E-Paper

নেশার ফাঁদ

নেশার ঠেকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় এক দল বহিরাগত দুষ্কৃতী আগ্নেয়াস্ত্র, রড, লাঠি নিয়ে আক্রমণ চালায়। আক্রমণের হাত থেকে ছাড় পাননি পাড়ার মহিলারাও।

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২৫ ০৬:১৯

বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন অন্যায় চলতে দেখেও চোখ বন্ধ করে থাকা পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ-প্রশাসনের একটি পুরনো রোগবিশেষ। এ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে চলা মদ ও মাদকের ঠেক এই নিষ্ক্রিয়তার অন্যতম প্রমাণ। ঠেকগুলিকে নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। কারণ, এখানে শুধুমাত্র মদ ও মাদকের অবৈধ কারবারই চলে না, নানা অসামাজিক কাজেরও বহু উদাহরণ মেলে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে প্রতিবাদীদের উপর আক্রমণের ঘটনাও অজস্র। অথচ, বহু ক্ষেত্রেই পুলিশ উদ্যোগী হয়ে ঠেকগুলি পাকাপাকি ভাবে তোলার ব্যবস্থা করে না। অভিযোগ পেলে সাময়িক কিছু ব্যবস্থা করে, ধরপাকড় চলে, অতঃপর পূর্বাবস্থাই ফেরত আসে। ঠিক সেই চিত্রটিই দেখা গেল হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর এলাকার একটি মাদকের ঠেকে। ওই নেশার ঠেকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় এক দল বহিরাগত দুষ্কৃতী আগ্নেয়াস্ত্র, রড, লাঠি নিয়ে আক্রমণ চালায়। আক্রমণের হাত থেকে ছাড় পাননি পাড়ার মহিলারাও। পরে পুলিশবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বছর কুড়ি আগে এই ঠেকেই মাদক নিয়ে গোলমালের জেরে এক যুবক খুন হয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও কী করে এত দিন ধরে পুলিশের চোখের সামনেই মদ-মাদকের কারবার চলল, প্রশ্নটি নাগরিককে উদ্বিগ্ন করে।

উদ্বেগের আরও কারণ, আইনরক্ষকদের পরিস্থিতিকে লঘু করে দেখানোর প্রাণপণ চেষ্টা। তাঁরা দাবি করেছেন, ওই মাঠে মাঝেমধ্যেই পুলিশ হানা দেয়, গ্রেফতারও করা হয়। অথচ, তাঁরাই জানিয়েছেন এই ঠেকে নেশা করে পাশের পাড়ায় গোলমাল বাধানো নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পুলিশের ‘নিয়মিত’ হানার পরেও যদি কোনও এলাকার দুষ্কৃতী চিত্র না পাল্টায়, তবে নিরাপত্তা দেবে কে? না কি ধরেই নিতে হবে এমন এলাকায় আগামী দিনেও জঙ্গলের শাসনই চলবে, সুবিচার চেয়েও ফল মিলবে না। লক্ষণীয়, নেশার ঠেকগুলিতে নিছক ‘মদ খেয়ে মারামারি’ হয় না, এ এক অন্ধকার সাম্রাজ্য, যা বহু স্তরে বাসিন্দাদের বিপন্ন করে। অল্পবয়সিদের মধ্যে মাদকাসক্তির হার বাড়ে, টাকার ভাগ নিয়ে নিত্য অশান্তি খুনোখুনি লেগেই থাকে, চুরি ছিনতাইও বাড়ে। ঘরে-বাইরে সবচেয়ে হেনস্থার শিকার হন মেয়েরা। ঘরের পুরুষটি নেশায় আচ্ছন্ন হলে গার্হস্থ হিংসা লাগামহীন হয়। অন্য দিকে, অসামাজিক কাজকর্ম মেয়েদের নিরাপদে বাইরে বেরোতে দেয় না। বহু ক্ষেত্রে মেয়েদের ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির পিছনে সংশ্লিষ্ট এলাকার নেশার ঠেকগুলিতে আসা দুষ্কৃতী যোগ দেখা গিয়েছে। ভুক্তভোগী মেয়েরাই নেশার ঠেক ভাঙতে, পুলিশে অভিযোগ জানাতে অগ্রণী ভূমিকা নেয়।

এমতাবস্থায় পুলিশের কর্তব্য ছিল প্রতিবাদীদের পাশে দাঁড়িয়ে অভিযোগের নিষ্পত্তি। কিন্তু তা হয় না। অবশ্য পুলিশ সর্বদাই নেশার ঠেক বিষয়ে নিষ্ক্রিয় থাকে না, ক্ষেত্রবিশেষে তার অতি সক্রিয়তাও লক্ষণীয়। বছর দুয়েক আগে খড়্গপুরে চোলাই মদের রমরমায় পুলিশের ব্যর্থতার খবর তুলে ধরায় গ্রেফতার হতে হয়েছিল সাংবাদিককে, জুড়েছিল তফসিলি জনজাতি অত্যাচার প্রতিরোধ আইনের মতো কঠোর ধারাও। ছাড় পাননি প্রতিবাদী মহিলাও। মনে রাখতে হবে, মদ-মাদকের কারবার একটি সামাজিক ব্যাধি। তাকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করাতেই সমাজের সার্বিক শান্তি-কল্যাণ নিহিত। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন স্বয়ং যদি রাজনীতি-নিয়ন্ত্রিত হয়ে ওঠে, তবে সামাজিক কল্যাণের আশা সুদূরপরাহত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Howrah anti social activities

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy