বিপদঘণ্টি বেজেছে বহু পূর্বেই। এই বার দ্রুত কাজের পালা। এই তাড়নাই লক্ষ করা গেল সদ্যসমাপ্ত দিল্লির জি২০ বৈঠকে উপস্থিত রাষ্ট্রনেতাদের কথায়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, জলবায়ু সঙ্কটের মোকাবিলা করতে যে পদক্ষেপের কথা তাঁরা এত দিন বলে এসেছেন, অবিলম্বে সেগুলির গতি বৃদ্ধি করা হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সদস্য দেশগুলির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে নিউ দিল্লি লিডারস’ ডিক্লারেশন। ঘোষণাপত্রে জানানো হয়েছে, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রাগুলিই সর্বাগ্রগণ্য বলে বিবেচিত হবে। বিশ্বনেতারা জোর দিয়েছেন, প্যারিস চুক্তিতে জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশ কিছুটা নীচে বেঁধে রাখার ক্ষেত্রে যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল, তাকে পূর্ণ এবং কার্যকর ভাবে প্রয়োগ করার উপরে।
তবে, সদস্য দেশগুলি এই কথাও স্বীকার করে নিয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে এ-যাবৎ কাল যে বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে এবং যে পদক্ষেপগুলি করা হয়েছে, তা প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ধার্য তাপমাত্রা বৃদ্ধির সীমারেখাকে বজায় রাখার পক্ষে যথেষ্ট নয়। তাৎপর্যপূর্ণ স্বীকারোক্তি। জি২০’র সদস্য দেশগুলি একযোগে বিশ্বে আশি শতাংশেরও বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী। অথচ, উষ্ণায়নের সেই ‘ঐতিহাসিক’ দায় স্বীকার এবং তদনুযায়ী ‘দক্ষিণ বিশ্ব’-এর দেশগুলির ক্ষতি পূরণে এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে সদস্য দেশগুলির মধ্যে দীর্ঘ মতপার্থক্য অব্যাহত আছে। শুধুমাত্র তা-ই নয়, প্যারিস চুক্তিতে ধনী দেশগুলিকে বলা হয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের সঙ্গে যুঝতে গ্লোবাল সাউথ-এর দেশগুলিকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দানের তহবিল গড়ার কথা। সেই বরাদ্দ এখনও সুদূরপরাহত। আশার কথা, সাম্প্রতিক জি২০ বৈঠকে পরিবেশবান্ধব শক্তিতে পর্বান্তরের জন্য অত্যাবশ্যক তহবিল গড়ার ক্ষেত্রে সদস্য দেশগুলি একমত হয়েছে, সম্ভবত এই প্রথম। তারা একমত যে, জলবায়ু সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রয়োজন পড়বে ৫.৯ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার সাহায্যের। সুতরাং, অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে এত দিন ধরে যে অচলাবস্থা চলছিল, তার কিছু সুরাহার আভাস মিলেছে। এইখানেই গত দুই বছরে রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু সংক্রান্ত বৈঠকগুলি (সিওপি)-র তুলনায় জি২০ খানিক ব্যতিক্রমী।
জি২০ সদস্য দেশগুলি সমগ্র বিশ্বে ২০৩০-এর মধ্যে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি উৎপাদনকে তিন গুণ বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় সম্মতি প্রদান করেছে। যদিও ‘ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি এজেন্সি’ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সমগ্র শক্তি উৎপাদনের ৮৩ শতাংশই এসেছে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি থেকে— সাত বছরে সেই শক্তি উৎপাদন তিন গুণ বৃদ্ধি যথেষ্ট উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা। জি২০’র পরিবেশবান্ধব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতে যে পরিকাঠামো এবং আর্থিক পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন, তার জন্য যথেষ্ট বিনিয়োগ আবশ্যক। প্যারিস চুক্তি-পরবর্তী আট বছরেও উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রয়োজনে তহবিল গঠনের কাজে কাঙ্ক্ষিত গতি আসেনি। তাই এই বিনিয়োগ কোন পথে সম্ভব, প্রশ্ন থেকেই যায়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)