Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Nirbhaya

ব্যর্থ

নির্ভয়া কাণ্ডে অপরাধীদের গত বৎসর শাস্তি হইয়াছে, কিন্তু দেশে নারীহিংসার চিত্রটি আজও ভয়ঙ্কর, বিশেষত অতিমারি-আবহে।

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২১ ০৬:২৯
Share: Save:

আট বৎসর আগে কেন্দ্রীয় সরকার ‘নির্ভয়া তহবিল’ গড়িয়াছিল, নারীর সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নকে মাথায় রাখিয়া। নির্ভয়া-কাণ্ড ঘটিবার পরে গঠিত কমিশন তাহার রিপোর্টে বলিয়াছিল, দেশে নারী সুরক্ষায় উপযুক্ত আইনের ঘাটতি নাই, বরং আইনের শাসনকে লঘু করিয়া, নারীর বিপদ ডাকিয়া আনিতেছে সুপ্রশাসনের ব্যর্থতাই। সেই ব্যর্থতা রুখিয়া, নারীদের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করিতেই ২০১৩-র কেন্দ্রীয় বাজেটে এক হাজার কোটি টাকার নির্ভয়া তহবিলের সূচনা, ২০১৫ সালে নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রককে নোডাল এজেন্সি করিয়া দেখাশোনার ভার দেওয়া হইয়াছিল তহবিলের অধীন বিবিধ প্রকল্পের, যেমন মহিলাদের অভিযোগ বা দুর্দশার কথা শুনিতে ‘ওয়ান স্টপ সেন্টার’ (ওএসসি) গঠন, মেয়েদের জন্য তৈরি হেল্পলাইন নম্বরের সার্বিক উন্নয়ন, ‘মহিলা পুলিশ ভলান্টিয়ার স্কিম’ (এমপিভিএস) ইত্যাদি। এই কাজ হইবার কথা ছিল দেশ জুড়িয়া, সমস্ত রাজ্যেই।

কিন্তু এই বৎসরের গোড়ায় নির্ভয়া তহবিলের রিপোর্ট দেখিয়া স্তম্ভিত হইতে হইতেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্যেই পরিষ্কার যে, রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির জন্য বরাদ্দ অর্থের প্রায় ৯০ শতাংশই খরচ হয় নাই। কোনও রাজ্যই বরাদ্দ অর্থের ৫০ শতাংশের বেশি খরচ করে নাই, ১৮টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল কাজে লাগাইয়াছে বরাদ্দের ১৫ শতাংশেরও কম অর্থ, এবং যেখানে ঘটা ঘটনার জেরে এত কিছু, সেই দিল্লি ব্যয় করিয়াছে বরাদ্দের ৫ শতাংশ মাত্র! বুঝিতে অসুবিধা হয় না, তহবিলের অধীন প্রকল্পগুলিতেও অগ্রগতি হইয়াছে নামমাত্র বা সামান্য। দশটি রাজ্য মেয়েদের হেল্পলাইন নম্বর তৈরির কাজে অর্থ খরচই করে নাই। অন্য এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার রিপোর্টে জানা গিয়াছে আরও গুরুতর তথ্য, গত তিন বৎসরে নির্ভয়া তহবিলের টাকা পড়িয়া থাকিয়াছে তো বটেই, যতটুকু ব্যয়িত হইয়াছে তাহাও নারীর সুরক্ষা বা কল্যাণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্করহিত নানা ক্ষেত্রে। পুলিশের ফরেন্সিক ল্যাব, সাইবার-অপরাধ বা অন্য বিপর্যয় মোকাবিলার পরিকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চয়ই করা দরকার, কিন্তু নির্ভয়া তহবিলের অর্থ দিয়া কেন? ২০১৯-২০’র বাজেটে বরাদ্দ ৪৩৫৭.৬২ কোটি টাকার সিংহভাগ পাইয়া কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ওই পরিসরগুলিরই উন্নয়ন ঘটাইয়াছে।

নির্ভয়া কাণ্ডে অপরাধীদের গত বৎসর শাস্তি হইয়াছে, কিন্তু দেশে নারীহিংসার চিত্রটি আজও ভয়ঙ্কর, বিশেষত অতিমারি-আবহে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ করিয়া প্রয়োজন ছিল মেয়েরা সরাসরি উপকৃত হইবেন এমন পদক্ষেপ করা: হেল্পলাইন ও ওয়ান স্টপ সেন্টারের পাশাপাশি আশ্রয় শিবির, ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্ট ইত্যাদির নির্মাণ ও ব্যবস্থা করা। পরিবর্তে কী হইল? একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রতিশ্রুত তহবিলের সিংহভাগই ব্যবহার হইল না, যেটুকু হইল তাহাও অন্য পরিকাঠামোয় ব্যয় করিয়া নারীর সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা হইল। দ্বিতীয় প্রবণতাটি এক ভয়ঙ্কর অশনিসঙ্কেত, যেন বলা হইতেছে— নারীসুরক্ষার ব্যাপারটিই দরকার নাই, বা উহা তত জরুরি নহে, যে কারণে তহবিলের বরাদ্দ অর্থ অন্য খাতে ব্যবহার করাই যায়। প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থতা, অন্য দিকে চরম উপেক্ষা ও ঔদাসীন্য, নারী তথা নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রীয় আচরণ তবে এমনই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nirbhaya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE