E-Paper

প্রাপ্তি

দুই মাননীয় বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, বিবাহই যে পরিবার গড়ার একমাত্র উপায় তা নয়, পরিবার ‘বেছে নেওয়া’ও যেতে পারে; বিশেষত ভারতে আইনশাস্ত্রের এলজিবিটিকিউআইএ-পরিসরে ‘মনোনীত পরিবার’-এর ধারণাটি স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত।

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৫ ০৭:২২
Share
Save

আবেদনকারিণী আদালতে জানিয়েছিলেন, তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী এক জন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক, তিনি আবেদনকারিণীর সঙ্গেই যেতে বা থাকতে চান। অথচ তাঁর পরিবার তাঁকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটকে রেখেছে, মারধর করেছে, এমনকি ‘স্বাভাবিকতা’য় ফেরাতে কিছু আচার-অনুষ্ঠানও আয়োজন করেছে। এই মামলার সূত্রেই মাদ্রাজ হাই কোর্টের মন্তব্যে সম্প্রতি উঠে এল ‘পরিবার’-এর সমাজ-সমর্থিত সংজ্ঞা ও ধারণার এক নতুন দিক। দুই মাননীয় বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, বিবাহই যে পরিবার গড়ার একমাত্র উপায় তা নয়, পরিবার ‘বেছে নেওয়া’ও যেতে পারে; বিশেষত ভারতে আইনশাস্ত্রের এলজিবিটিকিউআইএ-পরিসরে ‘মনোনীত পরিবার’-এর ধারণাটি স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত। তাই আবেদনকারিণী ও তাঁর বান্ধবী চাইলে একটি ‘পরিবার’ হিসাবে এক সঙ্গে থাকতেই পারেন: আইন, সংবিধান ও আদালত তাঁদের পক্ষেই।

এই সমর্থন ও আশ্বাস নিঃসন্দেহে ভারতে সমকামী মানুষদের কাছে এক বড় প্রাপ্তি। মনে রাখতে হবে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ভারতে সমলিঙ্গ বিবাহ এখনও বৈধ নয়, এবং ভারতীয় সমাজে এখনও বিবাহ ও পরিবারের মধ্যে কার্য-কারণ সম্পর্কটি দৃঢ়প্রোথিত। যুগের নিয়মে লিভ-ইন সম্পর্ক হয়তো কিছুটা প্রচার ও স্বীকৃতি পেয়েছে, তবুও তা দু’জন নারী-পুরুষের অর্থাৎ বিষমকামী সম্পর্কের ক্ষেত্রেই মূলত স্বীকৃত; দু’জন সমকামী মানুষ এক সঙ্গে থাকার ইচ্ছা মুখ ফুটে প্রকাশ করলে পরিবার-পরিজন ও সমাজের বিরোধিতা ও হিংসা তাঁদের উপরে নেমে আসে, মাদ্রাজ হাই কোর্টের মামলায় যেমনটি প্রকট। যদি দু’জন সমকামী মানুষ এক সঙ্গে থাকেনও, তাঁদের তা করতে হয় বন্ধু বা আত্মীয়ের মোড়কে, কখনও বাড়ি থেকে দূরে কাজের প্রয়োজনে বা খরচ কমাতে ভাড়াবাড়ি বা ফ্ল্যাট ‘শেয়ার’ করা সহকর্মীর মোড়কে। এইটুকু পেতেও তাঁদের লড়তে হয়েছে অনেক: সমকামিতা যে কোনও ‘অপরাধ’ নয়, ভারতে সেই আইনি স্বীকৃতিটিও এসেছে দীর্ঘ দাবিদাওয়া, আন্দোলন ও যন্ত্রণাযাত্রা পেরিয়ে। বিবাহ, দত্তক নেওয়া বা ‘সারোগেসি’ পদ্ধতিতে সন্তান ধারণ, এই সবই এখনও সুদূরপরাহত, তবে এই প্রতিটি ইচ্ছার মূলে যে পরিবারের বোধ, তার স্বীকৃতিটুকু অন্তত আদালতের সূত্রে স্পষ্ট হল। অনেক অপ্রাপ্তির মধ্যে এটুকুই আশার আলো।

আদালতের সমর্থন তো মিলল, তবে সমাজ ও তার ‘রক্ষক’দের পৃষ্ঠপোষণা অন্য কথা। একুশ শতকে অনেকটা পথ পেরিয়েও ভারতীয় সমাজের এক বৃহদংশ সমকামীদের বিষয়ে রক্ষণশীল, আইন-আদালত দেখিয়েও কোনও কাজ হয় না। আত্মীয়-পরিজনের প্রবল হিংসার মুখে সাহায্য মেলে না পুলিশেরও; সেখানেও সেই এক চিত্র: অভিযোগ না নেওয়া, কোনও পদক্ষেপ না করা, উল্টে অভিযোগকারী বা আক্রান্ত সমকামী মানুষটিকেই ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ বা হেনস্থার বহু উদাহরণ চার পাশে। মাদ্রাজ হাই কোর্টের মামলাটিতেও আদালত পুলিশকে তীব্র তিরস্কার করেছে আবেদনকারিণীর বারংবার সাহায্য প্রার্থনায় কর্ণপাত না করায়, পাশাপাশি তাঁর বান্ধবীর পরিবারকে মনে করিয়ে দিয়েছে ভারতীয় সংবিধানের ২১ নম্বর ধারার কথা: যৌন পছন্দ ও সঙ্গী নির্বাচন নাগরিকের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। ‘পরিবার’ বেছে নেওয়ার ধারণাটিও যে এই মৌল অধিকারেরই সম্প্রসারণ, সমাজ ও তার রক্ষকদের তা অবিলম্বে বোঝা দরকার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

LGBTQ+ LGBTQ Same Sex Lovers Same Sex Marriage Same Sex Relationship Madras High Court Supreme Court of India

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।