Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Amit Shah

অতর্কিত

সন্ত্রাস বা ‘টেররিজ়ম’ পাবে সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা; গণপিটুনি, অপ্রাপ্তবয়স্কের যৌন নির্যাতন গণধর্ষণের মতো অপরাধে কড়া শাস্তি এমনকি মৃত্যুদণ্ডেরও সুপারিশ করা হয়েছে।

Amit Shah.

অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৩ ০৫:১২
Share: Save:

ইন্ডিয়ান পিনাল কোড (আইপিসি)-এর পরিবর্তে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিয়োর (সিআরপিসি)-এর পরিবর্তে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা, ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট (আইইএ)-এর বদলে ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম— স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি এই বিলগুলি পেশ করেছে সংসদে। লক্ষ্য, অচিরেই এগুলিকে আইনে বাস্তবায়িত করা। মন্ত্রী বলেছেন, উনিশ শতকের ব্রিটিশ তথা উপনিবেশ-গন্ধী আইনগুলিকে সরিয়ে বা সম্মার্জন করে এই সময়ের ভারতোপযোগী করে তোলাই উদ্দেশ্য। সন্ত্রাস বা ‘টেররিজ়ম’ পাবে সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা; গণপিটুনি, অপ্রাপ্তবয়স্কের যৌন নির্যাতন গণধর্ষণের মতো অপরাধে কড়া শাস্তি এমনকি মৃত্যুদণ্ডেরও সুপারিশ করা হয়েছে। আবার রাজদ্রোহ আইন-এর মতো শব্দবন্ধ সরকারি ভাবে প্রত্যাহৃত হলেও, আনা হয়েছে নতুন রাষ্ট্রদ্রোহ আইন, বাড়ানো হয়েছে তার পরিধি।

দেশের আইনব্যবস্থা ঢেলে সাজানো যখন উদ্দেশ্য, তখন তা হবে গণতন্ত্র মেনে— বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করে এবং সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে— সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও দেখা গেল শাসক দলের চিরাচরিত প্রবণতা: তর্ক ও আলোচনার অপেক্ষা না করেই বিল পেশ। সময়টিও দেখার মতো। সংসদের বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে, শেষ সময়ে হঠাৎ লোকসভার অতিরিক্ত কাজের তালিকায় তিন বিলের অন্তর্ভুক্তি, এবং লোকসভায় পেশ করেই অমিত শাহ তা পাঠিয়ে দিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির কাছে! কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি এর প্রতিবাদ করেছে, এবং তাদের যুক্তি অত্যন্ত সঙ্গত: এত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিল মন্ত্রকের কমিটির কাছে পাঠানোর আগে কিংবা পাশাপাশি অতি অবশ্যই দেশের আইন-বিশারদ, বিচারক, অপরাধ-তাত্ত্বিক, প্রাক্তন আমলা ও পুলিশকর্তা, এমনকি মানবাধিকার, নারী অধিকার ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কর্মীদের সঙ্গে এগুলি নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার, তাঁদের মতামত নেওয়া দরকার। ব্রিটিশ আমলের আইন স্রেফ ‘শতাব্দীপ্রাচীন’ বলেই ছুড়ে ফেলার আগে নতুন আইনগুলির প্রতিটি গলিঘুঁজি ধরে ধরে বিশ্লেষণ ও সমালোচনা প্রয়োজন, যা করতে পারবেন আইন, অপরাধ ও অধিকার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরাই। এ শুধু কোনও দল বা সরকারের ব্যাপার নয়, এই আইনগুলির সঙ্গে সরাসরি সংযোগ রয়েছে সংবিধান-স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের, নাগরিকের জীবনের। কিন্তু তা হল কোথায়!

অভিযোগ উঠেছে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ারও। প্রতিটি বিলের শিরোনাম হিন্দিতে, বহুভাষিক ভারতে সেটাও কি কাম্য? ডিএমকে-র মতো বিরোধী দলের অভিযোগ অবান্তর নয়: বিজেপি আসলে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ ছুড়ে ফেলে ভাষিক সাম্রাজ্যবাদ চাপাতে চাইছে, হিন্দি ভাষার মধ্য দিয়ে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা অহরহ যে আধিপত্যবাদের পেশি ফোলান, এ তারই আর এক রূপ— ঘুরপথে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে হিন্দিকে সিংহাসনে বসানোর মতলব। কেন্দ্রে শাসক দল ও সরকার এ ভাবেই কার্যসিদ্ধিতে অভ্যস্ত: তলায় তলায় কৌশলটি ছকে নেওয়া, এক বার এক ঝলক দেখিয়েই তড়িঘড়ি তাকে আইনি রূপ দেওয়ার পথে পদক্ষেপ, আগাগোড়াই এ এক অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক অশিষ্টাচার। তবে সংবিধান, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, সুস্থ তর্ক, আলোচনা— শাসক দল আর কবেই বা এ সবের তোয়াক্কা করেছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amit Shah Lok Sabha Bills BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE