E-Paper

আলতো ঠেলা

বাজারজাত ফাস্ট ফুডে পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে স্বীকারোক্তি আবশ্যিক। এ বিষয়ে ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা ও মান বিষয়ক কর্তৃপক্ষের (এফএসএসএআই) স্পষ্ট নির্দেশিকা আছে।

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৫ ০৫:৫৯

দেশ জুড়ে হৃদ্‌রোগ ও তজ্জনিত অকালমৃত্যু বাড়ছে। চিকিৎসকেরা অনেকাংশেই দায়ী করছেন খাদ্যাভ্যাস ও জীবনশৈলীকে। মানুষের অভ্যাস পাল্টানোর একটি প্রয়াস দেখা গেল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশিকায়। তারা কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে জানাল, শিঙাড়া, কচুরি, বড়া পাও কিংবা জিলিপির মতো ভাজাভুজি-মিষ্টির ক্যালরির হিসাব ও তার বিপজ্জনক দিকগুলি জানিয়ে বোর্ড লাগাতে হবে, জনবহুল জায়গায় এই শারীরিক ঝুঁকির কথা বিজ্ঞাপিত করতে হবে। এমন খাদ্যে তেল, চিনি, চর্বির পরিমাণ অত্যন্ত বেশি। ‘অয়েল অ্যান্ড ফ্যাট বোর্ড’-এ যুক্ত চিকিৎসকের সাক্ষ্য, এই আহার্যে তরুণ বয়স থেকেই স্থূলতা, মধুমেহ, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদ্‌রোগের মতো অসুখ হচ্ছে। তালিকায় আরও রয়েছে লাড্ডু, চিপস, পকোড়া, গুলাবজামুন প্রভৃতি দেশি জলখাবার।

বাজারজাত ফাস্ট ফুডে পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে স্বীকারোক্তি আবশ্যিক। এ বিষয়ে ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা ও মান বিষয়ক কর্তৃপক্ষের (এফএসএসএআই) স্পষ্ট নির্দেশিকা আছে। তা সত্ত্বেও আইনের ফাঁক গলে বেরোতে ব্যবসায়ীরা এগুলি মোড়কে দুর্বোধ্য ভাবে ছোট হরফে লিখে দায় এড়ান। এই স্বীকারোক্তি যাতে মোড়কের উপরে, খোলা বিক্রয়স্থলের সামনে বোর্ডে স্পষ্ট ও সোজাসুজি ভাষায়, দৃষ্টিগোচর ভাবে লেখা হয় তার জন্য নিয়ম প্রয়োজন। খাদ্যটি দেশি বা বিদেশি, সে বিবেচনার প্রয়োজন নেই। তবে, শিঙাড়ার মতো খাবারের ক্ষেত্রে যে-হেতু প্যাকেটের বালাই নেই, ফলে তাতে পুষ্টিগুণ সংক্রান্ত তথ্যপ্রকাশেরও অবকাশ নেই। কাজেই, সেগুলির ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা আরও বেশি জরুরি। এ রাজ্যের শাসক দলের প্রশ্নবাণ, শিঙাড়া-জিলিপি কি সিগারেটের মতো ক্ষতিকর যে বিধিসম্মত সতর্কীকরণ দিতে হবে? সচেতন ব্যক্তিমাত্রের উত্তর, হ্যাঁ। দেশি ও বিদেশি সব রকম ফাস্ট ফুডের ক্ষেত্রেই তা কী ভাবে রক্তে শর্করা, ট্রাইগ্লিসারাইড, কোলেস্টেরল বাড়ায়, প্রাণঘাতী রোগকে সুগম করে— বলিষ্ঠ ভাবে তা লেখা থাকা বিধেয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কোনও মতেই পিছু হটার কথা নয়।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, মানুষের খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপ ঠিক নয়। গোমাংস হোক বা ভাজাভুজি— সত্যই কোনও ক্ষেত্রে একটি উদার গণতন্ত্র মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তবে, যে খাবার মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ, জনস্বাস্থ্যে কুপ্রভাব ফেলছে, তার থেকে ক্রেতাকে দূরে রাখতে পরিবেশে ইতিবাচক সূক্ষ্ম পরিবর্তনের মাধ্যমে ‘আলতো ঠেলা’ দেওয়া যায়। আচরণবাদী অর্থনীতি একেই ‘নাজ’ আখ্যা দিয়েছে। ২০২৩-এ এক সমীক্ষা জানিয়েছিল, মানুষের খাদ্যাভ্যাস যে হারে অস্বাস্থ্যকর হয়ে চলেছে তাতে ২০৩৫-এর মধ্যেই বিশ্বের অর্ধেক মানুষ স্থূলতায় আক্রান্ত হবেন যা হাড়ক্ষয়, হৃদ্‌রোগ, কর্কটের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। এই স্বাস্থ্যবিপর্যয় প্রতিরোধ সম্ভব। সেই লক্ষ্যেই খাদ্যপণ্যের সঙ্গে নানা ‘ইনফর্মেশন নাজ’ বা ‘তথ্য দিয়ে ঠেলা’ জুড়ে সুফল পেয়েছে বহু দেশ। চলভাষে বার বার বার্তা প্রেরণে আমেরিকায় ফল-আনাজ কেনার প্রবণতা ঊর্ধ্বগামী। তবে, একই সঙ্গে ‘পজ়িশন নাজ’ বা চটকদার মোড়কে কৌশলী অবস্থানের মাধ্যমে ভাজা ও মিষ্টির সুলভ ও সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যকর বিকল্পকে জনসমক্ষের নাগালে এগিয়ে দেওয়ার কর্তব্যটিও পালনীয়। তবে সর্বাগ্রে প্রয়োজন রাজনীতিকদের সচেতনতা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

sudden death heart disease Central Government Government of West Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy