Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Indian Population

জন-সম্পদ

রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতি বা সমাজনীতিতে কোনও অর্থনৈতিক চিন্তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব যদি বিবেচ্য হয়, ম্যালথাসের তত্ত্বের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী মেলা ভার।

population.

চিনকে টপকে ভারত হয়ে উঠল বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দেশ। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:০৫
Share: Save:

চিনকে টপকে ভারত হয়ে উঠল বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দেশ। সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের এক সমীক্ষায় এমনটাই জানা গিয়েছে। সমীক্ষা অনুসারে, জনসংখ্যায় চলতি বছরেই পড়শি রাষ্ট্রকে ছাপিয়েছে ভারত। এই সংবাদটি অনেককে উদ্বিগ্ন করবে— টমাস রবার্ট ম্যালথাস যেমন বিচলিত হয়েছিলেন প্রায় আড়াইশো বছর আগে। অষ্টাদশ শতকের এই ব্রিটিশ অর্থশাস্ত্রী ১৭৯৮ সালে তাঁর ‘অ্যান এসে অন দ্য প্রিন্সিপল অব পপুলেশন’-এ প্রকাশ করেছিলেন একটি মারাত্মক আশঙ্কা— কৃষি উৎপাদনের হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের সঙ্গে তাল মেলাতে পারবে না, ফলে মানবসভ্যতা বারে বারেই সম্মুখীন হবে তীব্র অনটন, দুর্ভিক্ষের। সেই ধাক্কায় জনসংখ্যা নাটকীয় ভাবে হ্রাস পাবে, এবং ফিরে আসবে ‘স্বাভাবিক’ স্তরে। রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতি বা সমাজনীতিতে কোনও অর্থনৈতিক চিন্তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব যদি বিবেচ্য হয়, ম্যালথাসের তত্ত্বের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী মেলা ভার। কিন্তু ইতিহাস দেখিয়েছে যে, ভুল ছিলেন ম্যালথাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বৈশ্বিক জনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে এবং মাথাপিছু জিডিপি-ও বেড়েছে পাঁচ গুণ। প্রযুক্তির প্রভূত উন্নতি বরং জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করেছে। অতএব, ভারত বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দেশ হয়ে ওঠায় উদ্বেগের কারণ নেই।

বরং তা ভারতকে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ বা জনসংখ্যায় তরুণ প্রজন্মের সংখ্যাধিক্যজনিত সুবিধা অর্জন করার সুযোগ এনে দিয়েছে। মূলত চারটি বিষয়ের উপরে নির্ভর করে এই ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’— কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও কর্মদক্ষতা, স্বাস্থ্য এবং সুশাসন। ভারত যদি তার কর্মক্ষম জনসংখ্যার জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারে, তা হলে তার ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড-এর সুফল অর্জনের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হবে। পাশাপাশি, উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা, কর্মদক্ষতা সৃষ্টি এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ ও প্রতিবন্ধকতাকে প্রতিরোধ করে মানুষের জীবনসীমার বৃদ্ধির মাধ্যমেও দেশের আর্থিক সমৃদ্ধির পথ সুগম করা সম্ভব। একটি সুস্থ এবং দক্ষ কর্মীর দল শুধু উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে তা সরকারের আর্থিক চাপ কমায় এবং দেশের মূলধন সৃষ্টিতে সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, ভারতের জনসংখ্যাই এ দেশকে বিশ্বে অন্যতম শক্তি করে তুলতে পারে। শুধু ক্রেতা হিসাবে নয়, শ্রমশক্তি হিসাবেও। দুনিয়ার তরুণতম দেশগুলির অন্যতম এখন ভারত। বিশ্বের কুড়ি শতাংশ কর্মক্ষম মানুষ আগামী পঁচিশ বছরে থাকবেন ভারতে। আর দেশের বাষট্টি শতাংশ মানুষ থাকবেন কর্মক্ষম বয়স-বন্ধনীতে। ফলে, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পাওয়া যাবে আগামী কয়েক দশকমাত্র।

সমস্যা হল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রচুর প্রতিশ্রুতি মিললেও বাস্তবে রূপায়িত হয় নামমাত্র। দেশে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান বা স্বাস্থ্য পরিষেবার চিত্র আদৌ আশাব্যঞ্জক নয়। ফলে, গন্তব্য এবং পথ জানা থাকলেও সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে ভারত ‘কেপেবিলিটি ট্র্যাপ’-এ আটকে থাকে। এই বাধা থেকে বেরোতে হলে তাকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং উপযুক্ত নীতি-নির্ধারণের উপরে জোর দিতে হবে। সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়া ইতিমধ্যেই দেখিয়ে দিয়েছে কী ভাবে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড-এর সুফল অর্জন করা যায়। নিজেদের উন্নতির স্বার্থে ভারতেরও সেই পথে হাঁটা উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India China Population
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE