Advertisement
E-Paper

পুরনো রোগ

হাম নিয়ে এ-হেন সতর্কতা জরুরি। ইতিমধ্যেই মুম্বই-সহ মহারাষ্ট্রের কিছু জেলায় হামে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ্যে এসেছে।

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৩৭
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ভারতে বাড়ছে হাম রোগীর সংখ্যা। বিহার, গুজরাত, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, কেরল এবং মহারাষ্ট্রে এই ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এই অবস্থায় সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক শিশুদের হাম ও রুবেলা প্রতিষেধকের একটি বাড়তি ডোজ় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। বর্তমানে দেশে প্রতিষেধক দানের প্রক্রিয়ায় শিশুরা এই টিকার প্রথম ডোজ়টি নয় থেকে বারো মাসের মধ্যে এবং দ্বিতীয় ডোজ়টি ষোলো থেকে চব্বিশ মাসের মধ্যে পায়। এর অতিরিক্ত আরও একটি ডোজ়কে এই প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার কথা বিবেচনা করতে রাজ্যগুলিকে বলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। পশ্চিমবঙ্গের স্কুলগুলিতেও পনেরো বছর বয়স পর্যন্ত পড়ুয়াদের এই দুই রোগের প্রতিষেধক দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

হাম নিয়ে এ-হেন সতর্কতা জরুরি। ইতিমধ্যেই মুম্বই-সহ মহারাষ্ট্রের কিছু জেলায় হামে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ্যে এসেছে। আচমকা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ হিসাবে উঠে এসেছে গত দু’বছর অতিমারির জন্য নিয়মিত প্রতিষেধক প্রদান প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রকই জানিয়েছে, আক্রান্ত শিশুদের অধিকাংশই প্রতিষেধকহীন, এবং আক্রান্ত অঞ্চলে হাম ও রুবেলার প্রতিষেধক প্রদানের পরিমাণ জাতীয় গড়ের তুলনায় কম। এই ঘটনা অপ্রত্যাশিত নয়। অতিমারির শুরু থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্য বিশেষজ্ঞরাও বারংবার সতর্ক করেছিলেন, যাতে কোনও ভাবেই জাতীয় প্রতিষেধক প্রদানের কর্মসূচিটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। অন্যথায় যে রোগগুলির প্রকোপ প্রতিষেধকে নির্মূল হয়েছে, তা ফের ফিরে আসবে। ভারতের কিছু রাজ্যে পোলিয়োর পুনরাগমন এবং হামের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে। পরিসংখ্যান বলছে, অতিমারির কারণে গোটা দুিনয়ায় যত শিশুর টিকাকরণ প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছে, তার সিংহভাগই ভারতে। অতিমারির অজুহাতে জনস্বাস্থ্যের এ-হেন ক্ষতি হতে দেওয়া অক্ষমণীয়। অনুমান করা চলে, জনস্বাস্থ্য বস্তুটির গুরুত্ব, এবং তাকে অবহেলা করলে ক্ষতির প্রকৃত পরিমাপ বিষয়ে ভারতভাগ্যবিধাতাদের ধারণা এখনও অতি সীমিত। তাঁরা ধারণার গণ্ডি বাড়াতে চান, তেমনও মনে করা মুশকিল।

অপুষ্ট শিশুদের ক্ষেত্রে হামের আক্রমণ প্রাণঘাতী হতে পারে জেনেও তদনুযায়ী পরিকল্পনা না করার মধ্যে সরকারি উদাসীনতার চিহ্ন স্পষ্ট, জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে যার পরিণতি মর্মান্তিক। পরিসংখ্যানে প্রকাশ, মা ও শিশুর স্বাস্থ্যরক্ষার কাজে নিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের এক বড় অংশকে অতিমারি প্রতিরোধে নিয়োগ করায় গত দুই বছর মা ও শিশুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রটি যথেষ্ট অবহেলিত হয়েছে। সুতরাং, হামের প্রাদুর্ভাব থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, ভবিষ্যতে এই ক্ষেত্রটি যাতে কোনও ভাবেই অবহেলিত না হয়। জনস্বাস্থ্যের অন্য ক্ষেত্রগুলি, বিশেষত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি প্রতিরোধ বা অন্য সংক্রামক রোগের জন্য পৃথক প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ করতে হবে। প্রতিষেধক প্রদানের প্রক্রিয়াটি ধারাবাহিক। এই কাজে বাধাপ্রাপ্তি কোনও ভাবেই কাম্য নয়। এক বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি এর সঙ্গে জড়িত। উপরন্তু হামের মতো রোগের পুনরাবির্ভাব জনস্বাস্থ্য এবং সরকারি কোষাগার— দুইয়ের উপরেই চাপ বৃদ্ধি করতে পারে। সুতরাং, পুরনো রোগের মহামারির আশঙ্কা অঙ্কুরেই বিনাশ করা প্রয়োজন।

Measles
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy