Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
drainage system

পরিবেশ রাজনীতি

সমস্যা হইল, পরিবেশও যে নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি নির্ধারক হইয়া উঠিতে পারে, সেই বোধটি এখনও ভারতীয় গণতন্ত্রে জাগ্রত হয় নাই।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৫৫
Share: Save:

কলিকাতার জলযন্ত্রণা নূতন নহে। প্রতি বৎসর ভারী বৃষ্টিতে কলিকাতা ভাসিবে, জমা জল মশার আঁতুড়ঘর হইবে, ডায়রিয়ার প্রকোপ ছড়াইবে— ইহা যেন মহানগরের অনন্য চরিত্র হইয়া দাঁড়াইয়াছে। এই বর্ষাতেও সেই চিত্রে এতটুকু পরিবর্তন আসিল না। সমস্যার কারণগুলি অজানা নহে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময় নিকাশি খালগুলির সংস্কার না হইবার প্রসঙ্গটি উঠিয়া আসিয়াছে। অথচ, আরও একটি পুরভোটের সম্মুখে দাঁড়াইয়া শহর দেখিল, সেই কার্যে আজও কাঙ্ক্ষিত গতি আসে নাই। ১২ নম্বর বরোর নোনাডাঙা খালের কথাই ধরা যাউক। সংস্কার দূর অস্ত্, খালপাড় জবরদখলের কারণে ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হইতেছে খালটি। সামান্য বেশি বৃষ্টি হইলেই নোংরা জলে ভাসিয়া যাইতেছে বিস্তীর্ণ এলাকা।

অথচ, এই নোনাডাঙা খাল শহরের যে অংশে অবস্থিত, তাহা পূর্ব কলিকাতার জলাভূমি, আন্তর্জাতিক মর্যাদাসম্পন্ন রামসার সাইট। কলিকাতার ‘ভৌগোলিক কিডনি’ নামে পরিচিত এই সুবিশাল জলাভূমি অঞ্চলের বর্তমান শোচনীয় অবস্থার একটি ছোট প্রতিচ্ছবি তুলিয়া ধরে এই খাল। প্রতি দিন কলিকাতার প্রায় সাতশো মিলিয়ন লিটার বর্জ্য জল প্রাকৃতিক উপায়ে পরিশোধিত হয় এই জলাভূমি অঞ্চলে। কলিকাতাকে রক্ষা করে তীব্র জলদূষণের হাত হইতে। কিন্তু বামফ্রন্ট আমল হইতে যে ‘প্রোমোটার বিপ্লব’-এর সূত্রপাত হয়, তাহার ফলে অবৈধ ভাবে জলাভূমি দখল করিয়া নগরায়ণের সাক্ষী হইল এই শহর। বর্তমান শাসনে সেই প্রবণতা আরও শতগুণে বৃদ্ধি পাইয়াছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতি, হাই কোর্টের রায় সত্ত্বেও রাতারাতি চুরি হইতেছে পুকুর, বিল। যেগুলি পড়িয়া আছে, তাহাদের অবস্থাও নোনাডাঙা খালের ন্যায় জবরদখল, খালপাড়ে অপরিকল্পিত ভাবে বহুতল নির্মাণ এবং বর্জ্য জমিবার কারণে শোচনীয়। নিকাশি খালের জল জমা হইত যে নদীতে, সংস্কারের অভাবে ধুঁকিতেছে তাহাও। জমা জল নামিবে কোন পথে? জমা জলের সমাধান হিসাবে বারংবারই পাম্প চলানো, লকগেট খুলিবার ন্যায় সমাধানগুলির কথা উঠিয়া আসে। কিন্তু জলাভূমি রক্ষা না করিয়া, নিকাশি খাল সংস্কার না করিয়া শুধুমাত্র এই কৃত্রিম ব্যবস্থার উপর নির্ভর করিলে যে প্রকৃত সমাধান সম্ভব নহে, তাহা কি শাসকবৃত্ত বুঝিতেছে না?

সমস্যা হইল, পরিবেশও যে নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি নির্ধারক হইয়া উঠিতে পারে, সেই বোধটি এখনও ভারতীয় গণতন্ত্রে জাগ্রত হয় নাই। ইতিপূর্বে স্বাস্থ্য, শিক্ষার পাশাপাশি নারীর অধিকার এবং সক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়গুলি রাজনীতির পরিসরে জায়গা করিয়া লইয়াছিল। ফলে, মেয়েদের উন্নয়নকল্পে পৃথক ভাবে অর্থবরাদ্দের বিষয়টি প্রশাসনিক নীতির অন্তর্ভুক্ত হইয়াছে। পরিবেশ বাঁচাইতে হইলে তাহাকেও একই ভাবে রাজনৈতিক বিষয় করিয়া তুলিতে হইবে। অবাধে পরিবেশ ধ্বংস করিয়া বা পরিবেশকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করিয়া যে ক্ষমতায় থাকা চলিবে না, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে। এবং এই দায়িত্বটি মুষ্টিমেয় পরিবেশকর্মী বা আদালতের নহে, গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিকের। পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে কোন দল, কোথায়, কী ভাবে কাজ করিতেছে, সেই বিষয়ে সচেতন হইতে হইবে। রাজনীতি পথভ্রষ্ট হইলে তাহাকে ঠিক পথে ফিরাইবার চাপ সৃষ্টি করিতে হইবে। পুরভোট আসন্ন। পরিবেশ-সচেতন নাগরিক হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করিবার ইহাই তো শ্রেষ্ঠ সময়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

drainage system KMC Polls 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE