E-Paper

এক বছর পর

তিন দিন আগে, ৫ অগস্ট ঘোষিত হয়েছে, পরের বছর ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের বার্তা। জামায়াতে এবং ছাত্র-নেতৃত্বে এনসিপি (ন্যাশনাল সিটিজ়েন পার্টি) ইউনূসের সঙ্গেই এই বার্তার দায়িত্ব নিয়েছে।

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৫ ০৫:৩৫

এক বছর বেশি সময় নয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এক বছর খুব কম সময়ও নয়। গত বছরের বাংলাদেশের ‘অগস্ট বিপ্লব’-এর পর বার্ষিক সৌরপরিভ্রমণশেষে এ কথা বলতেই হবে যে, এক বছর পর যেখানে এসে সে দেশ দাঁড়িয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশা ও উদ্বেগের বিষয়। ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আর ৮ অগস্ট সে দেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। তার পর থেকে ক্রমাগতই সে দেশের রাজনীতি অর্থনীতি সমাজ নীচের দিকে দ্রুতবেগে অভিযাত্রা করেছে। আইনশৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবনতি, ভাঙচুর ও আক্রমণের প্রাত্যহিকতা, প্রশাসনিক কাজকর্মে বিঘ্ন, প্রান্তিক ও সংখ্যালঘু সমাজের উপর নির্বিচার আক্রমণ, নাগরিকের উপর নজরদারি ও নির্যাতন— সব মিলিয়ে আজ যদি বৎসরান্তের বিবেচনা করতে হয়, তবে অতি কট্টরবাদী ছাড়া কেউ আশাব্যঞ্জক কথা বলতে পারবেন না। এ-হেন নিম্নগমনরেখা আটকে পরিস্থিতির পরিবর্তন আনার সাধ্য অন্তত এই অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। প্রধান নেতা হিসাবে মুহাম্মদ ইউনূসও মোটেই দক্ষতার পরিচয় দেননি।

একটি বিষয় স্পষ্ট এক বছরে— শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভ্যন্তরে বিপুল অসন্তোষ ও বিক্ষোভ জমা হলেও গত বছরের জুলাই-অগস্ট আন্দোলন ও আওয়ামী লীগ নির্মূলের দাবিটি ছাত্রসমাজ ও নাগরিক সমাজ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আসেনি। স্বতঃস্ফূর্ততার প্রাথমিক ধারণাটি তখন দেশে-বিদেশে প্রচারিত হয়েছিল, ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমর্থন ও সহানুভব তৈরি হয়েছিল তার উপর ভিত্তি করেই। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই তরুণসমাজ আবারও একটি মুক্তিযুদ্ধে শামিল হয়েছে, এমনই ভাবা হয়েছিল। এত দিনে অনুধাবন করা যাচ্ছে সেই ধারণা ভ্রান্ত। ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর কথা প্রসঙ্গত উল্লেখ্য। এই অভিযানে প্রশাসন দেশের সেনাবাহিনীর সহায়তায় ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই মাসের মধ্যে দশ হাজারেরও বেশি মানুষকে যে ভাবে তুলে নিয়ে গিয়ে আটক করেছে, তাতে দেশময় আতঙ্কের পরিবেশ। কর্তৃত্ববাদী শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন যে কেবল ‘নাগরিক’ অর্থাৎ অরাজনৈতিক হতে পারে না, সে কথা বোঝা সহজ, তাতে রাজনীতির ভূমিকা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু রাজনীতির মধ্যে যদি স্বতঃস্ফূর্ত নাগরিক অধিকারের দাবির প্রতিফলন না ঘটে অন্যতর— সঙ্কীর্ণতর— উগ্রবাদী রাজনীতির অভিমুখ স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তা বিরাট দুর্ভাগ্য। গত অগস্টের পরই কিন্তু দ্রুত পরিস্ফুট হল, বিক্ষুব্ধ ছাত্র ও নাগরিক সমাজকে আসলে পরিবৃত করে রেখেছিল, পরিচালিত করেছিল দেশের অন্দরের— হয়তো বাইরেরও— কট্টর মৌলবাদী শক্তিসমূহ। জামায়াতে ইসলামী ওই আন্দোলনে কেবল অনুঘটক নয়, প্রধান সংঘটক ছিল। সেই কারণে যে আন্দোলনকে প্রথমে মনে হয়েছিল ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ, তার মধ্যে বিভেদ, বিসংবাদ ও বৈরিতাও এখন পরতে পরতে স্পষ্ট।

তিন দিন আগে, ৫ অগস্ট ঘোষিত হয়েছে, পরের বছর ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের বার্তা। জামায়াতে এবং ছাত্র-নেতৃত্বে এনসিপি (ন্যাশনাল সিটিজ়েন পার্টি) ইউনূসের সঙ্গেই এই বার্তার দায়িত্ব নিয়েছে। তবে কিছু সময়ে যেন ঘোষণা বা প্রতিশ্রুতিও যথেষ্ট আশ্বাসবাচক নয়। নির্বাচনের বার্তাকে ঘিরে যত রকম বাধা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে, তাতে আশঙ্কিত হওয়ার বিস্তর কারণ। অথচ আওয়ামী লীগ আমলের শেষ দিকে যেমন সে দেশে নির্বাচনের নামে প্রহসন চলেছে, এ বারে সেই বিকৃত বন্দোবস্তের পরিবর্তন ঘটবে, এটাই কিন্তু আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল। বাংলাদেশের জনসাধারণের শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনার জন্য, উন্নতির দিকে তাঁদের চালিত করার জন্য, একটি নিরপেক্ষ গণতন্ত্রসম্মত নির্বাচন এখনই জরুরি। আশা থাকল যে এই মৌলিক প্রয়োজনটি বুঝে সব পক্ষ ও সব রাজনৈতিক দলই শেষ অবধি জাতীয় স্বার্থে সহযোগিতা করবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh NCP Bangladesh Awami League bnp

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy