E-Paper

অশান্ত পড়শি

রাজা জ্ঞানেন্দ্র-র সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের জেরে দু’জনের মৃত্যু এবং শতাধিক মানুষের আহত হওয়ার জেরে অচল হয়ে পড়েছে দেশের বিস্তীর্ণ অংশ।

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৫:৩২

আবার অগ্নিগর্ভ নেপাল। রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের সূত্রে বর্তমানে অশান্তির আবহ ভারতের পড়শি রাষ্ট্রটিতে। রাজধানী কাঠমান্ডু-সহ সংলগ্ন এলাকায় রাজা জ্ঞানেন্দ্র-র সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের জেরে দু’জনের মৃত্যু এবং শতাধিক মানুষের আহত হওয়ার জেরে অচল হয়ে পড়েছে দেশের বিস্তীর্ণ অংশ। অভিযোগ, আন্দোলনকারীরা প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে ফেরানোর দাবিতে একাধিক সরকারি বাসভবন ভাঙচুরের পাশাপাশি নানা স্থানে অগ্নিসংযোগও করে। সেই সঙ্গে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি-র (ইউনিফায়েড মার্ক্সিট লেনিনিস্ট) প্রধান তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি এবং বিরোধী দলনেতা প্রচণ্ডের বিরুদ্ধেও স্লোগান ওঠে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কার্ফু জারি ও সেনা টহল চালাতে হয় কাঠমান্ডু-সহ বিভিন্ন শহরে। গত ফেব্রুয়ারিতে এক ভিডিয়ো-বার্তায় দেশের অস্থির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশবাসীকে পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করেন জ্ঞানেন্দ্র। তাঁর প্রতি অভূতপূর্ব সমর্থনের ঢল নামে। রব ওঠে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’-র প্রত্যাবর্তনেরও।

লক্ষণীয়, প্রায় দু’দশক আগে ভারতের উত্তরের পড়শি রাষ্ট্রটিতে প্রচলিত ছিল রাজতন্ত্র। এক রাজকীয় অভ্যুত্থানের পরে ২০০১ সালে জ্ঞানেন্দ্র রাজা হলেও তাঁর একনায়কতান্ত্রিক কার্যকলাপের জেরে ২০০৬ সালে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। এর পরে ২০০৮ সালে সংবিধান সংশোধন করে ২৪০ বছরের পুরনো রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে সে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। এবং এর বছর সাতেকের মধ্যেই নেপালে গৃহীত হয় নতুন ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ সংবিধান। ২০০৮ সালে নেপাল যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রে পরিণত হওয়ার পরবর্তী প্রায় দু’দশকে দেশের মূল রাজনৈতিক দলগুলি জোট বেঁধে দেশ শাসন করেছে বটে, তবে মানুষ যে স্থায়িত্ব এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের আশা করেছিল তা তারা দিতে পারেনি। বস্তুত, গত সতেরো বছরে সে দেশে ১৪টি সরকার তখ্‌তে এসেছে। এই সময়ে অর্থনীতির কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেনি, উল্টে মূল্যস্ফীতি জনসাধারণের জীবন আরও দুঃসহ করে তুলেছে। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাবে অনেকে বাধ্য হচ্ছেন বিদেশে পাড়ি দিতে। অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রী-সহ দেশের নেতা ও সরকারি আধিকারিকদের দুর্নীতি এবং অবৈধ কার্যকলাপের ফলে ফের জনসাধারণের মনে রাজতন্ত্রকামী মনোভাব জাগ্রত হচ্ছে।

নিজেদের লক্ষ্যপূরণে যদি রাজতন্ত্রকামীরা আগামী দিনে হিংসার পথ অবলম্বন করেন, তবে স্বতঃস্ফূর্ত জনসমর্থন না-ও পেতে পারেন। বিশেষত যেখানে জ্ঞানেন্দ্র-র শাসনকালে তাঁর কর্তৃত্ববাদ এবং অবিচারের ঘটনাগুলি এখনও পুরোপুরি মুছে যায়নি মানুষের মন থেকে। অন্য দিকে, রাজতন্ত্রকামীদের দমনে যদি বর্তমান সরকার অত্যধিক বলপ্রয়োগ করে, তবে তাঁদেরও যে একই পরিণতি ঘটবে, সেই আশঙ্কাও প্রবল। পরিস্থিতি যা, তাতে নেপালের অশান্তি আপাতত মেটার নয়। এ দিকে, বাংলাদেশের পরে আরও এক পড়শি রাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিঃসন্দেহে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দিল্লির অলিন্দে। নেপালের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সু-সম্পর্ক সে ভাবে বজায় না থাকলেও, কূটনৈতিক স্বার্থে সে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা ছাড়া উপায় নেই দিল্লির কাছে। বরং কোনও প্রতিক্রিয়া না দিয়ে পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণই এ ক্ষেত্রে সেরা বিকল্প।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Nepal Hindu Nationalism

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy