E-Paper

উত্তরের জানলা

কংগ্রেসের অভিযোগ, ভারতের ‘দুর্বল’ প্রতিক্রিয়া চিনকে ভারতীয় সীমান্তে প্রবেশে আরও উৎসাহী করবে। ২০২০ সালের মধ্যবর্তী সময় থেকে লাদাখে ভারত ও চিনের সামরিক বাহিনী বেশ কয়েক বার মুখোমুখি অবস্থানে থেকেছে।

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:১৬
PM Narendra Modi.

—ফাইল চিত্র।

সম্প্রতি এক বিদেশি পত্রিকার সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চিন সংক্রান্ত মন্তব্যের জেরে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাত বাড়ল কংগ্রেসের। বিরোধী দলের অভিযোগ, নিজের ভাবমূর্তি তৈরি করতে এবং ভোটের রাজনীতিতে স্বার্থপূরণের লক্ষ্যে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করেছেন নরেন্দ্র মোদী। প্রসঙ্গত, সাক্ষাৎকারে মোদী বলেন চিনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভারতের কাছে। তাঁর বিশ্বাস যে, দু’দেশের সীমান্তের সুদীর্ঘ পরিস্থিতির দ্রুত মীমাংসা হওয়া উচিত, যাতে দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে যে ‘অস্বাভাবিকতা’ রয়েছে, তা সরিয়ে ফেলা যায়। এই সূত্রে বিরোধী দলের অভিমত, প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিনকে কড়া বার্তা দেওয়ার সুযোগ থাকলেও, সে সুযোগ হারিয়েছেন তিনি।

কংগ্রেসের অভিযোগ, ভারতের ‘দুর্বল’ প্রতিক্রিয়া চিনকে ভারতীয় সীমান্তে প্রবেশে আরও উৎসাহী করবে। ২০২০ সালের মধ্যবর্তী সময় থেকে লাদাখে ভারত ও চিনের সামরিক বাহিনী বেশ কয়েক বার মুখোমুখি অবস্থানে থেকেছে। শুরুটা হয়েছিল গলওয়ান উপত্যকা দিয়ে, যেখানে দুই বাহিনীর সংঘর্ষের জেরে উভয় পক্ষেই বেশ কিছু জন হতাহত হন। এর পরেও অরুণাচল প্রদেশে অনুপ্রবেশ করেছে চিন সেনা। শুধু তা-ই নয়, ভারতের দাবি সত্ত্বেও লাদাখের বেশ কিছু স্থানে ভারতীয় সেনার টহলদারি রদ করে চিনের পরিকাঠামো গড়ে তোলার খবর জনসমক্ষে এসেছে। তথাপি, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রীর মতো সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এ-যাবৎ দাবি করে এসেছেন যে, দেশের ‘সূচ্যগ্র মেদিনী’ও দখল হয়নি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হাতে। সাক্ষাৎকারে আঞ্চলিক ক্ষতির বিষয়টি মোদী ঊহ্য রাখলেও সীমান্ত অঞ্চলে দু’তরফেই উত্তেজনা হ্রাসে উদ্যোগী হওয়ার উপরে জোর দেন। লক্ষণীয়, প্রধানমন্ত্রী না বললেও ভারত যে সীমান্ত বিবাদের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী রাষ্টের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে পারেনি, তা স্পষ্ট উনিশটিরও বেশি সামরিক স্তরের বৈঠক অমীমাংসিত থাকার ঘটনায়। তবে, তাঁর ভারত-চিন সম্পর্ককে গোটা বিশ্বের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করা এটাই ইঙ্গিত করে, নির্বাচনের পরে সম্ভবত এই বিষয়ে বেজিং-এর সঙ্গে উচ্চস্তরের কূটনৈতিক বৈঠকে বসতে আগ্রহী হবে দিল্লি।

অন্য দিকে, চিনের বিদেশ মন্ত্রক ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে। যার অর্থ, দিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী বেজিং-ও, যদিও তা মূলত বাণিজ্যিক কারণে। এমনিতেই বিবিধ কারণে সঙ্কটের মুখে তাদের অর্থনীতি। তা ছাড়া, ২০২০-র সংঘর্ষের পরে তাদের বিভিন্ন সংস্থার উপরে ভারতীয় নিষেধাজ্ঞার জেরে এ-যাবৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক সময়ের লাভজনক বাণিজ্যিক সম্পর্ক। অন্য দিকে, পরিবেশ পরিবর্তন থেকে বাণিজ্যিক নীতি— বিবিধ ক্ষেত্রে ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর উপরে আসা পশ্চিমি চাপ প্রতিহত করতেও কৌশলগত ভাবে জোটবদ্ধ হতে দেখা যায় তাদের। তবে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হলে সীমান্ত বিবাদকে যে আলাদা রাখতে চায় তারা, সে ইঙ্গিত কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই দিয়ে রেখেছে বেজিং। পরিস্থিতি নিজেদের পক্ষে আনতে হলে চিন-নীতিকে হয়তো অনেকটাই পরিবর্তন করতে হবে দিল্লিকে। তৃতীয় বারের জন্য দেশের তখ্‌তে বসলে মোদী সেই পরিবর্তন আনতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

PM Narendra Modi Congress China

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy