Advertisement
২৭ জুলাই ২০২৪
PM Narendra Modi

সাফল্য-সন্তোষ

সন্দেহ না থাকলেও অবশ্য জি২০ বিষয়ে কিছু আপত্তি রয়েই যায়। যে ভাবে ঘরোয়া রাজনীতির দিকে তাকিয়ে জি২০ বৈঠকের ব্যাপক প্রচারে বিজেপি দুর্বার হয়ে উঠল— সেটিও কিন্তু স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে অভূতপূর্ব।

PM Narendra Modi.

— ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৪৪
Share: Save:

দশ বছরে কোথায় কত দূর আসা গেল, নানা দিক থেকে সেই প্রশ্ন উঠছে, অন্তত ওঠানোর চেষ্টা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীয় দফার প্রধানমন্ত্রিত্ব শেষে আসন্ন নির্বাচনের আগে হিসাবের খাতা বলছে, একটি বিষয় উজ্জ্বল— বিদেশনীতি বিষয়টি যে ভাবে ভারতীয় রাজনীতিতে গুরুতর হয়ে উঠেছে, এর আগে তা কখনও হয়নি। দশ বছরে ভূরাজনীতির ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা পাল্টেছেও বটে, এবং সেই পরিবর্তন ভালর দিকে, শক্তির দিকে। এই পরিবর্তনের গোড়ার কথাটিই হল, দুই বিশ্বশক্তি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের সঙ্গে পাশাপাশি সম্পর্ক বজায় রাখার কৃৎকৌশল— যাতে ভারতের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। আমেরিকার মহা-প্রতিপক্ষ চিনের মৈত্রী যাচ্ঞার— এবং আমেরিকা-শত্রু রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা চালিয়ে যাওয়ার— সঙ্গে সঙ্গেই আমেরিকার সঙ্গে মিত্রতার কোলাকুলি, এ কেবল ফোটো-অপ হিসাবেই আকর্ষণীয় থাকেনি, তার মধ্যে অনেকখানি বাস্তবও ছিল। এক কালে যখন ঠান্ডা যুদ্ধের সময় আমেরিকা-রাশিয়া দ্বৈরথে ভারত একটি মধ্যবর্তী অবস্থান তৈরির চেষ্টা করেছিল, সেই নির্জোট আন্দোলনের সময়কালকে মনে করিয়ে দিতে পারে গত দশ বছরের এই কূটনৈতিক মধ্যগামিতা। ইতিহাসের পরিহাস যে, প্রধানমন্ত্রী মোদী এ দিক থেকে যাঁর উত্তরসূরি বলে ভবিষ্যৎ ইতিহাসে গণ্য হবেন, তিনি মোদীজির পরম শত্রু, প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু।

তবে সাম্প্রতিক সাফল্যের সমগ্র কৃতিত্বই যে প্রধানমন্ত্রীর, কিংবা কোনও বিশেষ ব্যক্তির, তা ভাবলে অবশ্য ভুল হবে। ভূরাজনীতির গতিপ্রকৃতি সব সময়েই ব্যক্তি অপেক্ষা বৃহৎ, বিশেষত এখনকার বিশ্বায়িত দুনিয়ায়। বিশ্বায়িত অর্থব্যবস্থা, বাণিজ্য-সমীকরণ, সমরাস্ত্র-সমর্থন ইত্যাদি মিলিয়ে যে একটি বড় ব্যবস্থাবিধি সতত চলমান, তার নিজস্ব একটি গতিরেখা আছে। ভারতীয় বিদেশনীতি সেই গতিরেখাটি ধরে সফল ভাবে চলতে পেরেছে, এবং তার সুযোগসুবিধা নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে পেরেছে, এটাই আসল কথা। উদাহরণ হিসাবে ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলা যেতে পারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিম বলয়ের শত চাপ সত্ত্বেও নেটোর মতে ভারত সর্বদা নিজমত মেলাতে রাজি হয়নি, যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জের সভায় আনীত প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেনি, কেননা ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষুণ্ণ হওয়ার ভয় ছিল তাতে। আমেরিকা যৎপরোনাস্তি ক্ষুব্ধ হলেও ভারতীয় অবস্থান কেবল তাকে মানতেই হয়নি, তার সঙ্গে রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টির কাজে ভারতের ভূমিকাটিকে কাজেও লাগাতে হয়েছে। কূটনীতির এটিই দস্তুর, নিজের স্বার্থ দৃঢ় ভাবে মেনে নিজেকে অন্যের চোখে সম্মানস্থানে উন্নীত করা। সে কাজে ভারত বিশেষ সফল। জি২০-র মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের সাফল্যও নজর-কাড়া, সন্দেহ নেই।

সন্দেহ না থাকলেও অবশ্য জি২০ বিষয়ে কিছু আপত্তি রয়েই যায়। যে ভাবে ঘরোয়া রাজনীতির দিকে তাকিয়ে জি২০ বৈঠকের ব্যাপক প্রচারে বিজেপি দুর্বার হয়ে উঠল— সেটিও কিন্তু স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে অভূতপূর্ব। কূটনীতিকে যে এই ভাবে পদে পদে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়, সেই দৃষ্টান্ত নরেন্দ্র মোদীর দশ বছরের শাসনকালে অনেক বার দেখা গিয়েছে। তাতে রাজনীতিতে নিশ্চয়ই তাঁর নম্বর বেড়েছে, তবে কূটনীতির দিক দিয়ে সম্মান খানিক কমেছেই। ‘বিশ্বগুরু’ ভূমিকার কথাও এই প্রসঙ্গে আনতে হয়। একবিংশ শতকের পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে মোদী তাঁর ব্যক্তিগত ক্যারিসমা ও জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ভারতকে বিশ্বগুরু-ত্বে অভিষিক্ত করার চেষ্টা করতেই পারেন, কিন্তু সে চেষ্টা স্বল্পস্থায়ী না হয়ে গতি নেই। কূটনীতি চলে অনেক শক্ত মাটির উপর, ফাঁপা প্রচারের নরম মাটিতে তার রথ বসে গেঁথে অচল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। আরও পাঁচ বছর যদি দেশের শিরোভাগে নরেন্দ্র মোদী আসীন হন, তা হলে তাঁকে এই শিক্ষাটি খেয়ালে রাখতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

PM Narendra Modi Lok Sabha Election 2024 BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE