Advertisement
১১ মে ২০২৪
Coronavirus in India

ব্যর্থ

ভাইরাসের স্ট্রেনের চরিত্র কেমন, তাহাকে ঠেকাইবার পন্থা কী, এই জাতীয় প্রশ্নের উত্তর খুঁজিবার জন্য বিজ্ঞানীদের হাতে তথ্য প্রয়োজন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২১ ০৬:২৫
Share: Save:

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখ্য বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন বলিয়াছেন, ভারতে কোভিড-১৯’এর দ্বিতীয় প্রবাহ এমন ভয়াল হইয়া উঠিয়াছে তিনটি কারণে— এক, এই দেশে ভাইরাসের একটি অতি সংক্রামক স্ট্রেন সক্রিয়; দুই, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা কম; এবং তিন, টিকাকরণের ধীর গতি। সম্ভবত সৌজন্যবশেই স্বামীনাথন সর্ববৃহৎ কারণটির কথা উল্লেখ করেন নাই। তাহা হইল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও সামগ্রিক ভাবে ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বগ্রাসী ব্যর্থতা। যে তিনটি কারণের কথা স্বামীনাথন উল্লেখ করিয়াছেন, সেগুলিও বহুলাংশে এই ব্যর্থতা হইতেই জন্মিয়াছে। ভাইরাসের স্ট্রেনের চরিত্র কেমন, তাহাকে ঠেকাইবার পন্থা কী, এই জাতীয় প্রশ্নের উত্তর খুঁজিবার জন্য বিজ্ঞানীদের হাতে তথ্য প্রয়োজন। এযাবৎ কাল ভারতে কোভিডে আক্রান্ত প্রতিটি রোগীর তথ্য কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট আছে, কিন্তু তাহাতে বিজ্ঞানীদের অধিকার নাই। জানুয়ারি নাগাদ কোভিড সংক্রমণ কমিতেই কার্যত বন্ধ হইয়া যায় ‘জিনোম সিকোয়েন্সিং’-এর কাজ। অন্য দিকে, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা প্রসার দূরে থাকুক, শাসক দল সমানেই নিয়মভঙ্গকে প্রশ্রয় দিয়াছে। সম্প্রতি সংবাদে প্রকাশ পাইল, কুম্ভমেলার উপর রাশ টানিবার অভিপ্রায় প্রকাশের ন্যায় ‘দুঃসাহস’ পোষণের জন্য রাতারাতি কুর্সি খোয়াইয়াছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিংহ রাওয়ত। অন্য দিকে, যে নেতা ঘোষণা করিয়া দিয়াছিলেন যে আর মাস্ক পরিবার প্রয়োজন নাই, সেই হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে অসমের মুখ্যমন্ত্রী করিল বিজেপি। বাংলায় ভোটে জিতিতে অতিমারির তোয়াক্কা না করিয়া রাজ্য তোলপাড় করিলেন মোদী-শাহ। সাধারণ মানুষ যে অসচেতন, তাহা অকারণে নহে।

টিকাকরণের ধীর গতিও সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় সরকারের অপদার্থতার ফল। ‘বিশ্বগুরু’ হইয়া উঠিবার খোয়াবনামা ফেরি করিতে ব্যস্ত সরকার হিসাবই কষে নাই যে, দেশের মানুষের জন্য মোট কত টিকা প্রয়োজন। তাহার ব্যবস্থা যে ভারতে হইবে না, তাহা টের পাইতে পাইতে সঙ্কট চরমে উঠিল। তাহার পর টিকা জোগাড়ের দায় রাজ্য সরকারগুলির উপর ফেলিয়া হাত ঝাড়িয়া ফেলিল কেন্দ্রীয় সরকার। এমনকি এখনও স্থির করা সম্ভব হয় নাই যে, কোন সূত্র মানিয়া রাজ্যগুলির মধ্যে টিকা বণ্টন হইবে। যেখানে সম্পদের পরিমাণ (বর্তমান ক্ষেত্রে টিকা) সীমিত, এবং চাহিদা বিপুল— বাজারের নিয়মে সেখানে মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়। কিন্তু, টিকার ক্ষেত্রে তাহা সম্ভবও নহে, কাম্যও নহে। সে ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির মধ্যে টানাপড়েন যাহাতে আন্তঃরাজ্য বিবাদের সূত্রপাত না ঘটায়, তাহার জন্য টিকা বণ্টন নীতির প্রয়োজন ছিল। কেন্দ্রীয় সরকার ভাবিয়া উঠিতে পারে নাই।

সরকার নিজের ভাবমূর্তি লইয়াই ব্যাকুল। কোভিড-এর বিপদ সংক্রান্ত কোনও কথাই কর্তারা উচ্চারণ করিতেছেন না, পাছে সরকারের দোষগুলি প্রকাশ্যে আসিয়া পড়ে। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন করিলে তাঁহাদের মুখ বন্ধ করিবার হরেক ব্যবস্থা হইয়াছে: যোগী আদিত্যনাথের ন্যায় উদ্যোগী পুরুষরা অভিযোগকারী নাগরিকের ভিটামাটি চাটি করিবার হুমকিও দিয়া রাখিয়াছেন। সংবাদমাধ্যমের উপর হরেক লিখিত-অলিখিত নিষেধাজ্ঞা চাপিতেছে। প্রয়োজনে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন প্রয়োগ করিয়া সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হইবে, তাহাও শুনাইয়া রাখা হইয়াছে। অর্থাৎ, নরেন্দ্র মোদী প্রশাসনের চরিত্রলক্ষণগুলি— অস্বচ্ছতা, অব্যবস্থা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, অগণতান্ত্রিকতা, নীতিপঙ্গুত্ব, বিশেষজ্ঞদের সাহায্য লইতে অনীহা— কোভিড-১৯’এর মোকাবিলাতেও অতি স্পষ্ট, অতি প্রকট। অন্যান্য ক্ষেত্রে তাঁহারা যে ভাবে ভারতকে ডুবাইয়াছেন— তাহা অর্থব্যবস্থার স্বাস্থ্যই হউক বা নাগরিক স্বাধীনতা— কোভিড-১৯’এর ক্ষেত্রেও তাহার ব্যতিক্রম হইল না। নরেন্দ্র মোদীরা ব্যর্থতায় সমদর্শী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in India COVID19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE