Advertisement
০৪ মে ২০২৪
NMCG

অস্বাস্থ্যের শিকড়

স্নাতকোত্তর ছাত্ররা হাসপাতালে চিকিৎসার অনেকখানি দায়িত্ব বহন করেন। তাঁদের অবসাদ, এবং একাধিক আত্মহত্যার ঘটনা তাই দেশের কাছেও উদ্বেগজনক।

নিজেদের বিপন্ন করে পরিষেবা দিয়েছেন এই ছাত্রছাত্রীরা।

নিজেদের বিপন্ন করে পরিষেবা দিয়েছেন এই ছাত্রছাত্রীরা।

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২২ ০৫:২০
Share: Save:

পড়ুয়া ডাক্তারদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন সব মেডিক্যাল কলেজকে চিঠি দিয়েছে। স্নাতকোত্তর ছাত্ররা হাসপাতালে চিকিৎসার অনেকখানি দায়িত্ব বহন করেন। তাঁদের অবসাদ, এবং একাধিক আত্মহত্যার ঘটনা তাই দেশের কাছেও উদ্বেগজনক। কর্তাদের বিধান, ওই ছাত্রছাত্রীদের ‘গেটকিপার ট্রেনিং’ দেওয়া হবে— অর্থাৎ অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানসিক চাপ সামলানোর প্রশিক্ষণ পাবেন তাঁরা। একই সঙ্গে যোগাভ্যাস প্রভৃতি উপায়ে মনের ভারসাম্য বজায় রাখার কৌশল শিখবেন। যার অর্থ, উদ্বেগ-অবসাদে আক্রান্ত যে-হেতু পড়ুয়ারা, তাই তাঁদেরই এর সমাধান করতে হবে। কলেজ ও হাসপাতাল তাতে সহায়তা করবে মাত্র। প্রকৃত পরিস্থিতি অন্য রকম— কাজের অতিরিক্ত চাপ, ছুটির দরখাস্ত বাতিল, রোগীদের বিপুল প্রত্যাশা, পর্যাপ্ত পরিকাঠামো এবং যথাযথ প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী না থাকায় চিকিৎসায় যথাযথ সহায়তার অভাব, এই সবই স্নাতকোত্তর ডাক্তার পড়ুয়াদের দিনের পর দিন পর্যুদস্ত করছে। ভয়াবহ অবস্থা হয়েছে কোভিডকালে, যখন এক-এক জন নবীন চিকিৎসক দিনের পর দিন টানা ‘ডিউটি’ করে গিয়েছেন ‘পিপিই’ পরে। তাঁদের স্বাচ্ছন্দ্য বা বিশ্রামের আয়োজন তো যথেষ্ট ছিলই না, তদুপরি কোভিড-সুরক্ষা বিধি অনুযায়ী কাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা বহুগুণে ছাড়িয়ে গিয়েও কাজ করতে হয়েছে তাঁদের। অর্থাৎ, নিজেদের বিপন্ন করে পরিষেবা দিয়েছেন এই ছাত্রছাত্রীরা।

তথাকথিত ‘স্বাভাবিক’ সময়ও এই তরুণ-তরুণীদের কাছে নানা অস্বাভাবিক দাবি নিয়ে আসে। হাসপাতালের যে কোনও অভাব, অদক্ষতা, বিশৃঙ্খলাকে অতিক্রম করে রোগীর কাছে চিকিৎসা পৌঁছনোর দায় তাঁদের নিতে হয়, কিন্তু তাঁদের সমস্যার প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন্ধ ও বধির। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রছাত্রীদের সংঘর্ষের মূলে দীর্ঘ দিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ কাজ করছে। প্রায়ই দেখা যায়, পড়ুয়া চিকিৎসকের দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের সুরক্ষার বিষয়টি কোনও নিয়মের উপর নির্ভর করে না, করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মর্জির উপরে। কঠোর শৃঙ্খলা রক্ষার অছিলায় অমানবিক আচরণ চলতে থাকে। এই রাজ্যেই কিছু দিন আগে বদলির প্রশ্নে এক মহিলা চিকিৎসকের আত্মহত্যার ঘটনা দেখিয়েছিল, কর্মীদের পারিবারিক ও সামাজিক দায়দায়িত্ব, তাঁদের আগ্রহ-অভিলাষের প্রতি কর্তৃপক্ষ কতখানি উদাসীন। ‘চলো নিয়ম মতে’ বলে যাঁরা অধস্তনদের পেষণ করছেন, তাঁরাই যে ছুটির অনুমোদন, বদলি বা পদোন্নতির ক্ষেত্রে নিয়মের তোয়াক্কা না করে সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজনপোষণ করছেন, তা-ও স্পষ্ট।

কর্মসংস্কৃতির সঙ্গে কর্মীর সুস্থ সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের সম্পর্ককে স্বীকার করা, ও তার সম্মান করার সময় এসেছে। বহু বৃহৎ বাণিজ্যিক সংস্থা কর্মসংস্কৃতিকে ঢেলে সাজিয়ে প্রমাণ করেছে, কর্মীদের স্বাধীনতা, স্বতন্ত্র চিন্তা ও স্বেচ্ছা উদ্যোগকে উৎসাহ দিলে তাতে কাজ আরও ভাল হয়। কর্মীর উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ কাজের মান বাড়ায় না, সময় ও মানবসম্পদ নষ্ট হয়। অতএব অধস্তন কর্মীদের শরীর-মনে ভারসাম্যের অভাব দেখা দিলে তার জন্য দায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তারা— তাঁদের ‘কাউন্সেলিং’ প্রয়োজন। শিক্ষকদেরও নিয়মিত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NMCG Medical Student Mental Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE