগ হল এই সংগঠিত সমন্বিত ডেলিগেশন-এর জন্য, শেষ পর্যন্ত ফলাফল যেমনই দাঁড়াক না কেন। অপারেশন সিঁদুর ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক স্তরে বিরাট ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, ফলে অনুমান অসঙ্গত নয় যে, ভারতের এই প্রচারক মণ্ডলীও যথোচিত আন্তর্জাতিক আগ্রহ তৈরি করতে পারবে, ভারতের জাতীয় অবস্থানটিকে আর একটু স্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।

গ্রহণযোগ্যতার কথাটি উঠছে এই কারণেই যে, প্রাথমিক ভাবে পহেলগাম সন্ত্রাস-পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের দিকে আন্তর্জাতিক সমর্থনের পরিমাণ ছিল কম। এমনকি অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন আইএমএফ থেকে পাকিস্তানের ভান্ডারে যে বিপুল অঙ্কের বিদেশি সহায়তা প্রবেশ করে, সেখানেও সমর্থকের অভাবে ভারত যথেষ্ট অর্থময় বাধাদান করতে পারেনি। এমতাবস্থায়, সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানের লাগাতার দ্বিচারিতা, ক্রমাগত জঙ্গি মদত, ভারতীয় কাশ্মীরে সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা এবং ভারতের সার্বভৌমতার উপর চূড়ান্ত আক্রমণ শাণানো— পাকিস্তান সম্পর্কে এ সব কথা আবার নতুন করে বিশ্বদরবারে ছড়ানো অবশ্যপ্রয়োজন— সংগঠিত কূটনৈতিক মঞ্চেও, আবার নাগরিক সমাজ সমাবেশেও। একই ভাবে, অপারেশন সিঁদুরের পর ট্রাম্পের ধারাবাহিক মন্তব্যেও ভারতীয় স্বার্থ ইতিমধ্যে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-স্বার্থের হিসাবে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভিযোগের মতো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইমেজ-ভিত্তিক ‘ক্ষতি’র থেকে দ্রুত উদ্ধারকল্পে বহুমাত্রিক আন্তর্জাতিক প্রচার ভিন্ন গত্যন্তর নেই। সেই দিক থেকে এ বারের সর্বদলীয় প্রচার প্রকল্প সুবিবেচিত ও সময়োচিত।

তবে এমন একটি দৃষ্টান্তস্বরূপ কূটনৈতিক প্রয়াসের মধ্যে দুর্ভাগ্যক্রমে মিশে রইল রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতার নিদর্শনও। যে ভাবে বিরোধী দলগুলি থেকে প্রতিনিধি মনোনয়ন হল, নানা দিক থেকে তা আপত্তিকর। প্রথমত, কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধীরা যথার্থ ভাবেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে তাদের দলের প্রতিনিধির নাম সরকার সরাসরি স্থির করে ফেলায়। গণতান্ত্রিক দেশে এমন ধরনের সর্বদলীয় প্রতিনিধি মণ্ডলী নির্মাণের কতকগুলি কর্তব্য-অকর্তব্য থাকার কথা, যার মধ্যে পড়ে বিরোধী দলগুলিকে নিজেদের প্রতিনিধি চয়ন করার স্বাধীনতা দেওয়া, প্রয়োজনে মনোনয়ন নিয়ে আলোচনা করা। দ্বিতীয়ত, এই ধরনের আলোচনা প্রকাশ্যে এনে অকারণ বিতর্ক না বাড়িয়ে প্রচ্ছন্ন রাখাই সভ্যতন্ত্রোচিত। কিন্তু কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের নির্বাচন নিয়েই যতখানি রাজনৈতিক জলঘোলা এবং সমাজমাধ্যমে তুফান তোলা দেখা গেল, তা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় ও পীড়াদায়ক। গৌরবের রাজনীতি তৈরি করার সুযোগ এ দেশে দুর্লভ। সেই সুযোগগুলিও যদি অপ্রয়োজনীয় বিতর্কমুহূর্তে পরিণত হয়, তা গণতন্ত্রের মর্যাদা বাড়ায় না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Vikram Misri Operation Sindoor Operation Sindoor Effect India-Pakistan Tension

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy